একটি অভিযোগ দায়ের হয়েছিল কলকাতায়। অন্যটি বিধাননগরে।
এই বছরের ৩ জানুয়ারি, যে দিন রোজ ভ্যালি মামলায় তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন, সে দিন সন্ধ্যায় বিধাননগর উত্তর থানায় জেনারেল ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন সাংসদের স্ত্রী, বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যটি সুদীপের ঘনিষ্ঠ এক জন করেছিলেন কলকাতা পুলিশের আনন্দপুর থানায়।
দু’টি ক্ষেত্রেই অভিযোগ ছিল, সুদীপকে বেআইনি ভাবে প্রেফতার করা হয়েছে। সুদীপ যে কতটা প্রভাবশালী, তা প্রমাণ করার জন্য এখন ওই দু’টি জিডি-কেই হাতিয়ার করতে চাইছে সিবিআই। গত সোমবার ভুবনেশ্বর আদালতে সুদীপের জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করার সময়ে সিবিআইয়ের প্রধান আইনজীবী কে রাঘোচারিলু ওই দু’টি জিডি-র কথা উল্লেখ করেছেন। সিবিআইয়ের অভিযোগ, বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও কলকাতা ও রাজ্য পুলিশ ওই জিডি-র কপি তাদের দিচ্ছে না।
সিবিআইয়ের দাবি, এর আগে বিভিন্ন মামলায় বহু প্রভাবশালী লোক গ্রেফতার হয়েছেন। কিন্তু, গ্রেফতারের পরই ‘কেন গ্রেফতার করা হল’— এই প্রশ্ন তুলে সিবিআইয়ের নামে থানায় ডায়েরি করার নজির নেই।
এতেই বোঝা যায়, সুদীপ কতটা প্রভাবশালী। আদালতে পেশ করার জন্যই ওই দুই জিডি-র কপি হাতে পেতে চায় সিবিআই।
নয়নাকে ফোনে ধরা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমার স্বামী এই বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন যে, সিবিআই তাঁকে কিছু বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য দেখা করতে বলেছে। পরে শুনলাম সুদীপকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে ভুবনেশ্বরে নিয়ে যাওয়া হবে। আমাকে কেউ কিছু বলতে পারছিল না। সেই কারণেই পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছিলাম, যদি পুলিশ আমাকে কিছু বলতে পারে।’’
কলকাতা ও রাজ্য পুলিশ কর্তাদের দাবি, জিডি যে কেউ যে কোনও সময়ে করতে পারে। পুলিশ যদি সেই অভিযোগের কোনও সারবত্তা পায় তবেই মামলা শুরু করে। এই দু’টি ক্ষেত্রে দু’জন দু’টি থানায় গিয়ে তাঁদের ব্যক্তিগত বক্তব্য নথিভুক্ত করেন। পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘যদিও ওই জিডি-র পরে পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। তার প্রয়োজনও বোধ করেনি।’’ ফলে, চার মাস পরে আচমকা কেন ওই দু’টি জিডি-কে এত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন পুলিশ কর্তারা। এমনকী, রাজ্য ও কলকাতা পুলিশের কর্তাদের দাবি— সিবিআই ওই দু’টি জিডি-র কপি চেয়ে পাঠিয়েছে বলেও তাঁদের জানা নেই।