নিজের স্ত্রীকেই জীবনে সবচেয়ে বেশি ভালবেসেছিলেন রোহিত (নাম পরিবর্তিত)। সেই স্ত্রীকে এক দিন সন্দেহের বশে খুন করে ফেললেন। বিচারে যাবজ্জীবন সাজা হল। জেলে এসে প্রথমে খুবই গুমরে থাকতেন। ধীরে ধীরে অন্য বন্দিদের বন্ধুত্বের ছোঁয়ায় রোহিতের মধ্যে ফিরে এসেছে স্বাভাবিক অনুভূতি। রোহিত এখন মেদিনীপুর জেলের অন্যতম জনপ্রিয় চরিত্র। খেলাধুলো, হাসিঠাট্টা নিয়েই তাঁর জেল-জীবন।
শুধু রোহিতই বা কেন! কেউ খুন, কেউ বা ব্যাঙ্ক ডাকাতি, কেউ বা অন্য কোনও বড় অপরাধে বন্দি। কিন্তু সংশোধনাগারে এঁদের জীবন অনেক অন্য রকম। জেলের মধ্যে অবসর সময়ে এঁরা কেউ ক্রিকেট, কেউ ফুটবল, কেউ বা ব্যাডমিন্টন খেলেন।
আজ, মঙ্গলবার ১৪ ফেব্রুয়ারি মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেলে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে কাপ’। জেলের মধ্যেই ক্রিকেট খেলার প্রতিযোগিতা। জেলের ওয়েলফেয়ার অফিসার কর্মদেব গোস্বামীর কথায়, ‘‘এমন একটা দিনে বন্দিদের জীবনে একটু অন্য রং ছড়িয়ে দেওয়াই উদ্দেশ্য।’’
আর জেল সুপার দেবাশিস চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, জেলে পুরুষ বন্দির সংখ্যা প্রায় ১৪০০। তার মধ্যে প্রায় ২০০ জন বন্দিকে বেছে নেওয়া হয়েছে। আরও প্রায় ৫৬ জন জেলকর্মীকে নিয়ে ১৬ জন করে মোট ১৬টি দল তৈরি
হয়েছে। তারা গত এক মাস ধরে নিজেদের মধ্যে ছ’ওভার করে দু’ইনিংসের ম্যাচ খেলেছে। তাদের মধ্যে সেরা দু’টি ১৬ জনের টিম মঙ্গলবার খেলবে একটি ২৫ ওভারের ম্যাচ। দু’টি টিমে রয়েছেন বন্দি এবং কর্মী— সবাই। ভালবাসার সঙ্গে জড়িত দেবদেবীদের নাম দিয়েই তৈরি হয়েছে দু’টি টিমের নাম— ভেনাস এবং অরফিউস। এই টুর্নামেন্ট খেলিয়ে চূড়ান্ত ১৬ জনের এমন একটা টিম তৈরি করার কথাও ভাবা হয়েছে, যারা বাইরে অন্য সংশোধনাগারের দলের সঙ্গে খেলতে যেতে পারে।
আরও মজা আছে। দু’ইনিংসের মাঝে লাঞ্চ ব্রেক। মেনু— বিরিয়ানি। সব মিলিয়ে ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে ভরপুর মজা দিয়েই বন্দিদের মজিয়ে রাখতে চান জেল কর্তৃপক্ষ। ওঁদের কথায়, ‘‘এক-আধ দিন এমন মজা হলে ওঁদের জীবনেও একটু-আধটু বৈচিত্র্য আসে।’’