দুই জেলা আদালতের কিছু কর্মী শিশুপাচার চক্রে

ডাক্তার, নার্সিংহোমের মালিক, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার লোকজনের পরে এ বার আদালতের কয়েক জন কর্মী। শিশু পাচার তদন্তে দক্ষিণ ২৪ পরগনার আলিপুর ও উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত জেলা আদালতের ওই সব কর্মী এখন সিআইডি-র নজরদারিতে।

Advertisement

সুরবেক বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:৫৫
Share:

ডাক্তার, নার্সিংহোমের মালিক, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার লোকজনের পরে এ বার আদালতের কয়েক জন কর্মী। শিশু পাচার তদন্তে দক্ষিণ ২৪ পরগনার আলিপুর ও উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত জেলা আদালতের ওই সব কর্মী এখন সিআইডি-র নজরদারিতে। যে কোনও মুহূর্তে গ্রেফতার করা হতে পারে বলে গোয়েন্দা সূত্রের খবর।

Advertisement

তদন্তে জানা গিয়েছে, চুরি করা শিশুদের অধিকাংশ ক্ষেত্রে আইনি সিলমোহর দিয়েই বিক্রি করা হত। নিঃসন্তান দম্পতি কাগজে-কলমে দেখতেন, নিয়মকানুন মেনেই দত্তক নিয়েছেন। এমনকী, এই ব্যাপারে জেলা জজের নির্দেশও তাঁদের হাতে। শিশু পেতে তাড়াহুড়ো থাকায় কয়েক লক্ষ টাকা খরচ হচ্ছে, এ-ই যা!

সিআইডি-র এক কর্তার কথায়, ‘‘শিশুদের দত্তক দেওয়ার ব্যাপারে চক্রটি বহু বার জেলা জজের নির্দেশ পেয়ে গিয়েছিল। বারাসত ও আলিপুর জেলা জজের আদালত থেকেই ওই সব নির্দেশ বেরিয়েছে।’’ ওই তদন্তকারী অফিসার জানান, শিশুটির ব্যাপারে তথ্য, যাঁরা তাকে দত্তক নিচ্ছেন, তাঁদের পরিচয়— সব কিছু উল্লেখ করে কার্যত নিখুঁত ভাবে কাগজপত্র তৈরি করা হত। তার ভিত্তিতেই মিলত জেলা জজের নির্দেশ। ওই অফিসারের কথায়, ‘‘চক্রটির সঙ্গে ওই দুই আদালতের কয়েক জন কর্মীর যোগসাজস আমরা জানতে পেরেছি। মোটা কমিশনের বিনিময়ে তাঁরাই ওই সব ভুয়ো কাগজপত্র তৈরি

Advertisement

করে দিত।’’

ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হওয়াদের জেরা করে আদালতের ওই সব কর্মীর একাংশের নাম জেনেছে সিআইডি। তদন্তকারীরা এখন ওই সব সন্দেহভাজনের বিরুদ্ধে প্রমাণ সংগ্রহে ব্যস্ত।

ভারত সরকারের নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রকের ‘সেন্ট্রাল অ্যাডপশন রিসোর্স অথরিটি (কারা)’-র নির্দেশিকা মেনেই সাধারণত কোনও শিশুকে দত্তক নেওয়া হয়। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, কারা-র নির্দেশিকা অনুযায়ী, একটি শিশুকে দত্তক নেওয়া কিন্তু খুব সহজ নয়। যে দম্পতি দত্তক নেবেন, তাঁরা নিঃসন্তান এবং সন্তানের জন্ম দেওয়া তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়— এই মর্মে চিকিৎসকের সার্টিফিকেট ও হলফনামা পেশ করতে হয়। তাঁদের দাম্পত্য জীবন কত দিনের, সন্তান পেতে তাঁরা কতটা উদ্যোগী ছিলেন, ওই দম্পতিকে কাগজপত্র দাখিল করে তারও প্রমাণ দিতে হয়।

সিআইডি জানাচ্ছে, কারা-র নির্দেশিকাকে পাশ কাটিয়ে যে ভাবে চক্রটি মোটা টাকা নিয়ে নিঃসন্তান দম্পতিদের জেলা জজের নির্দেশ-সহ দত্তক পাইয়ে দিত, সেটা বিস্ময়কর। গোয়েন্দাদের একাংশের ধারণা, এ ক্ষেত্রে ১৯৫৬ সালের দ্য হিন্দু অ্যাডপশনস অ্যান্ড মেনটেন্যান্স অ্যাক্ট (হামা)-এর আশ্রয় বহু ক্ষেত্রেই নিয়েছে চক্রটি। যেখানে ভুয়ো জন্মদাত্রী হিসেবে এক জনকে আদালতে খাড়া করে বলানো হত, বিধবা বা স্বামী-বিচ্ছিন্না হিসেবে তিনি শিশুটির প্রতিপালনে অক্ষম এবং সেই জন্য সন্তানকে স্বেচ্ছায় দত্তক দিতে চান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন