পুলিশ-উকিলের চক্করে মামলার ফল পেতে পাঁচ-দশ বছর গড়িয়ে যাওয়াটা এ দেশে অতি স্বাভাবিক ব্যাপার! তারই মধ্যে গণধর্ষণের মতো ঘটনায় জামিন মামলাতেই মূল মামলার নিষ্পত্তি করে দিল হাইকোর্ট।
গণধর্ষণের একটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত তিন যুবক জামিনের আবেদন করেছিলেন কলকাতা হাইকোর্টে। সেই আর্জি শুনতে বসেই তাঁদের দু’জনকে বেকসুর খালাস দেয় বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ। মামলার মূল অভিযুক্তকে পুলিশ এখনও ধরতেই পারেনি।
আইজীবীদের একাংশ জানাচ্ছেন, নিম্ন আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরে হাইকোর্টে সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আপিল মামলা দায়ের করাই দস্তুর। দোষীরা তাঁদের আইনজীবীর মাধ্যমে আপিল মামলা দায়ের করেন এবং একই সঙ্গে জামিনের আবেদন জানিয়ে থাকেন। আপিল মামলার নিষ্পত্তি হতে পাঁচ-সাত বছর পেরিয়ে যায়। বিচারপতি বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চে জামিন মামলাতেই মূল মামলার নিষ্পত্তি হয়ে গিয়েছে।
এক কিশোরীকে গণধর্ষণের ঘটনায় ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ওই তিন যুবককে দশ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছিল কান্দি ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট। তিন জনেই উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন। ১২ জানুয়ারি সেই জামিন মামলার শুনানিতে ডিভিশন বেঞ্চ ইমতিয়াজ শেখ ও বাণী শেখ নামে দু’জনকে বেকসুর খালাস দিয়েছে। সাবের শেখ নামে এক জনের সাজা বহাল রেখেছে। তাঁকে নিম্ন আদালতে শনাক্ত করেছিল ওই কিশোরী।
মুর্শিদাবাদ পুলিশ জানায়, ওই কিশোরীর বাড়ি বহরমপুরের চোয়াপুরে। ১৯৯৬ সালের ২৫ জানুয়ারি পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কান্দির উদয়চাঁদপুরে এক আত্মীয়ের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে গিয়েছিল সে। মেয়েটির বাবার অভিযোগ, ফেরার পথে সন্ধ্যায় ঢলপুর গ্রামে চার জন তাঁদের পথ আটকায়। দু’জন তাঁদের
বন্দুক দেখিয়ে আটকে রাখে। অন্য দু’জন তাঁর মেয়েকে পরিত্যক্ত জায়গায় নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। যদিও কিশোরীর অভিযোগ, এক জনই তাকে ধর্ষণ করে। অন্য জন পাশে দাঁড়িয়ে ছিল।
কিশোরীর বাবার অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নেমে পুলিশ ইমতিয়াজ শেখ, বাণী শেখ, সাবের শেখ ও মাসুদ ওরফে ফরিদ শেখকে গ্রেফতার করে। পুলিশের দাবি, জেরা পর্বে ফরিদকে শনাক্ত করেছিল ওই কিশোরী। ১৯৯৭ সালে তদন্তকারীরা কান্দি আদালতে চার্জশিট দেন। বিচার শুরু হয়। জনা চারেক সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়ার পরে ফরিদ পালিয়ে যায়। এখনও সে পলাতক।
গত ১২ জানুয়ারি ধৃত তিন যুবকের জামিন মামলার শুনানিতে তাঁদের আইনজীবী কল্লোল মণ্ডল ও দীপ্তেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় আদালতে জানান, বিভিন্ন সাক্ষীর সাক্ষ্য থেকে জানা যায়, ওই কিশোরী চার জনকেই চিনত। কিন্তু এফআইআরে তাঁদের নাম বলেনি সে। প্রথমে কান্দি, পরে বহরমপুর হাসপাতালে মেডিক্যাল পরীক্ষার সময়েও সে কারও নাম জানায়নি। এমনকী জেলে টেস্ট আইডেন্টিফিকেশন (টিআই) বা শনাক্তকরণ প্যারেডে কিশোরী বা তার কাকারা অভিযুক্তদের চিহ্নিত করেননি। বন্দুক দেখিয়ে আটকে রাখার অভিযোগ ছিল। কিন্তু কোনও সাক্ষীই বন্দুকের উল্লেখ করেননি।