নিরাপত্তা নেই, মমতাকে চিঠি ইসরতের

এ দিন দুপুরেই নবান্নে সেই চিঠি জমা পড়েছে বলে জানান ইসরতের আইনজীবী নাজিয়া ইলাহি খান। নাজিয়া বলেন, ‘‘সাত দিনের মধ্যে যদি রাজ্য সরকার ইসরতের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করেন, তা হলে বিষয়টা সুপ্রিম কোর্টে জানাব।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৭ ০৮:১৫
Share:

আলোচনা: নিজের আইনজীবী নাজিয়া ইলাহি খানের সঙ্গে ইসরত জহান। শুক্রবার। ছবি: পিটিআই।

তিনি নিশ্চিত করেছেন মুসলিম সম্প্রদায়ের বিবাহবিচ্ছিন্না মহিলাদের আত্মসম্মান। কিন্তু তাঁর নিজের নিরাপত্তাই এখন ঘোর অনিশ্চিয়তার মধ্যে। শুক্রবার এমনই অভিযোগ করলেন হাওড়ার পিলখানার বাসিন্দা ইসরত জহান। আর সেই অভিযোগ তিনি চিঠি আকারে লিখে জমা দিলেন এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও।

Advertisement

এ দিন দুপুরেই নবান্নে সেই চিঠি জমা পড়েছে বলে জানান ইসরতের আইনজীবী নাজিয়া ইলাহি খান। নাজিয়া বলেন, ‘‘সাত দিনের মধ্যে যদি রাজ্য সরকার ইসরতের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করেন, তা হলে বিষয়টা সুপ্রিম কোর্টে জানাব।’’ এ দিন ওই আইনজীবী ইসরতের নিরাপত্তা সম্পর্কে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এবং পুলিশের পদস্থ কর্তাদের চিঠি পাঠিয়েছেন।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে লেখা চিঠিতে এ দিন ইসরত জানিয়েছেন, তিন তালাকের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর থেকে তিনি ও তাঁর সন্তানেরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। প্রাণ সংশয়ও রয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে আরও জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারের কাছ থেকে আগেও কোনও রকম সহযো‌গিতা তিনি পাননি। এখনও কোনও আর্থিক বা আইনি সাহায্য তিনি চান না। ভাসুর তাঁর দু’বার শ্লীলতাহানি করার পরে গোলাবাড়ি থানাতে জানিয়েও কোনও বিচার মেলেনি। তাই পুলিশের উপর কোনও ভরসা রাখতে চান না ইসরত। এই পরিস্থিতিতে তাঁর এবং সন্তানদের কিছু ঘটে গেলে তার দায় পুলিশকেই নিতে হবে।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কেন এমন চিঠি পাঠাতে হলো ইসরতকে?

আরও পড়ুন:

তিন তালাক রদে জয় দেখছেন বহু কাজিই

নাজিয়া বলেন, ‘‘ইসরতকে সামাজিক ভাবে বয়কট করা হয়েছে। এক দিকে তাঁর ভাসুর, অন্য দিকে এলাকাবাসী ইসরতকে মানসিক অত্যাচার করছেন। তাঁকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’’ এই আইনজীবী আরও জানান, তাৎক্ষণিক তিন তালাকের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ইসরতের নামে অপপ্রচার চালিয়ে তাঁর চরিত্রহননের চেষ্টাও চলছে। এ দিন পিলখানার ঘিঞ্জি আবাসনের তিন তলায় দাঁড়িয়ে ইসরতও বলেন, ‘‘মুখে কি কিছু বলতে হয়! এলাকার সকলেই আমাকে নানা অঙ্গভঙ্গিতে বুঝিয়ে দিচ্ছেন, তাঁরা আমার বিরুদ্ধে।’’

মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট রায় ঘোষণার পরেই ইসরত দেশ জুড়ে আলোচনার কেন্দ্র বিন্দু হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু তাতে তেমন আমল দিতে চায়নি তাঁর মহল্লা। তিন দিনের মাথাতেও এই অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি। পিলখানার ঘিঞ্জি কাপুর গলির মোড়ে জটলা, আড্ডা চললেও কোনও কথাতেই স্থান নেই ‘তাঁর’! সকলেই এড়িয়ে যেতে চেয়েছেন ইসরত জহানের বিষয়ে। কেউ স্পষ্ট বলেই দিচ্ছেন— ‘‘চিনি না।’’ কোনও প্রতিবেশী আবার বলেছেন ‘‘ও ভাল নয়!’’

কয়েক বছর আগে স্বামী তালাক দিয়ে দিলেও ২০/১ নন্দ ঘোষ রোডে ঘুপচি আবাসনের তিন তলায় ভাসুর মুস্তাফা আলির ফ্ল্যাটের একটা ঘরেই থাকেন ইসরত। কিন্তু মুস্তাফা কিংবা আশোপাশের প্রতিবেশীরা কেউ কথা বলেন না ওই তরুণীর সঙ্গে। তবে এ দিন মুস্তাফা বলেন, ‘‘ও তো নিজেই ভাল নয়। কথা বলবো কী করে? মাঝেমধ্যেই তো পুলিশের কাছে গিয়ে মিথ্যে মামলা দায়ের করে আসে।’’

এ দিনও আবু ধাবি থেকে আনন্দবাজারকে ইসরতের স্বামী মহম্মদ মুরতুজা আনসারি বলেন, ‘‘আমার ছেলেমেয়েরাই ওর সম্পর্কে বলে দেবে। ছেলেমেয়েদের জন্যই তো আর একটা বিয়ে করতে হলো। কিন্তু তা-ও আমি ওর সঙ্গে সংসার করতে চাই। এখনও।’’

আর ইসরতের প্রশ্ন, ‘‘থাকতেই যদি চায়, তা হলে আর একটা বিয়ে করল কেন?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন