UNICEF

নারী, শিশুর স্বাস্থ্য-শিক্ষায় ধর্মই বন্ধু

জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষার সাম্প্রতিক রিপোর্টে (২০১৯-২০) বাংলার হালহকিকতও ইউনিসেফের পুস্তিকায় নথিবদ্ধ। তাতে দেখা যাচ্ছে, মাত্র ৬০.৭% শিশুকে জন্মের এক ঘণ্টায় বুকের দুধ খাওয়ানো হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৭:৫২
Share:

—প্রতীকী ছবি।

ঐতরেয় উপনিষদ বলছে, নারী যিনি পুষ্টি দেন, তাঁকে সবার আগে পুষ্ট হতে হবে। গর্ভবতী নারী বা স্তন্যদায়িনী মায়েদের জন্য রোজার উপবাসও দরকার নেই বলছে ইসলাম। আবার জিশুর শিষ্য পিটারের উপদেশে ‘শিশুর প্রাণবায়ু’ মাতৃস্তন্যের মাহাত্ম্য। বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সাহায্য নিয়ে নানা ধর্মের কিছু উপদেশের সংকলন গড়েই এ বার রাজ্যে মা ও শিশুর স্বাস্থ্য, সুরক্ষা থেকে ছোটদের শিক্ষার প্রসারে মাঠে নামছে ইউনিসেফ।

Advertisement

‘আমানত ফাউন্ডেশন’ বলে একটি মঞ্চের চেয়ারম্যান মহম্মদ শাহ আলম বলছিলেন, “২০০৩ সালে রাজ্যে পোলিয়ো টিকা নিয়ে কুসংস্কারের মোকাবিলায় আমরা ইসলাম ধর্মের মুরুব্বিদের সাহায্য নিই। সুফলও মেলে। এর পরে নানা রোগের টিকাকরণের প্রচারেও একই কৌশল কাজে এসেছে।” এ বারও ইউনিসেফের পৃষ্ঠপোষকতায় আমানতই ‘জীবনের জন্য ধর্ম’ নামে আলাদা, আলাদা পুস্তিকা তৈরি করেছে। পুরোহিত, ইমামদের সাহায্য নিয়ে তা প্রচারের পরিকল্পনা রয়েছে। ইউনিসেফের এক কর্তার কথায়, “রাজ্যে মেয়েদের রক্তাল্পতা বা বাল্যবিবাহের মতো সমস্যা রুখতে ধর্মীয় উপদেশ কাজে এলে ভালই! ধর্মগুরুদের সচেতনতামূলক নানা অনুষ্ঠান করেছি। পঞ্চায়েত, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মতো ওঁরাও ভাল কাজে আমাদের বন্ধু।”

জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষার সাম্প্রতিক রিপোর্টে (২০১৯-২০) বাংলার হালহকিকতও ইউনিসেফের পুস্তিকায় নথিবদ্ধ। তাতে দেখা যাচ্ছে, মাত্র ৬০.৭% শিশুকে জন্মের এক ঘণ্টায় বুকের দুধ খাওয়ানো হয়। ১৫-১৯ বছরের ৭১.৪% মেয়ে রক্তাল্পতায় ভোগেন। ২০-২৪ বছর বয়সী ৪১.৬% মেয়ের ১৮র আগেই বিয়ে হয়েছে। সব মিলিয়ে ৪২% মেয়ের ১৮এর কমে বিয়ে হয়। ১৬.৫% মেয়ে, মা হয় ১৯-এর আগে। আবার জাতীয় অপরাধপঞ্জির পরিসংখ্যান বলছে, দেশের শিশু অপহরণ ও পাচারের ৬৯ শতাংশের শরিক হল পশ্চিমবঙ্গ।

Advertisement

অতীতে নাইজিরিয়ায় ধর্মগুরুদের সামনে স্বাস্থ্য সচেতনতার প্রচারকরে ফল পায় ইউনিসেফ। তারা এ বার এ রাজ্যে হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান, জৈন, শিখ, বৌদ্ধদের জন্য বাংলা, ইংরেজি, নেপালি, উর্দু, হিন্দি পাঁচটি ভাষায় পুস্তিকা তৈরি করেছে। হিন্দুদের জন্য বাংলা, ইংরেজি ও হিন্দি, মুসলিমদের জন্য বাংলা, ইংরেজি ও উর্দু, খ্রিস্টানদের এবং জৈনদের জন্য বাংলা-ইংরেজি, শিখদের জন্য ইংরেজি, বৌদ্ধদের জন্য নেপালি ও ইংরেজিতে পুস্তিকাগুলির আজ, সোমবার আনুষ্ঠানিক প্রকাশ হওয়ার কথা। রামকৃষ্ণ মিশন, ইসকন, ভারত সেবাশ্রম সংঘ, জমিয়তে উলেমায়ে হিন্দ, জমিয়তে আহলে হাদিস, চার্চ অব নর্থ ইন্ডিয়া-র বিশপস কলেজ প্রমুখ সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ধর্মতত্ত্ববিদেরা প্রাসঙ্গিক উপদেশখুঁজে এনেছেন।

পুস্তিকাটিতে মা ও শিশুর স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জল ও স্বাস্থ্যবিধান, শিশু সুরক্ষা, শিক্ষা নিয়ে পাঁচটি অধ্যায় রয়েছে। অথর্ব বেদ থেকে কোরান, বাইবেল কিছু কথা সরাসরি বলেছে। যেমন সবাই, জলের বিশুদ্ধতা বজায় রাখার পক্ষে। আবার ইসলামের বিভিন্ন হাদিসে মহানবি হজরত মহম্মদের স্ত্রীদের প্রসঙ্গ তুলে ঋতুকালীন অবস্থায় মেয়েদের একঘরে না-করে সংবেদনশীল হতে বলা হয়েছে।পুরুষ, নারী, দাস, দাসী সবার শিক্ষার জন্য সওয়াল করেছেন মহানবি। হিন্দু ধর্মের বেদ, উপনিষদ, গীতা থেকে চরক, সুশ্রুতের বিধানও মেলে ধরা হয়েছে। আলম বলছিলেন, “বিভিন্ন ধর্মের কিছু উপদেশ তলিয়ে দেখলে প্রগতিশীল মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি মেলে। যেমন শিক্ষার গুরুত্ব মানলে বাল্যবিবাহের প্রবণতা কমবে। পুস্তিকাগুলিতে এ ভাবে বুঝিয়েও আমরা জনতাকে সজাগকরতে চাইছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন