লাইনের এই অংশেই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হল দুই যুবকের। রবিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে শিয়ালদহ দক্ষিণের ক্যানিং শাখার পিয়ালি স্টেশনের কাছে।
রেল পুলিশ সূত্রে খবর, মৃতদের নাম প্রতীক মণ্ডল (১৮) ও প্রকাশ মণ্ডল (২১)। প্রতীকের বাড়ি পিয়ালির খোলাকাটার কাছে। প্রকাশের বাড়ি পিয়ালির কলোনিপাড়ায়।
রেল পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই রাতে এলাকার পুজোর প্রতিমা নিরঞ্জন ছিল। সেই উপলক্ষে প্রতীক ও প্রকাশ তাঁদের এক বন্ধুর সঙ্গে বেরিয়েছিলেন। তদন্তকারীদের দাবি, প্রত্যক্ষদর্শীরা তাঁদের জানিয়েছেন, পিয়ালি স্টেশনের কিছুটা দূরেই সেতুর কাছে রেললাইনের ধারে বসে মদ্যপান করছিলেন ওই যুবকেরা। মত্ত অবস্থায় থাকার কারণেই তাঁরা ট্রেনের হর্ন বা আওয়াজ শুনতে পাননি বলে মনে করা হচ্ছে। তদন্তকারীরা জানান, রাত ৯টা নাগাদ ডাউন ক্যানিং লোকালের ধাক্কায় ছিটকে পড়েন প্রতীক ও প্রকাশ। ওই ট্রেনের চালকও ‘নক ডাউন’ রিপোর্ট দিয়েছেন বলে রেল সূত্রের খবর।
রেল পুলিশের কর্তাদের কথায়, ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় প্রতীকের। রেললাইনের পাশ থেকে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। গুরুতর জখম অবস্থায় প্রকাশকে প্রথমে বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরে তাঁকে ইএম বাইপাস সংলগ্ন একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গভীর রাতে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয় বলে পুলিশ সূত্রের খবর। তদন্তকারীরা জানান, শুধু প্রকাশ ও প্রতীক নয়, প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, ওই সময়ে তিন জনকে দেখা গিয়েছিল রেললাইনে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেই তৃতীয় ব্যক্তির খোঁজ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। রেল পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার রাত পর্যন্ত মৃতদের কারও পরিবারের তরফে অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। দু’টি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। প্রতীক চম্পাহাটির সুশীল কর কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তাঁর এক আত্মীয় বলেন, ‘‘প্রতীক ওই দিন ১০০ দিনের কাজ করে বিকেলে বন্ধুদের সঙ্গে বেরিয়েছিল। পরে দুর্ঘটনার খবর আসে।’’ প্রকাশের এক আত্মীয় বলেন, ‘‘এলাকায় প্রতিমা নিরঞ্জন রয়েছে বলেই বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল প্রকাশ। ওরা বন্ধুরা মিলে এক সঙ্গেই বাড়ি থেকে বেরোয়। কিছু ক্ষণ পরেই প্রকাশ ও প্রতীক ট্রেনের ধাক্কায় মারা গিয়েছে বলে খবর আসে। কিন্তু ওদের আর এক বন্ধু আমাদের পরিচিত নয়। ঘটনার পরে তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলেই শুনেছি।’’
আরপিএফ-এর তরফেও এই ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে। আরপিএফ-এর তদন্তকারীরা এ দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এলাকার বাসিন্দাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সেই রাতে তিন জন কী অবস্থায় ছিলেন, তা জানার চেষ্টা করেন আরপিএফ-এর অফিসারেরা। রাত ৯টার পর থেকেই রেললাইনের উপরে নজরদারির দায়িত্বে থাকেন আরপিএফ কর্মীরা। তবে ওই এলাকায় রেললাইনের উপরে কেউই সাধারণত বসেন না বলে জানিয়েছেন স্থানীয়েরা। এলাকায় প্রতিমা নিরঞ্জন উপলক্ষে ভিড় ছিল বলেই ওই তিন যুবক মদ্যপানের জন্য রেললাইনের মতো নির্জন এলাকা বেছে নিয়েছিলেন বলে দাবি রেল পুলিশের তদন্তকারী অফিসারদের। রেল পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘মৃতদের পরিজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ওই তৃতীয় ব্যক্তির খোঁজ করা হচ্ছে।’’