ঝাড়গ্রামে পার্থ চট্টোপাধ্যায়।—নিজস্ব চিত্র
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভার দিনে পাল্টা সমাবেশের ডাক দিয়েছিল ‘ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল’। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলার পর পাল্টা সমাবেশ থেকে পিছিয়ে আসার ইঙ্গিত দিল তারা।
আগামী ৯ অগস্ট ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামে আদিবাসী দিবস উপলক্ষে সরকারি জনসভা করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই দিনই ঝাড়গ্রাম সার্কাস ময়দানে সমাবেশের ডাক দিয়েছিল আদিবাসী সাঁওতালদের সর্বোচ্চ সামাজিক সংগঠন—‘ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল’। পঞ্চম তফসিলের বাস্তবায়ন-সহ নানা দাবিতে আদিবাসীদের জমায়েত ও আদিবাসী দিবস উদযাপন উপলক্ষে এই সমাবেশ বলে জানিয়েছিল তারা। মুখ্যমন্ত্রীর সভাস্থলের দু’ কিলোমিটার মধ্যে সমাবেশ। পারগানা মহলের সিদ্ধান্তে রীতিমত ‘অস্বস্তি’তে পড়ে যায় পুলিশ-প্রশাসন। কারণ, এই আদিবাসী সংগঠনের সঙ্গে পঞ্চায়েত ভোটের সময় থেকেই রাজ্য প্রশাসনের কার্যত ঠান্ডা লড়াই শুরু হয়েছে। সম্প্রতি পারাগানা মহলের নেতা রবিন টুডুর বদলিকে কেন্দ্র করেও সে লড়াই তুঙ্গে উঠেছিল।
রবিনবাবু পেশায় শিক্ষক। তাঁকে পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা-২ ব্লকের টেনপুর হাইস্কুল থেকে পূর্ব মেদিনীপুরের ময়নার একটি স্কুলে বদলি করে দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে গত ২৩ জুলাই থেকে লাগাতার ২৭ জুলাই পর্যন্ত পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের দফতরের সামনে ধর্নায় বসেন পারগানা মহলের সদস্যেরা। এমন ধর্না বিক্ষোভে ওই দফতরটি পাঁচ দিন খোলাই যায়নি। ২৫ থেকে ২৭ জুলাই তিন দিন দফায় দফায় ঝাড়গ্রাম জেলার সাঁকরাইল ব্লকের বিভিন্ন স্কুলে তালা ঝুলিয়ে দেন পারগানা মহলের লোকজন। কয়েকটি অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের দফতরেও তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এরপরই গত বুধবার প্রচারপত্র প্রকাশ করে পারগানা মহলের পক্ষ থেকে ৯ অগস্ট ঝাড়গ্রামে সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবারই লোধাশুলিতে ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের কোর কমিটির বৈঠক করতে আসেন পার্থবাবু। বৈঠকের পরে প্রশাসনের উদ্যোগে পারগানা মহলের সর্বোচ্চ নেতা ‘দিশম পারগানা’ নিত্যানন্দ হেমব্রম, রবিনবাবু-সহ এক প্রতিনিধি দলকে লোধাশুলিতে নিয়ে যাওয়া হয়। রবিনবাবুর বদলি বাতিল করার আশ্বাস দেন পার্থবাবু। এরই পরই পাল্টা সমাবেশ নিয়ে সুর নরমের ইঙ্গিত দিল —‘ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল’। সর্বোচ্চ নেতা ‘দিশম পারগানা’ নিত্যানন্দ হেমব্রম বলেন, ‘‘পার্থবাবুকে জানিয়েছি, ৯ তারিখে ঝাড়গ্রামে আমাদের সমাবেশ অন্যত্র সরানোর ব্যাপারে সাংগঠনিক স্তরে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সরকারি অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ আমরা চাই না। তবে ব্যক্তিগত ভাবে কেউ মুখ্যমন্ত্রীর সভায় যেতে পারেন।’’
রবিনবাবু বলেন, ‘‘বদলির সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।’’ পার্থবাবুর সঙ্গে পারগানা মহলের নেতাদের বৈঠক নিয়ে কটাক্ষ করেছেন পাল্টা আদিবাসী সামাজিক সংগঠনের (জুয়ান গাঁওতা) নেতা প্রবীর মুর্মু। প্রবীর বলেন, ‘‘পারগানা মহলের গুটিকয়েক নেতা আদিবাসী সমাজের উন্নয়নের নাম করে ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধি করছেন।’’