CPM

‘দলবদলু’দের টানতে মঞ্চের ভাবনা জোটে

গত কয়েক বছরে পঞ্চায়েত স্তর থেকে বিধানসভা পর্যন্ত বেশ কিছু নেতা, কর্মী এবং বিধায়ক কংগ্রেস ও বাম শিবির ছেড়ে গিয়েছেন।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২০ ০৫:৩৮
Share:

প্রতীকী ছবি

বিধানসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে জোটের পথ পরিষ্কার করে নিতে চাইছে বাম ও কংগ্রেস। তারই অঙ্গ হিসেবে দলত্যাগীদের ভোটের আগে ফেরাতেও চাইছে কংগ্রেস। ঘর গুছোনোর এই চেষ্টা ঘিরে দেখা দিচ্ছে টানাপড়েনও।

Advertisement

গত কয়েক বছরে পঞ্চায়েত স্তর থেকে বিধানসভা পর্যন্ত বেশ কিছু নেতা, কর্মী এবং বিধায়ক কংগ্রেস ও বাম শিবির ছেড়ে গিয়েছেন। প্রথম দিকে দল বদলে তৃণমূলে যাওয়ার ঝোঁক ছিল, পরবর্তী কালে বিজেপির দিকেও পা বাড়িয়েছেন কেউ কেউ। করোনা এবং আমপান-পরবর্তী পরিস্থিতিতে জলপাইগুড়ি, মুর্শিদাবাদ, উত্তর দিনাজপুর-সহ কিছু জেলায় নিচু তলায় আবার কেন্দ্র ও রাজ্যের দুই শাসক দল ছেড়ে কংগ্রেস এবং সিপিএমে ফেরার কিছু ঘটনা দেখা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস শিবির থেকে চেষ্টা শুরু হয়েছে দলত্যাগী বিধায়কদের ফের নিজেদের শিবিরে টেনে আনার। আসন সমঝোতার শর্ত হিসেবে গত বার যে আসনে যে দল জয়ী হয়েছিল, তাদেরই এ বার সেই আসনে প্রার্থী দেওয়ার দাবি থাকবে। দলত্যাগীদের টেনে আনতে পারলে জোটের মধ্যে আসন ভাগাভাগির ক্ষেত্রে পরিষ্কার হিসেব নিয়ে চলতে পারবে কংগ্রেস। তবে এই কাজ করার জন্য শুধু দলের পতাকা না নিয়ে বৃহত্তর মঞ্চ গড়ার পক্ষপাতী কংগ্রেস ও বাম শিবিরের একাংশ। টানাপড়েন এখনও সেই প্রশ্নেই।

কংগ্রেসের ৪৪ জন এবং বামফ্রন্টের ৩৩ জন বিধায়ক জিতে এসেছিলেন ২০১৬ সালে। এই মুহূর্তে কংগ্রেসের রয়েছে ২৫ এবং বামফ্রন্টের ২৬ জন বিধায়ক। বিধায়ক-পদ ছেড়ে দেওয়া এবং প্রয়াতদের কথা বাদ দিলে কংগ্রেস ও বাম শিবির মিলিয়ে অন্তত ২০ জন বিধায়ক রয়েছেন, যাঁরা দলত্যাগী। একান্ত আলোচনায় এঁদের একাংশের বক্তব্য, নিজেদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ তাঁরা চিন্তায় আছেন। যে দলে গিয়েছেন, তারা সামনের ভোটে টিকিট দেবে কি না, নিশ্চিত নয়। আবার পুরনো শিবিরে ফিরলে জয় নিশ্চিত হবে কি না, তার কোনও ঠিক নেই! এই দোলাচলের আবহেই তৎপরতা বাড়াতে চাইছে কংগ্রেস শিবির। বামফ্রন্ট নেতৃত্বের বড় অংশও মনে করছেন, তৃণমূল যে ভাবে ২০১০-১১ সাল থেকে বিরোধী শিবিরকে ভেঙে দুর্বল করে দিয়েছিল, সেই অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে তৃণমূল শিবিরকেও মওকা বুঝে ধাক্কা দিতে হবে। তার জন্য যাটের দশকের যুক্তফ্রন্ট ‘উল্‌ফ’ এবং ‘পুল্‌ফ’-এর উদাহরণও দিচ্ছেন কেউ কেউ।

Advertisement

আরও পড়ুন: সিমেস্টার: ‘অ্যাডভাইজ়রি’ হিসেবেই দেখছে রাজ্য

তৃণমূল অবশ্য বিরোধীদের এমন উদ্যোগকে আমল দিতে নারাজ। দলের এক শীর্ষ নেতার বক্তব্য, ‘‘কে টিকিট পাবেন বা পাবেন না, সে ব্যাপারে যথাসময়ে সিদ্ধান্ত নেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু বাংলায় মূল রাজনৈতিক শক্তি তৃণমূলই। কেউ তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেস বা বামের দিকে যাবেন, এই ধারণাই ভিত্তিহীন!’’ বিজেপি নেতৃত্বেরও দাবি, তৃণমূলকে হারাবেন তাঁরাই। তাই তৃণমূল ছেড়ে লোকজন গেরুয়া শিবিরেই আসছেন।

উল্টো যুক্তি দিচ্ছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। দলের এক বর্ষীয়ান নেতার বক্তব্য, ‘‘রাজনীতিতে মোহভঙ্গের ঘটনাও ঘটে। শুধু দলত্যাগীই নন, তৃণমূল বা বিজেপিতে বিক্ষুব্ধদেরও আমাদের দিকে নিয়ে আসার সব রকম চেষ্টা হবে। তৃণমূল থেকে যাঁরা বেরোতে চান, তাঁদের বিজেপির দিকে যাওয়া ঠেকানোর চেষ্টা আমরা করব না কেন?’’ এক বাম নেতার কথায়, ‘‘ভোটের ক্ষেত্রে কৌশল একটা বড় প্রশ্ন। এখানে সঠিক কৌশল নিয়ে বিপক্ষকে দুর্বল করার চেষ্টা হবে।’’

আরও পড়ুন: ফের কি কড়া লকডাউন রাজ্যে, জল্পনা

শিবির বদলের প্রশ্নে বিধানসভা ভোটের আগে জট পেকেছে দক্ষিণের কেরলেও। কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ ছেড়ে কেরল কংগ্রেস (মানি) বামেদের ফ্রন্ট এলডিএফে আসতে চায়। ওই দলের মধ্যেও অবশ্য এই নিয়ে মতবিরোধ আছে। তবে ভোটের আগে সুযোগ কাজে লাগাতে সক্রিয় হয়েছে কেরলের সিপিএম। ফ্রন্টে নতুন শরিক নিতে সিপিএম রাজি থাকলেও আপত্তি তুলেছে সিপিআই। দু’দলের রাজ্য নেতৃত্বই শেষ পর্যন্ত নিজেদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পরামর্শ চেয়েছেন। সেখানেও টানাপড়েনের ফয়সালা এখনও ঝুলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন