কিছু দিন কাছে না-থাকলেও তাদের মা আছেন। আবার পালক মা-বাবাও আছেন। এক সরকারি নির্দেশে বিষম টানাটানিতে পড়েছে দু’টি শিশু।
মোটা টাকা দিয়ে বছর দুয়েক আগে শিশু দু’টিকে দত্তক নিয়েছিলেন দুই দম্পতি। দত্তক নেওয়া হয়েছিল উত্তর ২৪ পরগনার সরকার স্বীকৃত ‘স্পেশ্যাল অ্যাডপশন এজেন্সি’ বা সা-র অধীন ‘স্পেক’ নামে এক হোম থেকে। কিন্তু সম্প্রতি সরকা ওই দুই দম্পতিকে জানিয়েছে, শিশু দু’টিকে বেআইনি ভাবে দত্তক নেওয়া হয়েছিল। কারণ, দু’টি শিশুরই মা রয়েছেন। এত দিন পরে এমন নির্দেশিকা পেয়ে চূড়ান্ত অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছেন ওই দুই দম্পতি।
উত্তর ২৪ পরগনার শিশু কল্যাণ সমিতি সূত্রের খবর, ২০১২ সালে রাজারহাট থেকে উদ্ধার করে শিশু দু’টিকে হোমে রাখার নির্দেশ দিয়েছিল ওই সমিতিই। তারা ‘ফ্রি ফর অ্যাডপশন’ অর্থাৎ দত্তকের জন্য ছাড়পত্রের আওতায় আসতে পারে না। কারণ, শিশু দু’টি আদতে ভাইবোন এবং তাদের মা আছেন।
সমিতি জানায়, ২০১২ সালের জুলাইয়ে পুলিশ শিশু দু’টিকে তাদের কাছে নিয়ে আসে। কারণ, দিদিমার কাছে রেখে কাজের জন্য উত্তরপ্রদেশে গিয়েছিলেন তাদের মা। সেখানে বিয়ে করলেও মাঝেমধ্যেই আসতেন সন্তানদের দেখতে। দিদিমা নাতনিকে মারধর করায় পড়শিরা পুলিশে খবর দেন। গ্রেফতার করা হয় দিদিমাকে। দেখভালের কেউ না-থাকায় সমিতি নির্দেশ দেয়, মা না-আসা পর্যন্ত চার বছরের মেয়ে এবং দু’বছরের ছেলেটি হোমে থাকবে। খবর পেয়ে শিশু কল্যাণ সমিতির কাছে গিয়ে সন্তান ফেরত চান মা। কিন্তু পরিচয়পত্র দেখাতে না-পারায় তাঁর হাতে সন্তানদের দেওয়া হয়নি।
সমিতি মেয়ের সামনে মাকে হাজির করিয়ে দেখতে চেয়েছিল, সে চিনতে পারছে কি না। কিন্তু নির্দেশ সত্ত্বেও হোম বাচ্চা দু’টিকে সমিতির সামনে আনেনি। হোমের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে সমিতি। তদন্তে দেখা যায়, ওই হোম বহু বাচ্চাকে বেচে দিয়েছে। হোমের লাইসেন্স বাতিল করে দেয় শিশু ও সমাজ কল্যাণ দফতর। বন্ধ হয়ে যায় হোমটি। বিভিন্ন নার্সিংহোম থেকে শিশু বিক্রির ঘটনা সামনে আসার পরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার একটি অ্যাডপশন এজেন্সির মালিকের বিরুদ্ধে শিশু বেচে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই প্রেক্ষিতে শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতরের একাংশ মনে করছেন, স্পেক হোমে ফের তদন্ত করলে নতুন তথ্য বেরোতে পারে। কারণ, ২০১৪ সালে স্পেকের লাইসেন্স বাতিল হলেও শিশু বিক্রির অভিযোগের কোনও তদন্ত হয়নি।