ভুল লাইনে লোকাল, সাঁড়াশি চাপেও রক্ষা

এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে আসার কথা যে-লোকাল ট্রেনের, সে ঢুকে পড়ল মেল-এক্সপ্রেসের জন্য নির্ধারিত মাঝখানের লাইনে। আর যে-এক্সপ্রেসের যাওয়ার কথা মাঝখানের লাইন ধরে, সে ঢুকে গেল এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:১৯
Share:

অবরোধ: ভুল লাইনে ঢুকে পড়েছিল মাঝখানের ট্রেনটি। তার পরেই দু’পাশে চলে আসে অন্য দু’টি ট্রেন। মহাবিপদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার পরে দাশনগর স্টেশনে যাত্রীদের বিক্ষোভ। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে আসার কথা যে-লোকাল ট্রেনের, সে ঢুকে পড়ল মেল-এক্সপ্রেসের জন্য নির্ধারিত মাঝখানের লাইনে। আর যে-এক্সপ্রেসের যাওয়ার কথা মাঝখানের লাইন ধরে, সে ঢুকে গেল এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে। বিপদ বাড়িয়ে অন্য দিকের আপ লাইনেও এসে পড়ল লোকাল ট্রেন। মাঝখানে লোকাল ট্রেনের দু’দিকেরই দরজা দিয়ে নেমে পড়া যাত্রীরা চিঁড়েচ্যাপ্টা হতে হতে বাঁচলেন কোনও ক্রমে।

Advertisement

রাবণ বধের রাতে অমৃতসরে লাইনে বসে থাকা গ্রামবাসীদের উপর দিয়ে ট্রেন চলে যাওয়ার ঘটনা থেকে রেল যে কোনও শিক্ষাই নেয়নি, বৃহস্পতিবার তা ফের প্রমাণিত হয়ে গেল দাশনগরে। অফিসের ব্যস্ত সময়ে ভিড়ে ঠাসা লোকাল ট্রেন ভুল লাইনে ঢুকে পড়ার পরে দু’পাশের লাইনেও ট্রেন এসে যাওয়ায় মহাবিপদের আশঙ্কা ছিল। পরস্পরকে আঁকড়ে ধরে, টেনে সরিয়ে বাঁচলেন মাঝখানের লোকালের যাত্রীরা।

তার পরেই রেলের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলে আড়াই ঘণ্টা রেল অবরোধ করে রাখে ক্ষিপ্ত জনতা। চরম ভোগান্তিতে পড়েন বিভিন্ন স্টেশনে ট্রেনে আটকে থাকা হাজার হাজার যাত্রী। শেষে অবরোধকারীদের দাবি অনুযায়ী রেলকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে ভুল স্বীকার করলে অবরোধ উঠে যায়।

Advertisement

রেল পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, সকালে ডাউন পাঁশকুড়া লোকাল সাঁতরাগাছি ছাড়ার পরেই ভুল সিগন্যালের জন্য পরের স্টেশন দাশনগরে ঢোকার আগে মাঝখানের মেল-এক্সপ্রেস লাইনে ঢুকে পড়ে। পরের স্টেশন এসে যাওয়ায় চালক ট্রেন থমিয়ে দেন। ওই ট্রেনে দাশনগর, কামারডাঙার কলকারখানায় কাজে যোগ দিতে আসছিলেন শ’তিনেক শ্রমিক। এক নম্বর প্ল্যাটফর্মের পাশে ট্রেন না-ঢোকায় যাত্রীরা প্রথমে হতভম্ব হয়ে যান। তার পরে তাঁরা ট্রেনের দু’পাশ দিয়েই নামতে শুরু করেন।

ঠিক সেই সময়েই এক নম্বর লাইনে তীব্র গতিতে এসে পড়ে ডাউন জগন্নাথ এক্সপ্রেস আর আপ লাইনে চলে আসে মেদিনীপুর লোকাল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দু’পাশ থেকে দু’টি ট্রেন ঢোকার পরেই আতঙ্কে চিৎকার করতে শুরু করেন যাত্রীরা। মহিলারা কাঁদতে থাকেন। যাত্রীরা টেনেহিঁচড়ে সরিয়ে এনে পরস্পরকে বাঁচান। অভিযোগ, ট্রেন দু’টি যে আসছে, সেই বিষয়ে কোনও ঘোষণা করা হয়নি। ওই ঘটনার পরে কোনও রেলকর্মীরও দেখা মেলেনি স্টেশনে।

উত্তেজিত যাত্রীরা লাইনে নেমে দাশনগরেই আপ হাওড়া-পুণে দুরন্ত এক্সপ্রেস এবং ডাউন আমতা লোকাল আটকে দেন। ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখা গেল, কয়েকশো যাত্রী পাঁশকুড়া লোকাল ও আমতা লোকালের সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। প্ল্যাটফর্মেও দাঁড়িয়ে রয়েছেন কয়েকশো যাত্রী। পরিমল ভৌমিক নামে পাঁশকুড়া লোকালের এক যাত্রী বলেন, ‘‘দাশনগরে রোজ ৩০০-৪০০ কর্মী নামেন। ট্রেন দু’নম্বর লাইনে দাঁড়িয়েছে দেখে আমরা বাধ্য হয়েই নেমে পড়েছিলাম লাইনে। কিন্তু তখনই দু’পাশ থেকে দু’টি ট্রেন এসে পড়ে।’’

তখনও টিকিট কাউন্টারের কাছে বসে কাঁপছিলেন অসীমা সামন্ত। দাশনগরের একটি গেঞ্জিকলের কর্মী অসীমাদেবী বলেন, ‘‘ট্রেনের চাকার তলায় পড়তে পড়তে বেঁচেছি। কে যেন আমায় টেনে নিয়েছিল। তার পর থেকে আমার কাঁপুনি থামছে না।’’

অভিযোগ, এত বড় ঘটনার পরেও বেলা সাড়ে ১০টা পর্যন্ত কোনও রেলকর্তার দেখা মেলেনি। তবে রেলরক্ষী বাহিনীর কিছু জওয়ান ও হাওড়া সিটি পুলিশের কর্মীরা

এসে অবরোধ তোলার চেষ্টা করেন। কিন্তু অবরোধকারীরা জানিয়ে

দেন, দক্ষিণ-পূর্ব রেলের পদস্থ কেউ ভুল স্বীকার করে ক্ষমা না-চাইলে অবরোধ উঠবে না। প্রায় সাড়ে ১০টায় ঘটনাস্থলে আসেন সাঁতরাগাছি স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন ম্যানেজার ধনঞ্জয় সিংহ। তিনি বলেন, ‘‘সাঁতরাগাছিতে কন্ট্রোল প্যানেল অপারেটরের জন্য এই ভুলটা হয়েছে। বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারত।’’

বেলা ১১টায় আসেন ডিভিশনাল সেফটি কমিশনার একে রায়। তিনি বলেন, ‘‘যাত্রীদের কাছে ভুল স্বীকার করেছি। আমাদের দিক থেকে কারিগরি ত্রুটি রয়েছে। যাঁদের ভুলের জন্য এটা হয়েছে, আমরা ইতিমধ্য়ে তাঁদের শো-কজ করেছি। তদন্ত শুরু হয়েছে।’’ দীর্ঘ রেল অবরোধের জন্য সাতটি লোকাল ট্রেন বাতিল করতে হয়। ২১টি মেল ও লোকাল ট্রেন দেরিতে ছাড়ে বলে দক্ষিণ-পূর্ব রেল সূত্রে জানা গিয়েছে। বিভিন্ন স্টেশনের যাত্রীদের হেঁটে বা গাড়ি ভাড়া করে গন্তব্যে যেতে হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন