সমঝোতায় জট, শেষ চেষ্টায় সীতা-সোমেন-সূর্য

সিপিএমের গত বারের জেতা আসনের দিক থেকে নজর সরাচ্ছে না কংগ্রেস। তাই প্রাথমিক অগ্রগতির পরেও আপাতত বেশ কয়েক বাঁও জলে বাম-কংগ্রেস আসন সমঝোতার ভবিষ্যৎ!

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:৫৪
Share:

সীতারাম ইয়েচুরি, সোমেন মিত্র, সূর্যকান্ত মিশ্র। ফাইল চিত্র।

সিপিএমের গত বারের জেতা আসনের দিক থেকে নজর সরাচ্ছে না কংগ্রেস। তাই প্রাথমিক অগ্রগতির পরেও আপাতত বেশ কয়েক বাঁও জলে বাম-কংগ্রেস আসন সমঝোতার ভবিষ্যৎ! জট ছাড়াতে শেষ চেষ্টায় নেমেছেন সীতারাম ইয়েচুরি, সোমেন মিত্র, সূর্যকান্ত মিশ্রেরা। একই সঙ্গে দু’পক্ষই প্রস্তুতি রাখছে, অপর পক্ষ অনড় থাকলে আলাদাই লড়াই হবে।

Advertisement

রাজ্যে তৃণমূল ও বিজেপির মোকাবিলায় সিপিএম যে তাদের পুরনো সব আসনে লড়বে না, তা স্পষ্ট করেছেন সূর্যবাবুরা। কিন্তু সিপিএমের হাতে থাকা দুই আসন রায়গঞ্জ ও মুর্শিদাবাদে প্রার্থী দেওয়ার দাবি থেকে সরতে চাইছেন না দুই জেলার কংগ্রেস নেতৃত্ব। সিপিএম সূত্রের খবর, দলের সাধারণ সম্পাদক ইয়েচুরি ও রাজ্য সম্পাদক সূর্যবাবু আলাদা করে কথা বলেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেনবাবুর সঙ্গে। আলিমুদ্দিনে আজ, সোমবার চার বাম দলের বৈঠকে কী ঠিক হয়, তা দেখে নিয়ে বাম ও কংগ্রেস নেতৃত্বের মুখোমুখি আলোচনা হবে বলেও ঠিক হয়ে রয়েছে। কিন্তু সেই বৈঠকে যাওয়ার আগে কংগ্রেস তার ঘরের সমস্যা মেটাতে পারেনি।

কংগ্রেস সূত্রের খবর, দলের অন্যতম কার্যকরী সভাপতি দীপা দাশমুন্সি প্রদেশ নেতৃত্বকে জানিয়ে দিয়েছেন, রায়গঞ্জ আসন না দেওয়া হলে তিনি উত্তর মালদহ বা অন্য কোথাও প্রার্থী হতে আগ্রহী নন। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী বলেছিলেন, এআইসিসি-র পর্যবেক্ষক গৌরব গগৈ ও প্রদেশ নেতৃত্ব মিলে যা সিদ্ধান্ত নেবেন, তা-ই হাইকম্যান্ড মানবে। কিন্তু প্রদেশ নেতৃত্বের পক্ষে জট যে কাটানো সম্ভব হচ্ছে না, সেটা জানিয়ে এআইসিসি-র পরামর্শ চাইছেন সোমেনবাবুরা। প্রদেশ সভাপতির ঘনিষ্ঠ এক নেতার বক্তব্য, ‘‘কেউ কিছু ছাড়বে না! সিপিএমের সমর্থনে জিতে যিনি বিরোধী দলনেতা হয়েছেন, সেই আব্দুল মান্নানও সমঝোতা-বিরোধী মনোভাব স্পষ্ট কর দিচ্ছেন। শুধু প্রদীপ ভট্টাচার্য ছাড়া সকলকে নিয়ে চলার চেষ্টাই কেউ করছেন না। এখন এআইসিসি-ই না হয় দেখুক, কোন স্বার্থ দেখা হবে!’’

Advertisement

ঘটনাপ্রবাহ জেনে ইয়েচুরিও ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন, মুখে সকলে বিজেপি-বিরোধিতার কথা বলছেন। অথচ কাজ যদি এমন হয় যাতে বিজেপি এবং সেই সঙ্গে তৃণমূলের সুবিধা হয়ে যাবে, তা হলে কিছু করার নেই! ভোপালে ইতিহাস কংগ্রেসে যাওয়ার কারণ দেখিয়ে কলকাতায় দলের আসন্ন রাজ্য কমিটির বৈঠকেও আসছেন না ইয়েচুরি। সিপিএমের রাজ্য কমিটির বড় অংশেরই অবশ্য দাবি, গত বিধানসভার মতো ‘খাপছাড়া সমঝোতা’ করে লাভ নেই। হলে সার্বিক সমঝোতা হোক। এই পরিস্থিতিতে আবার বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু রায়গঞ্জে গিয়ে এমন কিছু মন্তব্য করেছেন, যার বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছে কংগ্রেস শিবিরে।

বাম শিবির থেকে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, ২০০৯ সালে তৃণমূলকে ২৮টি আসন (যার মধ্যে একটি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিয়েছিলেন এসইউসি-কে) ছেড়ে কংগ্রেস ১৪টি আসনে লড়েছিল। অথচ সেই ভোটের আগে তৃণমূলের হাতে একটি এবং কংগ্রেসের ৬টি জেতা আসন ছিল। তা হলে এখন কংগ্রেস বামেদের জেতা আসন নিতে এবং আসনসংখ্যা বাড়াতে এত মরিয়া কেন? এরই মধ্যে বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক তাদের দু’দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠকে তিন কেন্দ্রে প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করেছে। তাদের ভাগের আসনে কংগ্রেস প্রার্থী দিলে তারাও কংগ্রেসের কিছু আসনে প্রার্থী দাঁড় করাবে বলে ঠিক করেছে! দশ বছর আগে তৃণমূলের জোটসঙ্গী হয়েও কংগ্রেসের ক্ষেত্রে একই কৌশল নিয়েছিল এসইউসি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন