পাট পচাতে বদ্ধ জলায় অণুজীবাণু ব্যবহার লাভজনক

পাট পশ্চিমবঙ্গের প্রধান একটি অর্থকরী ফসল। প্রতি বছর পাটজাত দ্রব্য রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। এ জন্য প্রয়োজন শ্রেষ্ঠ গুণগত মানের পাটের আঁশ। এই গুণগত মান নির্ভর করে পাট পচানোর উপর। অর্থাৎ পাট সঠিক জাঁক দেওয়ার পদ্ধতির উপর।

Advertisement

শুভ্র মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৬ ০০:২৫
Share:

পাট পশ্চিমবঙ্গের প্রধান একটি অর্থকরী ফসল। প্রতি বছর পাটজাত দ্রব্য রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। এ জন্য প্রয়োজন শ্রেষ্ঠ গুণগত মানের পাটের আঁশ। এই গুণগত মান নির্ভর করে পাট পচানোর উপর। অর্থাৎ পাট সঠিক জাঁক দেওয়ার পদ্ধতির উপর। পাট পচানোর জন্য প্রয়োজন ধীরে বয়ে চলা জলের উৎস। এই জল পাওয়া ভার। পরিবর্তে প্রায় সর্বত্রই বদ্ধ জলাশয়ের জল বার না করেই—সেই একই বদ্ধ জলে পাট জাঁক দেওয়া হয়। পশ্চিমবঙ্গ-সহ ভারতের বেশির ভাগ অঞ্চলে পাটচাষিদের এই প্রাচীন নিয়মমাফিক পদ্ধতি পাটের গুণগত মানের ক্ষতি করছে। অথচ বদ্ধ জলাশয়ে পাট পচালেও উন্নত মানের আঁশ পেতে সাহায্য করতে পারে এক বিশেষ ধরনের অণুজীবাণু মিশ্রিত পাউডার। এর ব্যবহারে পাটচাষিরা যে বহুলাংশে উপকৃত হবেন, তা পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণিত। পাট পচানোর এই অণুজীবাণু মিশ্রণটির নাম হল ‘ক্রাইজাফ সোনা’। এই পদ্ধতিতে পাতা ঝরা পাটের আঁটিগুলিকে প্রথমে জলাশয়ের উপরে সাজাতে হবে। তার পর ওই স্তরের উপরে অণুজীবাণু পাউডার সমান ভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে। তার উপরে আবার এক স্তর পাটের আঁটি সাজাতে হবে। এর উপর আবার পাউডারটি ছিটিয়ে দিতে হবে। এই ভাবে ৩-৪টি স্তর তৈরি করতে হবে। প্রতি স্তরেই যেন পাউডারটি ছড়ানো থাকে। শেষ স্তরের উপর ভার হিসেবে সিমেন্টের খালি বস্তার ভিতর মাটি ভরে ওই বস্তাগুলি বিছিয়ে দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, পাটের আঁটিগুলি জলের নীচে যেন ডুবে থাকে।

Advertisement

এই পদ্ধতিতে পাট পচানোর জন্য এক বিঘা জমির পাটে ৪ কেজি ওই অণুজীবাণু পাউডার দরকার। যার বাজার-মূল্য ১২০ টাকা। এটা চাষিদের আয়ত্তের মধ্যে। আরও ২-৩ বার ওই একই জলাশয়ে পাট পচানো যেতে পারে। দ্বিতীয় বা তৃতীয় বার পাট পচাতে অণুজীবাণু মিশ্রণ প্রথম বারের তুলনায় অর্ধেক পরিমাণ হলেই চলবে।

Advertisement

অণুজীবাণু মিশ্রণ থেকে যে সব সুফল মেলে তা হল:

উজ্জ্বল সোনালি রঙের পাটের আঁশ পাওয়া যায়।

পাট পচানোর সময়কাল প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় ৬-৭ দিন কমে।

আঁশের গুণগত মানে উন্নতি ঘটে।

পাটের আঁশ সহজে ছাড়ানো যায়।

প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় ৮-১০ শতাংশ বেশি আঁশ পাওয়া যায়।

লেখক বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বংশগতি ও উদ্ভিদ প্রজনন বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement