শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয় বার শপথ নিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর ঘটনাচক্রে এ দিনই তাঁর সরকারের বাণিজ্যকর দফতরের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ তুলল শিল্পমহলের একাংশ। যদিও দফতরের তরফে অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
মিলনমেলা প্রাঙ্গণে বৈদ্যুতিন-গাড়ি মেলার আয়োজকদের অভিযোগ, প্রদর্শনীতে গাড়ি আনতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কমার্শিয়াল ট্যাক্স আধিকারিকের হাতে নাস্তানাবুদ হয়েছে ভিন্্ রাজ্যের কয়েকটি সংস্থা। ফলে তাদের গাড়ি ঠিক সময়ে মেলায় পৌঁছতে পারেনি। এতে ব্যবসার সম্ভাবনা মার খেয়েছে বলে আক্ষেপ করছেন সংস্থাগুলির কর্তারা। আয়োজকদেরও আশঙ্কা, এই ঘটনা ভাল বার্তা দেবে না।
‘‘বাইরের কোম্পানির কাছে বাংলার বাণিজ্যবান্ধব ভাবমূর্তি ধাক্কা খেতে পারে।’’— মন্তব্য এক উদ্যোক্তার। অন্য দিকে বাণিজ্যকর দফতরের দাবি, চেকপোস্টে নিয়মমাফিক কাগজপত্র দেখাতে না-পারায় গাড়িবোঝাই কয়েকটি ট্রাক আটক করা হয়েছিল। ‘‘নিয়মের বাইরে কিছু হয়নি। সমস্যা হয়ে থাকলে দায়টা ওঁদেরই।’’— বলেছেন দফতরের এক শীর্ষ কর্তা।
দিল্লির এক বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে শুক্রবার মিলনমেলায় শুরু হয়েছে বৈদ্যুতিন-গাড়ি মেলা। চলবে তিন দিন। গত ডিসেম্বরে দিল্লিতেও তারা এমন মেলা বসিয়েছিল। কলকাতা ও আশপাশে ছোট বৈদ্যুতিন গাড়ি, বিশেষত বৈদ্যুতিন-রিকশার (টোটো) ভাল বাজার মিলবে ধরে নিয়েই এ বার কলকাতায় মেলার আয়োজন, যাতে সামিল হয়েছে ৭৬টি সংস্থা। এর মধ্যে বেশ কিছু চিনা কোম্পানিও রয়েছে।
এবং উদ্যোক্তাদের তরফে রাজীব অরোরার দাবি, ভিন রাজ্যের বৈদ্যুতিন গাড়িগুলির জন্য এখানকার বিক্রয়কর দফতর থেকে আগেই তাঁরা নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি) নিয়ে রেখেছিলেন। অথচ গাড়িভর্তি লরি ঝাড়খণ্ড সীমানা পেরিয়ে ঢোকার সময়ে চেকপোস্টে আটকে দেওয়া হয়েছে। রাজীবের প্রশ্ন, ‘‘চেকপোস্টে ভ্যাট, এন্ট্রি ট্যাক্স ও ওয়ে বিলের কাগজ চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু গাড়িগুলো তো এখানে শুধু দেখানোর কথা! এ সব লাগবে কেন?’’
রাজীবের এ-ও অভিযোগ, দিন চারেক ধরে তাঁরা কলকাতায় বাণিজ্যকর অফিসে যাতায়াত করলেও এ ব্যাপারে তাঁদের কেউ কিছু বলেনি। ‘‘তা ছাড়া যেখানে এনওসি নেওয়া রয়েছে, সেখানে এগুলো কেন লাগবে মাথায় ঢুকছে না।’’— মন্তব্য রাজীবের।
শেষমেশ কাগজপত্র জমা দিয়ে কিছু ট্রাক ছাড়াতে পারলেও মাঝপথে ফের তাঁদের হয়রান করা হয়েছে বলে অভিযোগ। উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, এই ডামাডোলের শিকার হয়ে অনেক সংস্থার গাড়ি এ দিন মেলায় হাজির হতে পারেনি। যেমন দিল্লির ‘ডিডি অটো’র কর্তা করণ গম্ভীর বলেন, ‘‘একটাই গাড়ি আনছিলাম। মাঝ রাস্তায় আটকে পড়ল। লোককে দেখাব কী?’’ আর রাজীবের স্বগতোক্তি, ‘‘মনে হচ্ছে, এখানে এসে ভুলই করলাম।’’
রাজ্যের শিল্পমহল অবশ্য ঘটনাটি বিশদে না-জেনে মন্তব্য করতে চায়নি। তবে বিক্রয়কর প্রশ্নে ‘হেনস্থা’র অভিজ্ঞতা অনেকেরই রয়েছে। যদিও দফতরের কর্তাদের দাবি, ব্যবসায়ীদের সুবিধা দেখাই তাঁদের মূল উদ্দেশ্য। ‘‘এ ক্ষেত্রে ঠিকঠাক কাগজ দেখাতে না-পারায় নিয়ম মেনে ট্রাক আটকানো হয়েছিল।’’— বলছেন বাণিজ্যকরের এক কর্তা। তাঁদের দাবি: বৃহস্পতিবার রাত বারোটাতেও আয়োজকেরা যখন যোগাযোগ করেছিলেন, তখন তাঁদের রফা-সূত্র দেওয়া হয়। বলা হয়, মুচলেকা ও ব্যাঙ্ক-গ্যারান্টি দিয়ে গাড়ি ছাড়ানো যাবে। এ সব জমা দেওয়ার জন্য ওঁদের ই-মেল অ্যাড্রেসও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওঁরা কোনও নিয়মই মানতে চাননি।
‘‘বরং পরে নিজেরাই জরিমানা দিয়েছেন।’’— পাল্টা দাবি দফতরের এক কর্তার।