অপহরণের হুমকি নার্সকে, অভিযুক্ত নেতা

এ বার সরকারি হাসপাতালে ঢুকে কর্তব্যরত এক নার্সকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেওয়ায় অভিযুক্ত তৃণমূলের এক যুব নেতা। প্রতিবাদ করায় ওই নার্সকে শারীরিক নিগ্রহের চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ। হইচই শুনে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক (বিএমওএইচ), অন্য ডাক্তার এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা ছুটে গিয়ে থামাতে চেষ্টা করলে তাঁদেরও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে জিয়াউর রহমান ওরফে জিয়া নামে বছর পঁচিশের ওই নেতার বিরুদ্ধে।

Advertisement

বাপি মজুমদার

হরিশ্চন্দ্রপুর শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৫ ০৩:৪৩
Share:

অভিযুক্ত নেতা জিয়াউর রহমান। — নিজস্ব চিত্র।

এ বার সরকারি হাসপাতালে ঢুকে কর্তব্যরত এক নার্সকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেওয়ায় অভিযুক্ত তৃণমূলের এক যুব নেতা। প্রতিবাদ করায় ওই নার্সকে শারীরিক নিগ্রহের চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ। হইচই শুনে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক (বিএমওএইচ), অন্য ডাক্তার এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা ছুটে গিয়ে থামাতে চেষ্টা করলে তাঁদেরও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে জিয়াউর রহমান ওরফে জিয়া নামে বছর পঁচিশের ওই নেতার বিরুদ্ধে।

Advertisement

মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালে শুক্রবারের ওই ঘটনায় রাতেই অভিযোগ দায়ের হয়। কিন্তু দলের কার্যালয় বা কর্মসূচিতে দেখা গেলেও শনিবার রাত পর্যন্ত জিয়ার সন্ধান পায়নি পুলিশ। ফলে, চিন্তায় রয়েছেন নার্স, ডাক্তারেরা।

এসডিপিও (চাঁচল) রানা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশি চলছে। শীঘ্রই ওকে ধরা হবে।’’ তবে মালদহের জেলাশাসক শরদকুমার দ্বিবেদী বলেন, ‘‘এ সব বরদাস্ত করা হবে না। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।’’

Advertisement

সম্প্রতি মালদহের সামসিতে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) এক নেতা স্থানীয় কলেজের দুই শিক্ষিকাকে ‘রেপ’ করিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। তার রেশ কাটতে না কাটতেই রানিগঞ্জে থানায় বোমা মারা এবং পুলিশের গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে সংবাদ শিরোনামে আসেন আর এক টিএমসিপি নেতা সৌমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়। জিয়াও নিজেকে যুব তৃণমূলের জেলা সম্পাদক বলে দাবি করেছেন।

দলের ‘ছাত্র-যৌবন’দের নাম এমন সব কাণ্ডে জড়ানো মোটেই স্বস্তির হচ্ছে না শাসক দলের উপরতলার নেতা-নেত্রীদের পক্ষে। জেলারই মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রর প্রতিক্রিয়া, ‘‘যদি হাসপাতালে এমন ঘটনা ঘটে থাকে, তা কাম্য নয়। এ ক্ষেত্রে পুলিশ পুলিশের কাজ করবে।’’ জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি অম্নান ভাদুড়ি আবার বলেন, ‘‘জিয়া এখন সংগঠনের কোনও দায়িত্বে নেই! কী হয়েছে, খোঁজ নিচ্ছি।’’

গত ১৫ জুন হরিশ্চন্দ্রপুর হাসপাতালের অন্তর্বিভাগের উদ্বোধন হয়। পুলিশ সূত্রের খবর, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডাক পাওয়ার জন্য আগে থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উপরে চাপ দিচ্ছিলেন জিয়া। কিন্তু অনুষ্ঠানে ডাক না পেয়ে তিনি চটে যান।

শুক্রবার রাতে স্বামী মারধর করেছেন এমন অভিযোগ নিয়ে চিকিৎসার জন্য হরিশ্চন্দ্রপুর হাসপাতালে যান এক মহিলা। তাঁর কাছ থেকে হাসপাতালের পরিষেবা নিয়ে অভিযোগ পেয়ে সেখানে যান জিয়া। মহিলার দাবি, হাসপাতাল থেকে তাঁকে বাইরে কোনও চিকিৎসকের ব্যক্তিগত চেম্বারে যেতে বলা হয়। হাসপাতালে গিয়ে তখনই ওই মহিলার চিকিৎসা করার দাবি তোলেন জিয়া। কেন দেরি হচ্ছে, সে প্রশ্ন তুলে তিনি কর্তব্যরত নার্সকে চড় মারতে উদ্যত হন বলে অভিযোগ।

ঘটনাস্থলে হাজির স্বাস্থ্যকর্মীদের দাবি, ‘‘নার্স পরিচয় জানতে চাওয়ায় ওই নেতা বলেন, ‘হরিশ্চন্দ্রপুরে আমার কথাই শেষ কথা। আমি কে, না জানলে জেনে নিন’। নার্সকে উনি ‘তুলে নিয়ে যাব’ বলেও হুমকি দেন।’’ ওই নার্স বলেন, ‘‘সহকর্মীরা এসে না পড়লে কী হতো জানি না!’’ হাসপাতালের চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের একটা বড় অংশের বক্তব্য: জিয়ার দাপাদাপির বহর দেখে তাঁরা আতঙ্কিত।

এ দিন বেলা ১টা নাগাদ হরিশ্চন্দ্রপুরে তৃণমূলের পুরনো পার্টি অফিসে বসে জিয়া অবশ্য এ দিন দাবি করেন, ‘‘মহিলার চিকিৎসা হাসপাতালের বাইরে করার কথা বলা হয়েছিল। তার প্রতিবাদ করেছিলাম। আমাকে বদনাম করতে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।’’ তৃণমূল সূত্রের খবর, এ দিন বিকেলে মালদহ সদরে যুব তৃণমূলের সাংগঠনিক সভাতেও জিয়া হাজির ছিলেন।

বিএমওএইচ ছোটন মণ্ডল বলেন, ‘‘ওই মহিলাকে শুধু অপেক্ষা করতে বলা হয়েছিল। যা ঘটেছে, অনেকের সামনে ঘটেছে।’’ এ দিন ওই হাসপাতাল পরিদর্শনের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি ছিল জেলাশাসক ও মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের। সেখানে গিয়ে অভিযোগ শুনে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তাঁরা। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দিলীপ মণ্ডল বলেন, ‘‘অভিযুক্তের রাজনৈতিক পরিচয় জানি না। কিন্তু হাসপাতালে ঢুকে কর্মীদের হুমকি দিলে, ঝামেলা পাকালে কাউকেই রেয়াত করা হবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন