দু’দিনে বেলাইন দুই এক্সপ্রেস

নরেন্দ্র মোদীর সরকারের দু’বছর পূর্তি উপলক্ষে রেলে এখন চলছে ‘হামসফর’ সপ্তাহ। এর মাধ্যমে যাত্রীদের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে রেলের ‘ভাল কাজ’-এর নমুনা। কিন্তু রেলের পরিকাঠামোর হাল যে কী, হামসফর কর্মসূচির এক দিন কাটতে না-কাটতেই সেটাই দগদগে হয়ে ফুটে উঠল যাত্রীদের সামনে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৬ ০৩:৫৩
Share:

নরেন্দ্র মোদীর সরকারের দু’বছর পূর্তি উপলক্ষে রেলে এখন চলছে ‘হামসফর’ সপ্তাহ। এর মাধ্যমে যাত্রীদের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে রেলের ‘ভাল কাজ’-এর নমুনা। কিন্তু রেলের পরিকাঠামোর হাল যে কী, হামসফর কর্মসূচির এক দিন কাটতে না-কাটতেই সেটাই দগদগে হয়ে ফুটে উঠল যাত্রীদের সামনে।

Advertisement

রবিবার রাতে লাইনচ্যুত হয় সাঁতরাগাছি-তিরুপতি এক্সপ্রেসের তিনটি কামরা। তার ধাক্কা সামলানোর আগেই সোমবার আবার হাওড়া-রাঁচি ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসের দু’টি কামরা বেলাইন হয়ে যায়। ওই দুই দুর্ঘটনার কোনওটিতেই অবশ্য কেউ হতাহত হননি। কিন্তু তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়েছে। দুর্ভোগও পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের।

সোমবার বিকেল ৪টে নাগাদ বর্ধমানের তালিত ও খানা স্টেশনের মাঝখানে লাইনচ্যুত হয় হাওড়া-রাঁচি ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, তালিত স্টেশনের দেড়শো মিটারের মধ্যেই বর্ধমান-সিউড়ি রোডের লেভেল ক্রসিং রয়েছে। বেশ কিছু দিন ধরে লাইন থেকে লোহার পাত বেরিয়ে এবড়োখেবড়ো হয়ে ছিল। কয়েক দিন আগে রবার ও পাথর দিয়ে মেরামতির কাজ করা হয়। এ দিন ট্রেনের চাকার সঙ্গে সেই রবার ও পাথর আটকে গিয়েই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে রেলকর্তাদের ধারণা।

Advertisement

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, চাকার স্প্রিং ভেঙে গিয়েছে। মলয় সেন নামে ধানবাদের এক যাত্রী বলেন, ‘‘ট্রেনটি আচমকাই ঘষটে ঘষটে যেতে শুরু করে। তার পরে হঠাৎই লাইন থেকে নেমে যায়। আতঙ্কে নেমে পড়ি আমরা।’’ আসানসোলের বাসিন্দা রীতা দাস, অন্ডালের চন্দন পাখোয়াজ বলেন, ‘‘গল্প করছিলাম। হঠাৎই ধাক্কা লেগে ট্রেনটা বসে গেল।’’ রীতাদেবীর মাথায় আঘাত লেগেছে। অনেকে ট্রেনের বাঙ্ক থেকে নীচে পড়ে যান বলেও জানান অন্য যাত্রীরা।

রেলের খবর, এই ঘটনার জেরে ট্রেনটি প্রায় এক ঘণ্টা আটকে ছিল। পরে লাইনচ্যুত হয়ে যাওয়া দু’টি কামরা বাদ দিয়ে ট্রেনটিকে তালিত স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়। রবিবারেও একই কাজ করেছিল দক্ষিণ-পূর্ব রেল। চারটি কামরা কেটে বাকি ট্রেনটিকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল ভুবনেশ্বরে। সেখানে ফের ওই ট্রেনে কামরা জুড়ে ভিড় সামলানো হয়।

পরপর দু’দিন দু’টি এক্সপ্রেস ট্রেন বেলাইন হল কেন, তার কারণ সন্ধানে যথারীতি পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে পূর্ব রেল। প্রাথমিক তদন্তের পরে রেল বিশেষ়জ্ঞেরা জানান, রবিবার লাইন ভেঙে দুর্ঘটনা ঘটেছিল। সোমবার তালিত ও খানা স্টেশনের মাঝখানে ট্রেন বেলাইন হল কেন, ইঞ্জিনিয়ারেরা সেটা দেখছেন।

ভুক্তভোগী যাত্রীরা বলছেন, সব বিপত্তির পরেই রেল তো কারণ ‘খতিয়ে দেখে’! ‘পূর্ণাঙ্গ’ তদন্ত হয়!! কিন্তু যাত্রীদের হয়রানি শেষ হয় না। কেন? বিভিন্ন দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে রেল কেন পরিষেবার ঘাটতি পূরণে উদ্যোগী হয় না, প্রশ্ন যাত্রীদের। তাঁদের ক্ষোভ, রেল মাঝেমধ্যেই এই সপ্তাহ, সেই সপ্তাহ নাম দিয়ে গালভরা কর্মসূচির ঢাক পেটায়। রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু নিজেই ট্রেনে উঠে যাত্রীদের অভাব-অভিযোগের কথা শোনেন। কিন্তু পরিষেবার ফাঁকফোকর বোজানোর চেষ্টা দেখা যায় না। ভুগতে হয় আমযাত্রীদেরই।

শুধু ট্রেন বেলাইন হলেই যে ভুগতে হয়, তা তো নয়। বর্ষা, শীতের মতো মরসুমের শুরুতে যে-সব আগাম ব্যবস্থা নেওয়ার কথা, তা না-নেওয়ায় ফল ভুগতে হয় যাত্রীদেরই। সোমবার সন্ধ্যায় পশ্চিম মেদিনীপুরের ঝাড়গ্রাম এবং তার পার্শ্ববর্তী এলাকা জুড়ে ব্যাপক কালবৈশাখীর জেরে ওভারহেড তারে গাছ পড়ে খড়্গপুর-টাটানগর লাইন বন্ধ হয়ে যায়। দক্ষিণ-পূর্ব রেল সূত্রের খবর, তারে গাছ পড়ার ঘটনাটি ঘটে ঝাড়গ্রাম ও গিধনির মাঝখানে। তার জেরে স্টিল এক্সপ্রেস-সহ বেশ কয়েকটি দূরপাল্লার ট্রেন দেরিতে চলে। রেলের এক শ্রেণির কর্মী-অফিসার জানাচ্ছেন, বর্ষার আগেই লাইনের পাশের গাছের ডাল কেটে, লাইনে ও তারে এক দফা মেরামতি সেরে ফেলার কথা। কিন্তু নিয়মমাফিক তা হয় না বলেই ঝড়বৃষ্টিতে ভুগতে হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন