ধনখড়-রাজ্য সংঘাত চলছেই

রাজ্যপালের একের পর এক মন্তব্য এবং কার্যকলাপে সরকারের সঙ্গে রাজভবনের সংঘাত বড় আকার নিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:১৯
Share:

—ফাইল চিত্র।

পরিস্থিতি যা-ই হোক, রাজ্যপাল হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালনে পিছপা হবেন না বলে ঘোষণা করলেন জগদীপ ধনখড়। তিনি বলেন, ‘‘যদি মনে হয়, রাজ্যপাল লক্ষ্মণরেখার বাইরে কিছু করছেন, কোনও অ্যাজেন্ডা আছে, তা হলে কী শোধরানোর দরকার বলুন। শুধরে নেব।’’

Advertisement

রাজ্যপালের একের পর এক মন্তব্য এবং কার্যকলাপে সরকারের সঙ্গে রাজভবনের সংঘাত বড় আকার নিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধনখড়কে ‘বিজেপির লোক’ বলে চিহ্নিত করে রাজ্যে সমান্তরাল প্রশাসন চালানোর অভিযোগ করেছেন।

কিন্তু নিজের অবস্থানে অনড় ধনখড় শুক্রবার ফের দাবি করেন, তিনি রাজ্যপালের এক্তিয়ার বহির্ভূত কোনও কাজ করছেন না। তাঁর কথা, ‘‘পরিস্থিতি যা-ই হোক তাতে রাজ্যপালের যদি কিছু ভূমিকা নেওয়ার থাকে তবে তা পালনে কখনও পিছিয়ে যাব না।’’ তিনি বলেন, ‘‘মমতা ভাল কাজ করেছেন, বলার সময় তো আমাকে কারও মুখপাত্র বলেন না কেউ।’’ পাশাপাশি তাঁর মন্তব্য, ‘‘সমান্তরাল সরকার চালালে হেলিকপ্টারে ফরাক্কা যেতাম। সরকার চালানোর কাজ মুখ্যমন্ত্রীর। তবে তাঁর মন্ত্রীদের কথাবার্তা বা কাজের উপর নিয়ন্ত্রণও তাঁরই দায়িত্ব।’’ কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীও বলেন, ‘‘কথায় কথায় রাজ্যের মেজ-সেজ মন্ত্রীরা হেলিকপ্টার চড়েন। রাজ্যপালকেও হেলিকপ্টার না দেওয়া রাজ্য সরকারের রাজনৈতিক সংকীর্নতার পরিচয়।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: পুর চেয়ারম্যানদের আর্থিক ক্ষমতা কাড়ল পুর দফতর

রাজ্যপালের বক্তব্যের বিরুদ্ধে রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘রাজ্যপাল ভুলে যাচ্ছেন, সংবিধান তাঁর পদক্ষেপ বেঁধে দিয়েছে। এখানে নির্বাচিত সরকার রয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার প্রধান। রাজ্যপালের ভূমিকা একেবারেই সীমিত।’’

এ দিন কলকাতা থেকে সড়কপথে ফরাক্কায় একটি কলেজের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল। সরকার তাঁকে কপ্টার না দেওয়ায় প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ‘‘আমার ভাল লাগেনি। রাজ্যপাল হেলিকপ্টার চান, এর মধ্যে প্রশাসনিক কারণ কী থাকতে পারে? সরকার আমাকে ফুট সোলজার (পদাতিক সেনা) বানিয়ে দিয়েছে।’’ তিনি আরও জানিয়েছেন, সড়কপথে এত দূর আসতে তাঁর কষ্ট হয়েছে।’’ এই যাতায়াতের পথে বহু জায়গায় সরকারি অতিথিশালায় সামান্য বিরতি নিয়ে তিনি কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গেও।

কপ্টার না পাওয়া নিয়ে রাজ্যপালের ক্ষোভের জবাবে মন্ত্রী চন্দ্রিমার প্রতিক্রিয়া, ‘‘একটি কলেজের অনুষ্ঠানে যাওয়া কোনও প্রশাসনিক বা সাংবিধানিক কর্মসূচি নয়, যার জন্য রাজ্যপালকে হেলিকপ্টার দেওয়া বাধ্যতামূলক। তিনি কলেজ কমিটির সদস্য এক বিধায়কের আমন্ত্রণে সেখানে গেছেন। সে জন্য তাঁকে সরকার হেলিকপ্টার দিতে যাবে কেন? এটা তো সরকারি কোনও কাজ নয়।’’

রাজ্যপালের বক্তব্য, তাঁর কোনও পদক্ষেপ বা আচরণ অধিকারের সীমা ছাড়িয়েছে বলে সরকারের কাছ থেকে তিনি চিঠি পাননি। তিনি বলেন, ‘‘যে দিন সেই চিঠি পাব, তা গুরুত্ব দিয়ে পড়ব। এবং তাদের সঙ্গে কথা বলব।’’ সমান্তরাল প্রশাসন সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে রাজ্যপালের জবাব, ‘‘তাঁর কোনও বক্তব্য থাকলে তিনি আমার সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন। অথবা চিঠি লিখতে পারেন।’’

রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার পরে সমালোচনা করেছিলেন রাজ্যপাল। এ দিন তাঁর কটাক্ষ, ‘‘রাজ্যের আইশৃঙ্খলা! আপনারাই ভাল জানেন।’’

সম্প্রতি সিঙ্গুরের বিডিও অফিসে ঢুকে রাজ্যপালের বসে পড়া নিয়েও বিতর্ক বেঁধেছে। তাঁর অবশ্য দাবি, ‘‘আচমকা যাইনি। শান্তিনিকেতনে আসা-যাওয়ার পথে ওখানে যাওয়ার কথা জেলা প্রশাসনকে আগে জানিয়েছিলাম।’’ সেই সঙ্গেই তিনি আবার জানিয়ে দেন, ওখানে কী ঢাকার চেষ্টা হচ্ছে, তা বুঝতে তিনি ফের যাবেন। যাবেন নন্দীগ্রামেও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement