DA Protest during IPL Match

চটজলদি ভাবনা থেকেই ইডেনে আইপিএল ম্যাচে ডিএ-র দাবিতে পোস্টার, বলছেন আন্দোলনকারীরা

সোমবার ইডেন গার্ডেন্সে আইপিএলের ম্যাচ দেখতে গিয়ে নিজেদের বকেয়া ডিএ-র দাবির পক্ষে সওয়াল করলেন সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের সদস্যেরা। তবে তাঁদের দাবি, এই প্রচার কৌশলে তাঁদের কোনও আগাম পরিকল্পনা ছিল না।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০২৩ ১৭:০১
Share:

কোন পরিকল্পনায় ইডেনে ডিএ-র দাবি? — নিজস্ব চিত্র।

যাচ্ছিলেন শহিদ মিনারের পাদদেশের মঞ্চ থেকে ইডেনে আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের ম্যাচ দেখতে। আচমকাই মাথায় এসেছিল কলকাতা-পঞ্জাবের ম্যাচের গ্যালারিতে বকেয়া মহার্ঘ ভাতার দাবি জানানোর। যেমন কথা তেমন কাজ। সোমবার ইডেনে টানটান উত্তেজনার ম্যাচে গ্যালারিতে ডিএ-র দাবিতে পোস্টার তুলে ধরেন আন্দোলনকারীরা। তা নজরও কেড়েছে লোকজনের। তবে কী করে নিরাপত্তারক্ষীদের নজর এড়িয়ে তাঁরা পোস্টার-প্ল্যাকার্ড নিয়ে গ্যালারিতে পৌঁছলেন, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে প্রশ্নও।

Advertisement

ডিএ-র দাবিতে শহিদ মিনারের নীচে অবস্থান করছেন সরকারি কর্মীদের একাংশ। সেই আন্দোলনের ১০০তম দিনে গত শনিবার দক্ষিণ কলকাতার হাজরা মোড় থেকে মিছিল করেছিলেন তাঁরা। যে মিছিল গিয়েছিল তৃণমূলের অন্যতম নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির সামনে দিয়েও। তার এক দিন পরেই সোমবার ইডেনে আইপিএলের ম্যাচে ডিএ-র দাবিতে সরব হতে দেখা গিয়েছে আন্দোলনকারীদের। কেকেআর-কে সমর্থনের পাশাপাশি প্ল্যাকার্ড হাতে ডিএ-র দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা।

যদিও মহার্ঘ ভাতার দাবিতে আন্দোলনকারী সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের সদস্যরা জানাচ্ছেন, তেমন কোনও পরিকল্পনা তাঁদের ছিল না। কিন্তু পরিকল্পনাহীন হলেও এই কর্মসূচি লোকজনের নজর কেড়েছে। যৌথ মঞ্চের সদস্যদের দাবি, এই প্রচার কৌশল রূপায়ণে তাঁরা সফল।

Advertisement

আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, ইডেনে ওই কর্মসূচির কথা আচমকাই তাঁদের মাথায় আসে। সোমবার দুপুরে শহিদ মিনারের ধর্না মঞ্চ থেকে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের বেশ কিছু সদস্য ইডেনে আইপিএলের ম্যাচ দেখতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এক সময় সকলে একসঙ্গেই ম্যাচ দেখতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন সকলে। তখনই আন্দোলনকারী সদস্য চন্দন চক্রবর্তীর মাথায় আসে গ্যালারিতে গিয়ে ডিএ-র দাবিতে সোচ্চার হওয়ার বিষয়টি। সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের উপস্থিত নেতৃত্বকে তিনি ওই প্রস্তাব দেন। সম্মত হন নেতারা। যাঁরা খেলা দেখতে যাচ্ছিলেন, তাঁদের সম্মতিও চাওয়া হয়। তাঁরাও রাজি হলে চটজলদি কর্মসূচি তৈরি হয়ে যায়।

আইপিএল দেখতে যাওয়া ২০ জন আন্দোলনকারী রাজি হলে মঞ্চ থেকে কিছু পোস্টার এবং প্ল্যাকার্ড নিয়েই তারা শহিদ মিনার থেকে ইডেনে যান। ‘প্রতিবাদী’ সরকারি কর্মচারীদের দাবি, ডিএ-র দাবির সমর্থন সংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে ইডেনে ঢুকতে কোনও অসুবিধা হয়নি। প্রসঙ্গত, খেলোয়াড়দের নিরাপত্তার স্বার্থে এখন জলের বোতল, মোবাইল চার্জ করার ‘পাওয়ার ব্যাঙ্ক’-এর মতো বস্তু ক্রিকেট, ফুটবল বা হকি মাঠে নিয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ। যদিও প্ল্যাকার্ড বা পোস্টার নিয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ নয়। কারণ, আইপিএল বা অন্য যে কোনও ক্রিকেট বা ফুটবল ম্যাচে বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড-পোস্টার নিয়ে দর্শকেরা মাঠে যান। ফলে নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত রক্ষীরা দর্শকদের তল্লাশি করলেও প্ল্যাকার্ড বা পোস্টার কী লেখা রয়েছে, তা সে ভাবে খতিয়ে দেখেন না। কারণ, তাঁরা ধরে নেন, ওই সমস্ত পোস্টার এবং প্ল্যাকার্ডে খেলা সংক্রান্ত কোনও বক্তব্যই থাকবে।

সেই ‘সুযোগ’ কাজে লাগিয়েই সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের সদস্যরা ম্যাচ চলাকালীন নিজেদের বকেয়া ডিএ-র দাবির সপক্ষে সোচ্চার হন। বার বার গ্যালারিতে প্ল্যাকার্ড তুলে ধরে নিজেদের দাবির পক্ষে স্লোগানও দেন তাঁরা। মঞ্চের ওই উদ্যোগ প্রসঙ্গে চন্দন বলেন, ‘‘আমাদের সদস্যেরা কোনও অসাধু অভিসন্ধি নিয়ে খেলা দেখতে যাননি। মাঠের নিয়মশৃঙ্খলা মেনেই আমরা এমন কোনও জিনিস নিয়ে যাইনি, যা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘মাঠে প্ল্যাকার্ড নিয়ে যাওয়া তো নিষিদ্ধ নয়। ওই প্ল্যাকার্ড বা পোস্টার দিয়ে কাউকে আঘাতও করা যায় না। তাই প্ল্যাকার্ড নিয়ে মাঠে ঢুকে নিজেদের দাবির পক্ষে সোচ্চার হতে আমাদের কেউ বাধা দেয়নি।’’ এতে নিরাপত্তামূলক কোনও ঝুঁকি আছেন, এমনও মনে করছেন না আন্দোলনকারীরা।

মাঠে বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিবাদ জানানো নতুন নয়। আন্তর্জাতিক ম্যাচে এমন দৃষ্টান্ত রয়েছে। ইংল্যান্ডে ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ চলাকালীন মাঠের উপর দিয়ে বিমান উড়িয়ে একটি বিশেষ বিষয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়েছিল। আরও বিভিন্ন সময়ে খেলার মাঠে রাজনৈতিক পোস্টারও দেখা গিয়েছে। তবে বকেয়া মহার্ঘ ভাতার দাবিতে গ্যালারিতে এমন ‘আন্দোলন’ হয়েছে বলে কেউই মনে করতে পারছেন না।

বস্তুত, এমন একটা ঘটনা যে ঘটেছে, তা জানাও ছিল না ম্যাচের আয়োজক সিএবি-র। মঙ্গলবার প্রশ্ন করায় সংস্থার সভাপতি স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মাঠের নিরাপত্তার দায়িত্ব আমাদের নয়। এটা পুলিশের দায়িত্ব। দর্শকরা কী নিয়ে মাঠে ঢুকছেন, সেটা পুলিশই দেখে। আমাদের এক জন কর্মীও মাঠের নিরাপত্তা দেখার কাজে যুক্ত নন।’’ কলকাতা পুলিশের কোনও আধিকারিক এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু বলতে চাননি। তবে সূত্রের খবর, আইপিএলের ম্যাচ দেখতে ঢুকে পোস্টার-প্ল্যাকার্ড নিয়ে কেউ যে গ্যালারিতে বসে ‘রাজনৈতিক আন্দোলন’ করতে পারেন, তা তাঁরা ভাবেননি। পুলিশের একাংশের বক্তব্য, বাহিনী সেই সব বস্তু নিয়ে সতর্ক থাকে, যা নিরাপত্তার বিঘ্ন ঘটাতে পারে। যেমন টর্চ, জলের বোতল ইত্যাদি। পোস্টার বা প্ল্যাকার্ডের ক্ষেত্রে সেই ‘ঝুঁকি’ থাকে না। ফলে সেই বিষয়টি সে ভাবে নজরেও রাখা হয় না। তবে ভবিষ্যতে এ বিষয়ে বাহিনী সতর্ক থাকবে বলেই খবর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement