Summer Camp

ছুটিতে গাছতলায় খেলাচ্ছলেই পড়া

খেলাচ্ছলে পড়ার অভ্যাস বজায় রেখেছেন পুরুলিয়ার নিতুড়িয়ার বিন্দুইডি প্রাথমিক স্কুলের দুই শিক্ষক। গত এক সপ্তাহ ধরে ‘সামার ক্যাম্পে’ পড়ার পাশাপাশি ছবি আঁকা, আবৃত্তিও শিখছে খুদে পড়ুয়ারা।

Advertisement

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

নিতুড়িয়া শেষ আপডেট: ১১ মে ২০২৩ ০৮:১৫
Share:

গাছতলার সামার ক্যাম্পে খুদে পড়ুয়ারা। ছবি: সঙ্গীত নাগ।

করোনাকালে টানা স্কুল বন্ধের ক্ষত এখনও ভরেনি। উঁচু ক্লাসে উঠলেও কারও কারও অক্ষরজ্ঞান ভাল ভাবে হয়নি। আগাম গরমের ছুটিতে তাই ‘সামার ক্যাম্প’ চালু করে পিছিয়ে পড়া পড়ুয়াদের খেলাচ্ছলে পড়ার অভ্যাস বজায় রেখেছেন পুরুলিয়ার নিতুড়িয়ার বিন্দুইডি প্রাথমিক স্কুলের দুই শিক্ষক। গত এক সপ্তাহ ধরে ‘সামার ক্যাম্পে’ পড়ার পাশাপাশি ছবি আঁকা, আবৃত্তিও শিখছে খুদে পড়ুয়ারা।

Advertisement

বিন্দুইডি ও ইনানপুর গ্রামের বহু দিনমজুর পরিবারের ছেলেমেয়ে এই প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়া। সন্তানদের বাড়িতে পড়ানোর বাস্তবতা বাবা-মায়েদের বিশেষ নেই। অনেক অভিভাবকই জানিয়েছিলেন, লম্বা ছুটিতে ছেলেমেয়েরা ফের পড়া ভুলে যাবে। তাঁরা শিক্ষকদের পড়াতে অনুরোধ করেছিলেন।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক সৌমেন্দ্রনাথ মণ্ডল ও সহশিক্ষক বিনয়কৃষ্ণ মাজি জানালেন, করোনার জন্য দু’বছর স্কুল বন্ধ থাকায় বাড়িতে ওই শিশুদের কার্যত পড়াশোনাই হয়নি। তখন যাঁরা শিশুশ্রেণি বা প্রথম শ্রেণিতে পড়ত, তারা বর্ণপরিচয়টুকু শেখেনি। দুই শিক্ষকের কথায়, ‘‘করোনার শেষ পর্বে আমরা পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে পড়িয়েছি। কিন্তু তাতে তো পুরোদস্তুর স্কুলের পড়া সম্ভব নয়। এখন পড়াতে গিয়ে দেখছি, ভাল ভাবে রিডিং পড়তে পারছে না অনেকে। ছুটিতে শেখা জিনিসও চর্চার অভাবে যদি ওরা ভুলে যায়, তাই অভিভাবকদের অনুরোধে ‘সামার ক্যাম্প’ করছি।’’

Advertisement

দুই শিক্ষিকা দূরে থাকেন। তবে দু’কিলোমিটার দূরে বড়তোড়িয়া গ্রাম থেকে সপ্তাহে পাঁচ দিন যাতায়াত করছেন দুই শিক্ষক। প্রধান শিক্ষক বাড়ি থেকে কাঁধে ঝুলিয়ে নিজের হোয়াইট বোর্ড আনছেন। গ্রামের জাহির থান, আমবাগান, কারও বাড়ির উঠোন বা খামার— ছায়াঘেরা জায়গা পেলেই তাঁরা জনা পঞ্চাশ পড়ুয়াকে নিয়ে বসে পড়ছেন। সকাল সাড়ে ছ’টা থেকে দু’ঘণ্টা চলছে পড়াশোনা।

স্বস্তি পেয়েছেন অভিভাবক ঝুমা দাস, ছবিবালা আচার্য, সরমা বাউড়িরা। তাঁরা বলেন, ‘‘করোনার সময়েই দেখেছিলাম স্কুল বন্ধ থাকলে ছেলেমেয়েগুলো বইমুখো হয় না। গরমের ছুটিতেও তাই হত। পেট চালাতে গিয়ে আমারাও পড়াতে পারি না। গৃহশিক্ষক রেখে পড়ানোর সাধ্য নেই। স্কুলের শিক্ষকেরা পড়ানোয় নিশ্চিন্ত হয়েছি।’’

এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে এবিটিএ-এর জেলা সম্পাদক নিলয় মুখেোপাধ্যায় বলেন,”অকাল গরমের ছুটি শিক্ষক, অভিভাবকেরা চাননি। ওই দুই শিক্ষকের প্রয়াস অভিনন্দন যোগ্য।” আর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি তথা তৃণমূল বিধায়ক রাজীবলোচন সরেনের বক্তব্য, ‘‘ঘটনাটি জানা নেই। তবে যদি কোনও শিক্ষক পড়ুয়াদের পড়াতে নিজেই এগিয়ে আসেন, তা অবশ্যই ভাল উদ্যোগ।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন