মালগাড়ির ধাক্কা থেকে বাঁচল ট্রেন

দেখভালের ফাঁকফোকর নিয়ে লাগাতার অনুযোগ-অভিযোগ সত্ত্বেও এক লাইনে মুখোমুখি বা পরপর একাধিক ট্রেন চলে আসার ব্যাধি সারাতে পারছে না রেল। সোমবার একই ধরনের বিপত্তিতে পড়েও চালকের তৎপরতায় বেঁচে গেলেন কুরলা এক্সপ্রেসের যাত্রীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৭ ০৪:১৯
Share:

দেখভালের ফাঁকফোকর নিয়ে লাগাতার অনুযোগ-অভিযোগ সত্ত্বেও এক লাইনে মুখোমুখি বা পরপর একাধিক ট্রেন চলে আসার ব্যাধি সারাতে পারছে না রেল। সোমবার একই ধরনের বিপত্তিতে পড়েও চালকের তৎপরতায় বেঁচে গেলেন কুরলা এক্সপ্রেসের যাত্রীরা। দুর্ঘটনাস্থল সেই সর্ডিহা স্টেশন। যেখানে উল্টে পড়া জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের কয়েকটি কামরার উপরে হুড়মুড়িয়ে এসে পড়া একটি মালগাড়ির ধাক্কায় শতাধিক প্রাণহানির স্মৃতি এখনও দগদগে।

Advertisement

রেল সূত্রের খবর, সোমবার সকাল পৌনে ১০টা নাগাদ সর্ডিহা স্টেশনে মেন লাইনে একটি মালগাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল। পাশের লুপ লাইন দিয়ে আসছিল শালিমারমুখী কুরলা এক্সপ্রেস। সেটি ওই স্টেশনে থামে না। তাই তাকে বার করে দিতে ‘থ্রু পাশ’-এর সিগন্যাল দেওয়া হয়। সেই সিগন্যাল দেখে ভুল বুঝে দাঁড়িয়ে থাকা মালগাড়ির চালকও একই দিকে যাত্রা শুরু করেন। কিন্তু মালগাড়ির পয়েন্ট সেট না-থাকায় কিছুটা এগিয়ে ভুল হয়েছে বুঝতে পেরে শেষ পর্যন্ত ইমার্জেন্সি ব্রেক কষেন তিনি। এ দিকে নিজের লাইনে মালগাড়িকে এগিয়ে আসতে দেখে ব্রেক কষেন কুরলা এক্সপ্রেসের চালকও। শেষ পর্যন্ত দু’টি ট্রেনই খানিকটা ব্যবধানে দাঁড়িয়ে যাওয়ায় বড়সড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পান কুরলা এক্সপ্রেসের যাত্রীরা।

মালগাড়িটি অনেক আগেই সর্ডিহা স্টেশনে পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু তাকে সেখানে আটকে দেওয়া হয়। কেননা পিছনে ছিল কুরলা এক্সপ্রেস। সেই যাত্রী-ট্রেনটিকে এগিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেই মালগাড়িটিকে আধ ঘণ্টারও বেশি সময় দাঁড় করিয়ে রাখা হয় সর্ডিহায়। ঠিক হয়, কুরলা এক্সপ্রেসকে লুপ লাইন দিয়ে ‘থ্রু পাশ’ করিয়ে দেওয়া হবে। প্রশ্ন উঠছে, কুরলা এক্সপ্রেসকে দেখানো সিগন্যালে মালগাড়ির চালক বিভ্রান্ত হবেন কেন? রেলকর্তারা বলছেন, দীর্ঘ ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে সম্ভবত মালগাড়ি-চালকের তন্দ্রা এসে গিয়েছিল। সেই অবস্থায় আচমকা সিগন্যাল হয়ে গিয়েছে দেখে কিছু না-ভেবেই এগোতে শুরু করেন তিনি।

Advertisement

লুপ লাইন যেখানে মেন লাইনের সঙ্গে মিশেছে, সেখানে রয়েছে একটি ক্রসিং পয়েন্ট। মালগাড়ির চালক হঠাৎ এগোনোর চেষ্টা করায় সেই পয়েন্টটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রেলকর্তারা জানান, ওই পয়েন্টটি ফেটে যাওয়ায় কুরলা এক্সপ্রেসের লাইনের আ্যাডভান্স স্টার্টার সিগন্যাল লাল হয়ে যায়। তাতেই কোনও গোলমাল হয়েছে বুঝে পেরে ইমার্জেন্সি ব্রেক কষেন মালগাড়ির চালক।

রেলকর্তারা যা-ই বলুন, রেল মহলেরই একাংশের বক্তব্য, মালগাড়ির চালকেরা দীর্ঘ ক্ষণ এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে অভ্যস্ত। এ দিন সকাল ১০টায় কী করে ওই মালগাড়ি-চালকের তন্দ্রা এসে গেল, তার কোনও ব্যাখ্যা মিলছে না।

দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনস‌ংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘‘অটোমেটিক সিগন্যাল ব্যবস্থা থাকায় মালগাড়ির চালক ভুল করতেই পাশের লাইনের সিগন্যাল লাল হয়ে যায়। আর তাতেই দাঁড়িয়ে যায় কুরলা এক্সপ্রেসও।’’ মালগাড়ির চালককে সাসপেন্ড করে তদন্ত চলছে বলে জানান তিনি। সর্ডিহা স্টেশনের একটি লাইনের (মালগাড়ি যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল) সিগন্যাল চালকের ডান দিকে রয়েছে, আদতে যেটির থাকা উচিত বাঁ দিকে। মালগাড়ির চালক এই কারণে ভুল বুঝেছেন কি না, সেটাও খতিয়ে দেখছেন রেলকর্তারা।

এই বিপত্তির জেরে এ দিন ওই লাইনে বেশ কয়েকটি মেল ও এক্সপ্রেস ট্রেন দেড় থেকে দু’ঘণ্টা দেরিতে চলাচল করেছে। কুরলা এক্সপ্রেসেরও শালিমার পৌঁছতে প্রায় দু’ঘণ্টা দেরি হয়ে যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন