State News

প্রাণ ফিরছে কয়লার ইঞ্জিনে, আগামী সপ্তাহ থেকে প্রতি দিন শিলিগুড়ি-দার্জিলিং টয়ট্রেন

আরাধনা থেকে বরফি। রাজেশ খন্না থেকে রণবীর কপূরের যে লিগ্যাসি আর রোমান্টিসিজম কু-ঝিক ঝিক কয়লার ইঞ্জিন বয়ে নিয়ে চলেছে, ডিজেল ইঞ্জিনে সেই কৌলিন্য কোথায়? কিন্তু ইউনেসকো-র হেরিটেজ রেলের শতাব্দীপ্রাচীন ইঞ্জিনগুলি বয়সের ভারে ন্যুব্জ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৭ ১৮:৪৫
Share:

আরাধনা থেকে বরফি। রাজেশ খন্না থেকে রণবীর কপূরের যে লিগ্যাসি আর রোমান্টিসিজম কু-ঝিক ঝিক কয়লার ইঞ্জিন বয়ে নিয়ে চলেছে, ডিজেল ইঞ্জিনে সেই কৌলিন্য কোথায়? কিন্তু ইউনেসকো-র হেরিটেজ রেলের শতাব্দীপ্রাচীন ইঞ্জিনগুলি বয়সের ভারে ন্যুব্জ। অধিকাংশই দেহ রেখেছে। বাতিল ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ দিয়েই চালু ইঞ্জিনগুলিকে কোনওমতে সচল রাখা হচ্ছিল। সেই সব ইঞ্জিনে নতুন প্রাণ সঞ্চার করতে শুক্রবার রাঁচির হেভি ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন লিমিটেড বা এইচইসিএলের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করল উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল (এনএফআর)। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় রেল প্রতিমন্ত্রী রাজেন গোঁহাই। সেই সঙ্গে এনএফআরের জেনারেল ম্যানেজার ঘোষণা করলেন, আগামী সপ্তাহ থেকেই সপ্তাহে সাত দিনই শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং পর্যন্ত ন্যারো গেজের ট্রেন চালানো শুরু হবে।

Advertisement

দার্জিলিং-হিমালয়ান রেলের জন্য ৩৪টি ইঞ্জিন বিলেতে তৈরি হয়েছিল। বর্তমানে থাকা ১৩টি ইঞ্জিনের মধ্যে একটি ১৯১৯ সালে তিনধরিয়ায় তৈরি। তার নাম ‘ব্রঙ্কো’। ১৩টি ইঞ্জিনের মধ্যে ৬টি কার্যক্ষম আছে। তাদের মধ্যে রয়েছে ১৮৯৯ সালে তৈরি ‘মাউন্টেনিয়ার’ ইঞ্জিনও। কয়লার ইঞ্জিন খারাপ হতেই থাকে। যন্ত্রাংশ না মেলায় জোড়াতালি দিয়ে সেগুলি চালানো হচ্ছিল। কিন্তু আজ এইচইসিএলের সঙ্গে চুক্তি হওয়ার পরে ওই ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ সরবরাহ করবে রাঁচির ওই ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থা।

এইচইসিএলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অমিতাভ ঘোষ জানান, ২০১৬-য় তাঁরা তিনধরিয়া ওয়ার্কশপে আসেন। নিয়ে যান বাষ্পচালিত ইঞ্জিনের ৪১টি গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশের তালিকা। তার মধ্যে ১৩টির ডায়াগ্রাম ড্রয়িং পাওয়া গিয়েছে। ১৭টি যন্ত্রাংশের ডায়াগ্রাম আঁকার কাজ চলছে। আগামী ৬ মাসের মধ্যে যন্ত্রাংশ সরবরাহের কাজ শুরু করতে চায় এইচইসিএল।

Advertisement

অমিতাভবাবু আরও জানান, বাষ্পচালিত ইঞ্জিনের জন্য ৬টি বয়লারও প্রয়োজন। দুটির টেন্ডার দেওয়া হয়েছে। বাকি চারটি তৈরির জন্য চুক্তি করতে ইচ্ছুক তাঁরা। দার্জিলিং রেলের পাশাপাশি, একই রকম ইঞ্জিনে চলা কালকা-সিমলা রেল, পাঠানকোট-যোগীন্দরনগর রেল, কাল্লার-উধাগামণ্ডলম রেলের যন্ত্রাংশ তৈরির জন্য চুক্তি করতেও আগ্রহী এইচইসিএল। অমিতাভবাবু রাজেন গোঁহাইকে জানান, শুধু যন্ত্রাংশ নয়, এইচইসিএলের যা ক্ষমতা রয়েছে, তাতে ট্রেনের এলএইচবি, ইএমইউ, ডিএমইউ কোচ ও মেট্রোরেলের কোচ তৈরির জন্যও তৈরি সংস্থা।

আরও পড়ুন: জিএসটি কার্যকরী হলে দাম কমবে যে সব জিনিসের

চুক্তি সই হওয়ার পরে রাজেন গোঁহাই বলেন, ‘‘বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্র দার্জিলিংয়ের টয় ট্রেনের জন্য এ এক ঐতিহাসিক দিন। দার্জিলিং থেকে নিউ জলপাইগুড়ি আসতে সাত ঘণ্টা সময় লাগে বটে কিন্তু পাহাড়-জঙ্গল-কুয়াশার বুক চিরে যাওয়া ওই ট্রেনযাত্রা দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা। ট্রেনটি এখন অনিয়মিত চলে। কিন্তু প্রতিদিন চালানো গেলে ভাল হয়।’’ এনএফআরের জিএম চাহতে রাম জানান, প্রতিদিন ট্রেন চালানো কতটা লাভজনক-তা বিবেচনার বিষয়। তবু, মন্ত্রীর নির্দেশ মেনে আগামী সপ্তাহ থেকেই আমরা শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং পর্যন্ত ট্রেনটি চালাব।

উত্তর পূর্ব রেলের সদর দফতরে রাখা একটি বাতিল হওয়া স্টিম ইঞ্জিন।

মুখপাত্র জয়ন্ত শর্মা জানান, ইউনেসকো শুধু রেলকে বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্রের মর্য্যাদা দেয়নি। তার চারপাশের এলাকা, প্রকৃতি এবং স্থানীয় মানুষের সঙ্গে ন্যারো গেজ ট্রেনের বন্ধনকে ইউনেসকো স্বীকৃতি দিয়েছে। তাই শুধু পর্যটকদের জন্য ট্রেন চালালে চলবে না। আম জনতার জন্য পরিষেবা বজায় রাখাটাও গুরুত্বপূর্ণ। আগে এই পথে চারটি ডিজেল ইঞ্জিন ব্যবহার করা হত। এখন আরও দু'টি ইঞ্জিন সারিয়ে হাতে আসায় সাত দিন ট্রেন চালাতে সমস্যা হবে না।

অন্য দিকে, আস্থা ট্রেনে তিন তীর্থযাত্রীর মৃত্যু প্রসঙ্গে রেলমন্ত্রী বলেন, ‘‘যাত্রীদের তরফে চূড়ান্ত অব্যবস্থার কোনও অভিযোগ আসেনি। তবে ওই ট্রেনের ট্যুর ইন-চার্জের সঙ্গে যাত্রীরা যোগাযোগ করতে পারেননি বলে অভিযোগ এসেছে। আমি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। কর্তব্যে গাফিলতি হলে শাস্তি হবে। যে তিন জন মারা গিয়েছেন, তাঁরা উত্তর-ভারতে প্রবল গরমের বলি হয়েছেন। এই ধরনের মৃত্যুতে রেল ক্ষতিপূরণ দেয় না। তবে আমি বিশেষ ক্ষেত্র হিসেবে তিন পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সুপারিশ করেছি।’’ রেলমন্ত্রী আরও জানান, এ বারের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে পরের আস্থা ট্রেনগুলিতে কোন মরসুমে কোথায় যাওয়া উচিত, তা মাথায় রাখা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন