লাভ হচ্ছে না একেবারেই, রাজ্য ছাড়ছে দোতলা ট্রেন

অনেক চেষ্টাতেও বঙ্গের রেলপথে বাতানুকূল দোতলা ট্রেন আর চালানো গেল না। হাওড়া স্টেশনে পড়ে থেকে থেকে কার্যত নষ্ট হচ্ছে ওই যন্ত্রদানব। তাই এ বার সেটিকে ভিন্‌ রাজ্যে পাঠাতে রেল বোর্ডের কাছে প্রস্তাব দিলেন পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

দেবজিৎ ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৭ ১২:৩০
Share:

হোঁচট: যাত্রা শুরু বছর ছয়েক আগে। বিস্তর টানাপড়েনের পর আপাতত হাও়ড়া স্টেশনেই থমকে হাওড়া-ধানবাদ দোতলা এক্সপ্রেস। —ফাইল চিত্র।

অনেক চেষ্টাতেও বঙ্গের রেলপথে বাতানুকূল দোতলা ট্রেন আর চালানো গেল না। হাওড়া স্টেশনে পড়ে থেকে থেকে কার্যত নষ্ট হচ্ছে ওই যন্ত্রদানব। তাই এ বার সেটিকে ভিন্‌ রাজ্যে পাঠাতে রেল বোর্ডের কাছে প্রস্তাব দিলেন পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহামাত্র বলেন, ‘‘দু’-দু’বার চেষ্টা করেও দোতলা ট্রেনটিকে লাভজনক করা যায়নি। সেই জন্যই আমরা সেটিকে অন্য জোনে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছি।’’ এখন দিল্লি-জয়পুর এবং ইনদওর-ভোপাল রুটে দোতলা ট্রেন চালানো হচ্ছে। হাওড়া স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনটিকে যদি এই ধরনেরই কোনও রুটে চালানো যায়, তা হলে কিছুটা হলেও ক্ষতি কমতে পারে, বলছেন রেলকর্তারা।

দেশের মধ্যে প্রথম এই বাতানুকূল দোতলা ট্রেনের যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১১ সালের ১ অক্টোবর, হাওড়া থেকে ধানবাদ পর্যন্ত। কিন্তু গোড়া থেকেই হোঁচট খেতে শুরু করে সেটি। রেলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, প্রথমত যে-গতিতে ট্রেনটি চালানোর কথা ছিল, তা নিয়ে ঘোরতর আপত্তি তোলেন রেলেরই সেফটি কমিশনার। ফলে প্রথম দিন থেকেই ট্রেনের গতি ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার থেকে ১০০-য় নামিয়ে আনে পূর্ব রেল। কিন্তু তাতেও সমস্যা মেটেনি। পরীক্ষামূলক ভাবে ওই রুটে ট্রেনটি চালাতে গিয়ে দেখা যায়, শহরতলির প্ল্যাটফর্মে ঘষা খাচ্ছে বগিগুলো। কেন? রেলকর্তারা জানাচ্ছেন, দোতলা ট্রেনের কামরাগুলো অন্যান্য ট্রেনের তুলনায় বেশি চওড়া হওয়ায় ঘষা খাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। মুশকিল আসানের জন্য অধিকাংশ প্ল্যাটফর্ম কিছুটা ছেঁটে ফেলে পূর্ব রেল।

Advertisement

তাতেও বিপত্তি পিছু ছাড়েনি রেলের। এসি দোতলা ট্রেন চলতে শুরু করলেও টিকিট বিক্রি নিয়ে নাজেহাল হতে হয় রেলকর্তাদের। তাঁরা ভেবেছিলেন, মাত্র সওয়া চার ঘণ্টায় হাওড়া থেকে ধানবাদে পৌঁছনোর সুযোগ থাকায় ওই ট্রেনে ভিড় উপচে পড়বে। কিন্তু হল ঠিক তার উল্টো। পূর্ব রেল দিনের এমন সময়ে ওই ট্রেন চালাল যে, মাসের পর মাস ১৫-২০ শতাংশের বেশি আসনে যাত্রী মিলল না। রেলকর্তারা জানান, দোতলার ছাদে মাথা ঠেকে যাচ্ছে, একতলা ধুলোয় মাখামাখি— এই ধরনের কিছু কারণ দেখিয়ে যাত্রীরা মুখ ফিরিয়ে নেন।

অগত্যা ২০১৪-র ডিসেম্বরে দোতলা ট্রেনটিকে পাকাপাকি ভাবে বসিয়ে দেওয়া হয়। তার পরেও অবশ্য এক বার নতুন করে অক্সিজেন জুগিয়ে ট্রেনটিকে চালানোর চেষ্টা করেছিল পূর্ব রেল। ২০১৬-র নভেম্বরে ‘স্পেশ্যাল ট্রেন’ তকমা নিয়ে হাওড়া থেকে ধানবাদ পর্যন্ত কিছু দিন চললেও অবশেষে পুরোপুরি ভেন্টিলেশনে চলে যায় সেটি।

বাতানুকূল না-হলেও তার আগে, নব্বইয়ের দশকে আসানসোল-ধানবাদ রুটেই ব্ল্যাক ডায়মন্ড এক্সপ্রেসের কয়েকটি কামরাকে দোতলায় রূপান্তরিত করেছিল পূর্ব রেল। তখনও স্টেশনে ট্রেন ঢুকলে একতলার যাত্রীদের কার্যত নাক ঠেকে যেত প্ল্যাটফর্মে, ধুলোয় সামনের আসনের লোককেও দেখা যেত না। এমনই কিছু কারিগরি ত্রুটির কারণে সেই সব কামরাও এক সময় বাতিল করে দিতে বাধ্য হয় পূর্ব রেল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন