বনগাঁ কেন্দ্রে মতুয়া কার? চলছে তরজা

বিকালে মাঠের কাজ শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে ওই চায়ের দোকানে গল্পে মজেছেন বিভিন্ন বয়েসের বেশ কয়েক জন  বাসিন্দা। এটা-ওটা কথা হতে-হতেই চলে এসেছে লোকসভা নির্বাচনের প্রসঙ্গ। এবং প্রত্যাশিত ভাবেই তর্ক বেধে গিয়েছে মতুয়া ভোট তৃণমূল এবং বিজেপি কাকে কতটা সুবিধা দেবে, তা নিয়ে। 

Advertisement

সৌমিত্র সিকদার 

কল্যাণী শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৯ ০২:৫৯
Share:

নিজস্ব চিত্র।

ভাগীরথীর ধারে ছোট্ট একটা চায়ের দোকান। সামনে দিয়ে গিয়েছে পাকা রাস্তা। সেই রাস্তা দিয়ে গেলেই চোখে পড়ে মতুয়াদের ধর্ম সম্মেলনের একাধিক ব্যানার।

Advertisement

বিকালে মাঠের কাজ শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে ওই চায়ের দোকানে গল্পে মজেছেন বিভিন্ন বয়েসের বেশ কয়েক জন বাসিন্দা। এটা-ওটা কথা হতে-হতেই চলে এসেছে লোকসভা নির্বাচনের প্রসঙ্গ। এবং প্রত্যাশিত ভাবেই তর্ক বেধে গিয়েছে মতুয়া ভোট তৃণমূল এবং বিজেপি কাকে কতটা সুবিধা দেবে, তা নিয়ে।

নদিয়ায় থেকেও কল্যাণী এবং হরিণঘাটা বিধানসভা এলাকা জেলার দুই লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে না, পড়ে উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ কেন্দ্রের মধ্যে। গোটা বনগাঁ কেন্দ্রই মতুয়া অধ্যুষিত। এই চায়ের দোকানটা যেখানে, সেই কল্যাণী বিধানসভার চান্দুরিয়া ২ পঞ্চায়েত এলাকাতেও মতুয়া ভোট বেশি। এক সময়ে ‘বামদুর্গ’ বলে পরিচিত ছিল এই এলাকা। তৃণমূল আসার পরে সবটাই তাদের দখলে চলে যায়। বিগত কয়েকটি নির্বাচনে এখানে তৃণমূল বেশ ভাল ফল করেছে। এ বার আবার সেখানে অনেকের মুখে শোনা যাচ্ছে ভিন্ন সুর।

Advertisement

চায়ের দোকানে টেবিল ঠুকে এক মাঝবয়সী খরিদ্দার ঘোষণাই করে দিলেন— যাই বলো বাপু, এ বার সব ভোট কিন্তু তৃণমূল পাচ্ছে না! মনে হয়, অনেকেই নতুন কিছু ভাবতে শুরু করেছে।’’ পাশে বসা বছর তিরিশের এক যুবকের সোজাসুজি শুধোন, ‘‘তুমি কি দাদা বিজেপির কথা বলতে চাইছ?’’ আড়াআড়ি মাথা নাড়েন আর এক জন— ‘‘আমারও কিন্তু তেমনই মনে হচ্ছে।’’ যা শুনে তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠেন বেঞ্চের এক কোণে বসে থাকা বছর পঞ্চাশের এক প্রৌঢ়। তিনি বলেই ফেলেন, ‘‘ঠাকুরবাড়ির এই রাজনীতি আমার মোটেও ভাল লাগে না!’’ তাঁকে সমর্থন জানান পাশে বসে থাকা আরও দু’তিন জন।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

কল্যাণী এবং গয়েশপুর পুরসভা ছাড়াও সাতটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা নিয়ে গঠিত এই কল্যাণী সংরক্ষিত বিধানসভা কেন্দ্র। এর মধ্যে কল্যাণী পুর এলাকায় বেশ কিছু মতুয়া ভোটার রয়েছেন। চান্দুরিয়া ২, কাঁচড়াপাড়া, সগুনা, মদনপুর ১ -সহ কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েতেও রয়েছে মতুয়া ভোটার। আবার হরিণঘাটা পুরসভা এবং দশটি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত হরিণঘাটা বিধানসভা। এর মধ্যে হিংনাড়া, দেউলি, বিরহী ২, মোল্লাবেলিয়া, নগরউখড়া ২ গ্রাম পঞ্চায়েতেও ভাল পরিমাণ মতুয়া ভোটার রয়েছে।

কল্যাণীতে ১০ শতাংশের বেশি মতুয়া ভোট রয়েছে জানিয়ে কল্যাণী ব্লক তৃণমূল সভাপতি তপন মণ্ডল দাবি করেন, “ওঁদের বেশির ভাগ ভোট আমরা পাব। ওরা আমাদের ছাড়া অন্য কাউকে ভোট দেবে না।” একই দাবি হরিণঘাটা ব্লক তৃণমূল সভাপতি চঞ্চল দেবনাথেরও। তাঁর এলাকাতেও অন্তত ১০ শতাংশ মতুয়া ভোট রয়েছে। চঞ্চলের দাবি, “উন্নয়নমূলক কাজের জন্যই মতুয়ারা আমাদের ভোট দেবেন।” বিজেপির নদিয়া দক্ষিণ জেলা সাংগঠনিক সভাপতি জগন্নাথ সরকার অবশ্য পাল্টা বলেন, ‘‘মানুষ জানে, তৃণমূল কী করেছে। ওদের কথায় ওঁরা কান দেবেন না। আমাদেরই ভোট দেবেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন