তৃণমূলের টক্করেও উঠল না বন্‌ধ

দাঁইহাট বিএলআরও এবং ব্লক অফিসের সামনে সিপিএমের বন্‌ধ সমর্থনকারীরা গাছের গুঁড়ি ফেলে পথ অবরোধ করেন। অফিসে ঢুকতে বাধা ও হুমকির অভিযোগ পেয়ে পুলিশ অবরোধ তুলতে গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছোড়া হয় বলেও অভিযোগ। দাঁইহাটের সিপিএমের যুব নেতা কিংশুক মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলের ঠ্যাঙারে বাহিনী আর পুলিশ যৌথ ভাবে আমাদের উপর লাঠিচার্জ করে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০১:৫৪
Share:

আউশগ্রামে সিপিএমের দফতরে পোড়া বাইক, সাইকেল।

অফিসে অবরোধ

Advertisement

দাঁইহাট বিএলআরও এবং ব্লক অফিসের সামনে সিপিএমের বন্‌ধ সমর্থনকারীরা গাছের গুঁড়ি ফেলে পথ অবরোধ করেন। অফিসে ঢুকতে বাধা ও হুমকির অভিযোগ পেয়ে পুলিশ অবরোধ তুলতে গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছোড়া হয় বলেও অভিযোগ। দাঁইহাটের সিপিএমের যুব নেতা কিংশুক মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলের ঠ্যাঙারে বাহিনী আর পুলিশ যৌথ ভাবে আমাদের উপর লাঠিচার্জ করে। সবার সাইকেল, দলের পতাকা পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়।’’ পুলিশের লাঠির ঘায়ে আহত হয়েছেন রমেন মণ্ডল, গৌতম মণ্ডল, স্বপন বারুই, মহম্মদ আজাদ হোসেন, দেবাশিস মোদক এবং স্বপন সরকার নামে ৬ সিপিএম কর্মী। বিএলআরও এবং ব্লক অফিসের অবশ্য দাবি, দফতর খুলতে গেলে সিপিএমের বন্‌ধ সমর্থনকারীরা বাধা দেয়, হুমকিও দিতে থাকে। গালা দিয়ে বেশ কিছু তালা সিল করে দেওয়া হয়। পরে পুলিশ এলে দফতর খোলা হয়। দাঁইহাটের পুরপ্রধান বিদ্যুত ভক্ত বলেন, ‘‘শান্তিপূর্ণ বন্‌ধকে অশান্ত করতে তৃণমূল ও পুলিশ যৌথ ভাবে আক্রমণ করেছে।’’ কাটোয়া মহকুমাশাসকের কার্যালয়ের সামনেও বন্‌ধ সমর্থনকারীরা সরকারি কর্মীদের কাজে যোগ দিতে বাধা দেন বলে অভিযোগ। পুলিশের সঙ্গে বচসা, ধাক্কাধাক্কি বাধে। দলের রাজ্য নেতা অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, সুদীপ্ত বাগচি –সহ রাস্তা জুড়ে দাঁড়িয়ে থাকা সমর্থনকারীদের গ্রেফতারও করে পুলিশ। কালনায় কর্মবিনিয়োগ কেন্দ্র এবং মহকুমা খাদ্য নিয়ামকের দফতরেও সরকারি কর্মীরা ঢুকতে গেলে বন্‌ধ সমর্থকেরা বাধা দেয় বলে অভিযোগ। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, এ দিন বিভিন্ন দফতরে ৯৮ শতাংশ কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।

Advertisement

চলল স্কুল-কলেজ

স্কুলে পড়ুয়াদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ভাতার, আউশগ্রাম, কেতুগ্রাম এমনকী বর্ধমান শহরের বেশ কয়েকটি স্কুলে অন্য দিনের মতই পড়াশুনো হয়েছে। রায়নার সাঁকহালা উচ্চবিদ্যালয়ের ১১ জন শিক্ষক মঙ্গলবার রাতে স্কুলেই থেকে গিয়েছিলেন। তবে স্কুল খোলার সময়ে সিপিএমের লোকেরা হুমকি দেয় বলে তাঁদের অভিযোগ। পড়ুয়ারা স্কুলে গেলে তাদের আটকেও দেওয়া হয়। কালনার তৃণমূল শিক্ষক সংগঠনের নেতা দেবপ্রসাদ মণ্ডলেরও অভিযোগ, ‘‘আমার স্কুল মহিষমর্দিনী ইনস্টিটিউশনে গিয়ে দেখি সামনেই সিপিএমের পতাকা ঝুলছে। দলের নেতা এবং পুলিশকে জানানো হয়। পরে পুলিশ এসে পতাকা সরিয়ে স্কুলে ঢুকতে বলে। কাটোয়া কলেজের প্রাক্তন টিচার ইন চার্জ অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায়, কলেজ শিক্ষক সৈয়দ আবুল কাদের, মিতা ব্রহ্মচারীরা গলায় প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে সকাল ১০টা থেকে ২টো পর্যন্ত বন্‌ধের সমর্থনে কলেজ গেটের সামনে অবস্থান করেন। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ ট্যুরিজম এবং এমএসসি অঙ্ক পরীক্ষা রুটিন মেনেই হয় এ দিন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসচিব দেবকুমার পাঁজার দাবি, শিক্ষক, অশিক্ষক কর্মচারি ও আধিকারিকদের নব্বই শতাংশই হাজির ছিলেন।

