বাঘ ধরতে জঙ্গলে খাঁচা বসানো হয়েছে। —নিজস্ব চিত্র।
বাঘ ধরতে জঙ্গলে খাঁচা বসালো বন দফতর। শনিবার বিকেলে লালগড়ের জঙ্গলে দু’টি খাঁচা পাতা হয়। একটি খাঁচা রাখা হয়েছে লালগড়ের মেলখেড়িয়া এবং অন্যটি কালিয়ার বাঁধ জঙ্গলে।
বন দফতর সূত্রে খবর, বাঘ ধরার জন্য সুন্দরবন থেকে ৫ জন কর্মী এবং তিনটি খাঁচা আনা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে, মেলখেড়িয়া, কালিয়ার বাঁধ বা মধুপুর— লালগড়ের এই তিন এলাকায় বাঘটি থাকতে পারে। জঙ্গলের মধ্যে আপাতত দু’টি খাঁচা বসানো হয়েছে। জ্যান্ত ছাগল বাঁধা রয়েছে খাঁচা দু’টির মধ্যে। ছাগলের ডাক শুনে বাঘ শিকার করতে খাঁচার মধ্যে ঢুকলেই আটকা পড়বে।
এ দিন সকাল থেকেই খাঁচা পাতার তোড়জোড় শুরু করে দেয় বন দফতর। বিশাল পুলিশ বাহিনী এবং বন দফতরের লোকেদের নিয়ে জঙ্গলে যান মেদিনীপুর জেলার ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহা। উপস্থিত ছিলেন এসডিপিও দীপক সরকারও। মেদিনীপুরের ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহা জানান, বাঘটির শারীরিক পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই ঘুম পাড়ানি ইঞ্জেকশনের পরিবর্তে খাঁচা দিয়ে বাঘ ধরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন দফতর। কারণ, জঙ্গলে খরগোস, বুনো শুয়োর, হরিণের মতো প্রাণী থাকা সত্ত্বেও বাঘটি ক’দিন ধরেই শুধুমাত্র গ্রামে ঢুকে বাছুরকে টার্গেট করছিল। এতে বন কর্তাদের অনুমান, বাঘটি ভীষণভাবে অসুস্থ হতে পারে, তাই হয়ত সে দুর্বল প্রাণীদের নিজের শিকার বানাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ঘুম পাড়ানি ইঞ্জেকশন দিয়ে বাঘটিকে ধরলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
আরও পড়ুন: ‘রয়্যাল বেঙ্গল রহস্য’ এ বার লালগড়ে!
পাশাপাশি বন দফতরের আরও অনুমান, দু’রকমের পায়ের ছাপ মিলেছে জঙ্গলে। তাই একটির বদলে একাধিক বাঘও থাকতে পারে। গ্রামবাসীদের তাই আরও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
এ দিন লালগড় দিকে দেখা যায়, জঙ্গলে বাঘের ছবি ধরা পড়ার পর থেকেই আতঙ্কিত গোটা এলাকা। জানলা-দরজা বন্ধ করেই বাড়ির ভিতরেই রয়েছেন গ্রামবাসী। খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউই বাইরে বেরোচ্ছেন না। যাঁদের বাইরে বেরোতে হচ্ছে কিছু না কিছু অস্ত্র তাঁরা সঙ্গে রাখছেন।
বন দফতরের ক্যামেরায় ধরা পড়া বাঘের ছবি।
কয়েক দিন ধরেই লালগড়ের গ্রামে পায়ের ছাপ, গরু-বাছুরের মৃত্যুতে রটে যায় যে এলাকায় বাঘ ঢুকেছে। প্রথমে বন দফতরের কর্তারা গ্রামবাসীদের কথায় বিশ্বাস করেননি। কিন্তু শুক্রবার জঙ্গলে লাগানো ৭টি ক্যামেরায় বাঘের ছবি ধরা পরে। ছবিতে স্পষ্ট দেখা যায়, ঝরা পাতার জঙ্গলে রাজকীয় ভঙ্গিমায় ঘুরে বেড়াচ্ছে একটি পূর্ণবয়স্ক বাঘ। প্রথম ছবি উঠেছে শুক্রবার ভোর ৪টে ২৮ মিনিটে, শেষটি সকাল সওয়া ছ’টায়।
এর পরই বন দফতর বাঘ ধরতে তৎপরতা শুরু করে দেয়। বাঘটিকে ধরা গেলে মতিগতি বুঝে ও দিল্লির অনুমতি নিয়ে তাকে বক্সায় পুনর্বাসন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বন দফতরের কর্তাদের।