রিভলভার-সহ টিঙ্কু নেপালি।
হাতে ধরা একটি রিভলভার। অন্য রিভলভার কোমরে গোঁজা। হোটেলের লবিতে ‘বস’-এর মোবাইল ক্যামেরার সামনে পোজ় দিয়ে দাঁড়িয়ে মাজহার খান ওরফে টিঙ্কু নেপালি। ‘বস’ অর্থাৎ শামিম আহমেদ ওরফে বড়ে। প্রোমোটিংয়ের টাকার ভাগ নিয়ে গোলমালের জেরে সেই টিঙ্কুই এখন বড়ের প্রধান প্রতিপক্ষ। পুলিশের বক্তব্য, শুধু টিঙ্কুই নয়। একই কারণে বড়ের থেকে সরে গিয়েছিল তার এক সময়ের সঙ্গী কেবল ওয়াসিম, বাবলু, মোক্তারেরা। তারা গড়ে তুলেছিল পাল্টা বাহিনী। সেই বিরুদ্ধ গোষ্ঠীকে টক্কর দিতেই শুক্রবার পরিকল্পনা মাফিক কংগ্রেস নেতা জাভেদ কুরেশির বাড়িতে আক্রমণ চালায় বড়ের অ্যাকশন স্কোয়াড। পুলিশের ধারণা, খুন করা তাদের উদ্দেশ্য ছিল না। ভয় দেখিয়ে নিজের অস্তিত্ব জাহির করতেই ওই আক্রমণ চলে।
পুলিশ সূত্রে খবর, মালিককে হুমকি দিয়ে জমিতে প্রোমোটিং করা থেকে শুরু করে প্রোমোটারদের থেকে বর্গফুট পিছু টাকা আদায়— এ সব ক্ষেত্রে যাদের মোটা টাকার লোভ দেখিয়ে দলে টেনেছিল বড়ে, তাদেরই এক জন টিঙ্কু নেপালি। একটি জমি দখলের টাকার ভাগ দিতে না চাওয়ায় বড়ের সঙ্গে গোলমাল বাধে তার। তখনই বড়ের সঙ্গ ত্যাগ করে টিঙ্কু। একই ভাবে কাজ করিয়ে নিয়ে ভাগ না দেওয়ায় বড়েকে ছেড়ে যায় আজাদ খান নামে তার আর এক সঙ্গী। টাকার ভাগ নিয়েই মারধর করায় বড়ের দল ছাড়ে বাবলু ও কেবল ওয়াসিমও। স্থানীয় সূত্রে খবর, বড়ে বিরোধী গোষ্ঠী প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি জাভেদের বাড়ির সামনে ক্লাবও তৈরি করে।
পুলিশ জানায়, গত শুক্রবারের ঘটনায় বড়ের গোষ্ঠীর লোকজন ততটা প্রতিরোধ আশা করেনি। কিন্তু অভিযোগ, তাদের গুলি-বোমার জবাবে ক্লাব থেকে উড়ে আসে বোমা, গুলি, কাচের বোতল। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে টিঙ্কু এবং তার শাগরেদদের খোঁজ চলছে।
জাভেদ অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘আমার সঙ্গে কোনও দুষ্কৃতীর যোগ নেই। বড়ের অত্যাচারে অতিষ্ঠ মানুষজন আমার কাছে এলে আমি তাঁদের প্রশাসনের কাছে নিয়ে যেতাম। সেটাই আমার অপরাধ। তাই আমার পরিবারকে গুলি করে মারার চেষ্টা হল। অথচ পুলিশ এখন আমাকেই খুঁজছে।’’ ওই নেতা আরও অভিযোগ করেন, ২০১২ সালে তাঁর ছেলেকে কুপিয়ে খুনের চেষ্টা করা হয়। মহিন্দর নামে এক জনকে খুন করা হয়। স্থানীয় প্রোমোটার মোক্তার আহমেদের থেকে ২০ লক্ষ টাকা তোলা না পাওয়ায় তাঁকে সশস্ত্র আক্রমণ করা হয়। এমনকি, একটি বাড়ি দখল করে সেখানে বেআইনি ভাবে বানানো হয়েছিল চারতলা বাড়ি।
জাভেদের কথায়, ‘‘বড়ের বিরুদ্ধে ২২টি এফআইআর হয়েছে। কিন্তু শাসক গোষ্ঠীর ছত্রচ্ছায়ায় থাকায় তাকে ধরা হয়নি। এখন পুরো
ঘটনাটি সামনে আসায় বাধ্য হয়ে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে আমাকে খুঁজছে।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে ভারসাম্য রক্ষা করতে চাইছে।
হাওড়ার পুলিশ কমিশনার তন্ময় রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘যাদের নামে অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক রং না দেখে সকলকে গ্রেফতার করা হবে।’’