রাজনৈতিক ভাবে তৃণমূল কংগ্রেসকে জমি ছাড়তে নারাজ হলেও প্রশাসনিক স্তরে নরেন্দ্র মোদী সরকার যে যুক্তরাষ্ট্রীয় ধর্ম মেনে রাজ্যকে সহযোগিতা করবে, আজ তা ফের স্পষ্ট করে দিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। আজ পশ্চিমবঙ্গের কিছু প্রকল্পে কেন্দ্রীয় অনুদান বৃদ্ধির দাবি নিয়ে কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রী উমা ভারতীর সঙ্গে দেখা করেন রাজ্যের জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তখনই তাঁকে সরকারের ওই মনোভাবের কথা জানিয়ে দেন উমা। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দাবি, রাজ্যের সমস্যা, বিশেষ করে আর্থিক সমস্যা মেটাতে ইতিবাচক পদক্ষেপ করবে মোদী সরকার।
ইউপিএ জমানাতেও ওই সব দাবি নিয়ে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় জলসম্পদমন্ত্রী হরিশ রাওয়াতের সঙ্গে একাধিক বার বৈঠক করেন রাজীব। তখন হরিশ রাজ্যকে বাড়তি অর্থ দিতে রাজি হলেও বাদ সেধেছিলেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। উমা আজ বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ যে দাবি জানিয়েছে, তা নিয়ে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির কথা বলব। ইউপিএ আমলে বিরোধী দল শাসিত রাজ্যগুলি যে ভাবে বঞ্চনার শিকার হয়েছে, মোদীর জমানায় সেটি হবে না।”
আজ রাজীবের মূল দাবিটি ছিল, বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পগুলিতে কেন্দ্রীয় অনুদানের পরিমাণ বাড়িয়ে ৭৫ শতাংশ করা হোক। দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের শেষ পর্বে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান বা গঙ্গার ভাঙন রোধের মতো প্রকল্পে কেন্দ্রীয় অনুদানের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া হয়। রাজীববাবুর দাবি, “শুরুতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনায় কেন্দ্র ও রাজ্যের টাকা খরচের অনুপাত ছিল ৭৫:২৫। কিন্তু আগের সরকারের শেষ পর্বে কেন্দ্রীয় অনুদান কমিয়ে দেওয়া হয়। কেন্দ্র জানায়, ওই ধরনের প্রকল্পের অর্ধেক আর্থিক দায়ভার নিতে হবে রাজ্যকে।” আর্থিক ভাবে দুর্বল রাজ্যের পক্ষে ওই বাড়তি দায় নেওয়া সম্ভব ছিল না বলে প্রথম থেকেই তার প্রতিবাদ করেছিল পশ্চিমবঙ্গ। উমা আশ্বাস দিয়েছেন, এই দাবি পূরণের চেষ্টা করবেন তিনি।
গঙ্গা-পদ্মা ভাঙন নিয়েও এ দিন আলোচনা করেন দুই মন্ত্রী। রাজ্যের বক্তব্য, মালদহের মানিকচক থেকে মুর্শিদাবাদের নাড়ুখাকি এই ১২০ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙনের ধাক্কা থেকে বাদ পড়েনি বিএসএফের দফতরও। ফলে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত অরক্ষিত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। রাজীবের দাবি, দেশের নিরাপত্তার স্বার্থেই সমস্যাটি গুরুত্ব দিয়ে বিচার করুক কেন্দ্র। এ ছাড়া পশ্চিমবঙ্গকে ব্রহ্মপুত্র নদী বোর্ডের স্থায়ী সদস্য করার দাবিও করেছে রাজ্য। জলসম্পদ মন্ত্রক জানিয়েছে, রাজ্যের এই দাবি নিয়ে কেন্দ্রের নীতিগত কোনও আপত্তি নেই।
এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত হবে।
বৈঠকে রাজীববাবু কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে জানান, রাজ্য তিস্তার ভাঙন রোধে বরাদ্দ অর্থ পায়নি। বিষয়টি জানার পরেই কেন্দ্রীয় জলসম্পদ সচিব অলোক রাওয়াতকে আজই রাজ্যের সেচ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসার নির্দেশ দেন উমা। জয়ন্তী নদীর নাব্যতা সমস্যা মেটাতে অবিলম্বে কেন্দ্র-ভুটান আলোচনার দাবিও জানান রাজীব। উমার আশ্বাস, তিনি দ্রুত বিষয়টি নিয়ে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে কথা বলবেন।
সব মিলিয়ে বৈঠক কতটা সফল? কেন্দ্রের কাছে বাড়তি অর্থের আশ্বাস পেলেও রাজীববাবুর মন্তব্য, “প্রতিশ্রুতি আগেও অনেক পেয়েছি। না আঁচালে বিশ্বাস নেই!”