দোকানে বিধায়ক

কালনার সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চকবাজারের সব দোকান খোলা থাকলেও ব্যতিক্রম একটি কাপড়ের দোকান। কারণ দোকানের মালিক তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডু। খরিদ্দারের তেমন দেখা না মিললেও সারা দিনই দোকানে কাটাতে দেখা যায় বিধায়ককে। বন্‌ধ নিয়ে দলীয় নেতা কর্মীরা কিছু জিজ্ঞাসা করলে যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর সেখানে বসেই দেন তিনি। বর্ধমানের নতুনগঞ্জ বা কাটোয়ার পাইকারি বাজার বন্ধ ছিল।

মিছিল থেকে

সাত সকালেই পার্কাস রোড থেকে মিছিল শুরু করেন বাম কর্মী-সমর্থকেরা। জিটি রোড, বিসি রোড, বিবি ঘোষ রোড হয়ে মিছিল শেষ হয় মোবারক বিল্ডিংয়ের নীচে। পুলিশের সামনেই বেশ কিছু সরকারি বাস ও বেসরকারি বাস আটকে দেয় বন্‌ধ সমর্থনকারীরা। বচসা ও হাতাহাতিও হয়। পরে রাজ্য নেতা অমল হালদারের নেতৃত্বে মিছিলটি এগোয় কার্জন গেটের দিকে। তেঁতুলতলা বাজারে একটি ব্যাগের দোকান খোলা থাকলে বাম কর্মীরা সেটি বন্ধ করতে উদ্যত হয়। সিটু নেতা জনার্দন রায় ও নজরুল ইসলাম তাদের সামাল দেন। অমল হালদার বলেন, ‘‘কোনও রকম প্ররোচণায় পা দেবেন না। শুদু আপদে বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়ান। এই শহরে মানুষ এমনিতেই তৃণমূলের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।’’

নেই কর্মাধ্যক্ষেরাই

এ দিন বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি সহ পাঁচ কর্মাধ্যক্ষ দফতরে এলেও বাকি চার জন জেলা পরিষদের দিকে পা বাড়াননি। এ নিয়ে তৃণমূলের মধ্যেই ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এক কর্মাধ্যক্ষ তো বলেই ফেললেন, “সরকার ও দল যেখানে এই বন্‌ধের বিরোধীতা করছে, সেখানে জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষরা উপস্থিত না থাকা মানে তো, পরোক্ষ ভাবে বন্‌ধকেই সমর্থন করা।’’ সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, “কর্মাধ্যক্ষরা এ দিন কেন জেলা পরিষদে অনুপস্থিত ছিলেন, তা জানতে চাইব।”

ট্রেনে-বাসে

অম্বিকা কালনা স্টেশনে একের পর এক লোকাল ট্রেন আটকে রাখে বন্‌ধের সমর্থনকারীরা। সাড়ে সাতটা নাগাদ হাওড়াগামী একটি লোকাল ট্রেন আটকে লাইনের উপর বসে পড়েন তাঁরা। প্রায় ৩৫ মিনিট চলে অবরোধ। যাত্রীরা অনেকেই নেমে লাইন ধরে হাঁটা শুরু করেন। সমদ্রগড়েও সকাল ৬টা থেকে টানা চল্লিশ মিনিট একটি কাটোয়াগামী ট্রেনকে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। গুসকরার কাছে বিশ্বভারতী এক্সপ্রেসও আটকে দিয়েছিল বন্‌ধ সমর্থককারীরা। ভাতারের কালুত্তক গ্রামে বাদশাহী রোডে সিপিএমের অবরোধ চলাকালীন বর্ধামানমুখী দুটি সরকারি বাস আটকে ভাঙচুর করা হয়। তবে বেসরকারি বাস সেভাবে চলেনি। তৃণমূল প্রভাবিত বাস মালিকরাও ক্ষতি বলে বিমার টাকা না পাওয়ার আশঙ্কায় বাস নামান নি। কালনায় অবশ্য তৃণমূলের নেতাদের বাসস্ট্যান্ডে দেখা যায়। বাস দাঁড় করিয়ে রাখায় কড়া ধমকও খান এক বাসকর্মী। সকালে কালনা থেকে দূরপাল্লার কালনা-বেনাচিতি বাস ছাড়লেও বন্‌ধ সমর্থকেরা মেমারির সাতগাছিয়া এলাকায় বাসটি আটকে দেয় বলে অভিযোগ। তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের তরফে অঞ্জন মুখোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেন, বর্ধমান, নবদ্বীপ, বাঘনাপাড়া-মেমারি রোডে পর্যাপ্ত বাস চলেছে।

ফাঁকা আদালত

জেলা আদালত খোলা থাকলেও লোকজন তেমন দেখা যায় নি এ দিন। তৃণমূল সমর্থক উকিল, মুহুরিরা অবশ্য হাজির ছিলেন। এজলাসে এসেছিলেন বিচারকও। তবে বিচারপ্রার্থী কেউ না থাকায় আদালতে সেভাবে বিচার প্রক্রিয়া চলে নি।

সংকলন: কেদারনাথ ভট্টাচার্য, অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়, উদিত সিংহ ও সৌমেন দত্ত।
—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন