ম্যানেজিং ডিরেক্টর এপ্রিলে গ্রেফতার হলেও বেআইনি অর্থ লগ্নি গোষ্ঠী আইকোর-এর বিভিন্ন ডিরেক্টর পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশের অভিযোগ। সেই ডিরেক্টরদের মধ্যে দু’জন ধরা পডড়ে গেলেন খাস কলকাতাতেই। প্রতারণার অভিযোগে সোমবার দুপুরে আলিপুরে তাঁদের গ্রেফতার করে সিআইডি। গত মাসেই গল্ফ গ্রিন থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে ওই গোষ্ঠীর এমডি অনুকূল মাইতিকে।
সিআইডি সূত্রের খবর, এ দিন আইকোরের যে-দু’জন ডিরেক্টরকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁদের নাম স্বপনকুমার রায় এবং কবীর হোসেন। দু’জনেই ওই অর্থ লগ্নি গোষ্ঠীর অধীন চারটি সংস্থার ডিরেক্টর ছিলেন। আজ, মঙ্গলবার তাঁদের ব্যারাকপুর আদালতে তোলা হবে। গোয়েন্দারা জানান, পত্তনের সময় থেকেই কবীর ছিলেন ওই গোষ্ঠীর এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর। এমডি অনুকূলের পরেই ছিল তাঁর স্থান। স্বপনও ওই গোষ্ঠীর প্রভাবশালী ব্যক্তি। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সিবিআই এবং এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি পশ্চিমবঙ্গ এবং অন্যান্য রাজ্যে বেআইনি লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করার পরে আইকোরের বিরুদ্ধে তদন্তে নামে রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সিআইডি। তার পর থেকেই ওই গোষ্ঠীর অন্য ডিরেক্টরদের মতো স্বপন-কবীরও পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন বলে গোয়েন্দারা জানান।
আইকোর গোষ্ঠীর অধীনে মোট ১৯টি সংস্থা রয়েছে। সব ক’টিরই এমডি অনুকূল। সিআইডি সূত্রের খবর, আইকোর গোষ্ঠীতে মোট ডিরেক্টরের সংখ্যা ১২। তাঁদের মধ্যে এমডি অনুকূলের স্ত্রীও রয়েছেন। সিকিওরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া বা সেবি-সহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সংস্থা এ রাজ্যের বেআইনি লগ্নি সংস্থাগুলির ব্যাপারে দীর্ঘদিন ধরেই পুলিশ-প্রশাসনকে সতর্ক করে আসছিল। সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার পরে অন্য লগ্নি সংস্থাগুলির ব্যাপারে নড়েচড়ে বসে সিআইডি-ও। গোয়েন্দাদের অভিযোগ, শুধু আইকোর নয়, ওই গোষ্ঠীর অধীনে আরও ১৯টি সংস্থা সেবির অনুমতি ছাড়াই ২০১০ সাল থেকে মাল্টি ইনভেস্টমেন্ট সিস্টেম, ডিবেঞ্চার, ফিক্সড ডিপোজিট ইত্যাদির মাধ্যমে আমানতকারীদের কাছ থেকে তিন হাজার কোটি টাকা তুলেছিল।
গত জুনে এক আমানতকারী বেলঘরিয়া থানায় আইকোরের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ করেন। নভেম্বরে সেই অভিযোগের তদন্তে নামে সিআইডি। তদন্তে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, প্রতারণা করে ওই ব্যক্তির মোট ১০ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছে আইকোরের সংস্থা ই-সার্ভিস।
আইকোরের দুই ডিরেক্টরের গ্রেফতারির দিনেই জেল-হাজতে পাঠানো হল সারদা কাণ্ডে ধৃত শিবনারায়ণ দাসকে। তিনি সিলিকন নামে একটি লগ্নি সংস্থার মালিক। সিলিকন তৈরির আগে তিনি সারদা গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ। তদন্তকারীদের সূত্রের খবর, সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেনও লগ্নি-ব্যবসায় পথপ্রদর্শক হিসেবে শিবনারায়ণের নাম করেছিলেন সিবিআইয়ের কাছে। শিবনারায়ণকে এ দিন আলিপুরের অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের (এসিজেএম) আদালতে হাজির করানো হয়। সিবিআইয়ের আইনজীবী পার্থসারথি দত্ত আদালতে জানান, অভিযুক্ত লগ্নি-কর্তা জামিনের জন্য জেলা ও দায়রা আদালতে আর্জি জানিয়েছেন। ১৬ মে সেই আর্জির শুনানি হওয়ার কথা। এ দিন শিবনারায়ণের হয়ে কোনও আইনজীবী হাজির ছিলেন না। এসিজেএম হারাধন মুখোপাধ্যায় ওই অভিযুক্তকে ১৮ মে পর্যন্ত জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেন।