Vande Bharat Express

উদ্‌যাপন শেষে ‘নিঃসঙ্গ’ যাত্রা বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের

শনিবার রাতেই জানা গিয়েছিল আজ, রবিবার সকাল থেকে বন্দে ভারতের এক্সপ্রেসের বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু। প্রথম দিনের সব আসন ভর্তি হয়ে গিয়েছে। ফেরার আসনও ভর্তি।

Advertisement

ফিরোজ ইসলাম

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২৩ ০৭:২২
Share:

শুক্রবার রাত প্রায় সাড়ে ৯টা নাগাদ এনজেপি স্টেশনে উদ্‌যাপনের যাত্রা শেষ হয় বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের। ফাইল চিত্র।

দিন ফুরোলে উৎসব গত হয়। উদ্‌যাপন নিঃসঙ্গ হয়।

Advertisement

সারা দিন যে ট্রেনকে ঘিরে উচ্ছ্বাসে ভাসল জনতা, রাত্রে যেন ঘুম চোখে, ক্লান্ত পায়ে, শুকিয়ে যাওয়া ফুল গায়ে নিয়ে সে-ই ফেরার পথ ধরল একাকী।

শুক্রবার রাত প্রায় সাড়ে ৯টা নাগাদ এনজেপি স্টেশনে উদ্‌যাপনের যাত্রা শেষ হয় বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের। রাত ১০টায় ট্রেনটি ফিরতি যাত্রায় রওনা হয় হাওড়ার দিকে। বলতে গেলে নিঃশব্দেই। কারণ, এই যাত্রায় না আছে যাত্রিদল, না সময়সূচি ধরে নির্দিষ্ট স্টেশনে থামার বাধ্যবাধকতা। এই ফিরতি যাত্রা পেরিয়ে ট্রেনটি শনিবার সকাল সওয়া ৯টায় যখন হাওড়া স্টেশনের ৮ নম্বর প্ল্যাটফর্মে পৌঁছল, তখন তার ভিতরে-বাইরে ক্লান্তির ছাপ। উৎসাহী জনতার দাপাদাপিতে ট্রেনের লাল গালিচায় তখনও রয়ে গিয়েছে কালো ছোপ। কামরায় ঢোকার প্রবেশ পথে ছড়িয়ে রয়েছে ফুলের হলুদ পাপড়ি। বহু কামরায় জল ফুরিয়েছে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জলের বোতল, খাবারের প্যাকেট সরাতে ব্যস্ত রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা কর্মীরা। রেল সূত্রে বলা হচ্ছে, ফেরার পথের যাত্রা সূচিমাফিক নয়, ট্রেনটিকে হাওড়ায় ফিরিয়ে আনাই মূল লক্ষ্য ছিল।

Advertisement

শনিবার রাতেই জানা গিয়েছিল আজ, রবিবার সকাল থেকে বন্দে ভারতের এক্সপ্রেসের বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু। প্রথম দিনের সব আসন ভর্তি হয়ে গিয়েছে। ফেরার আসনও ভর্তি। ফলে, আবার নতুন একটা যাত্রার প্রস্তুতি শুরু করতে রেলকর্মীদের পুরোদস্তুর কাজে নেমে পড়তে হল।

শুক্রবার পৌষের মাঝ দুপুরে যখন দু’পাশে হলুদ সর্ষে খেতের মধ্যে দিয়ে দুধ-সাদা ট্রেনটি ছুটছিল, বোলপুর, রামপুরহাট, মালদহ পেরিয়ে, এনজেপির দিকে, স্টেশনে স্টেশনে ছিল উৎসাহীদের ভিড়। বেশ কয়েকটি বাড়তি স্টেশনে দাঁড় করানো হয় ট্টেনটিকে। সেখানের উচ্ছ্বাস, রাজনৈতিক মানুষজনের আনাগোনা, রাতে ফিরতি পথে সবই যেন অদৃশ্য।

একের পর এক স্টেশনে থেমে রাত ২টো ৫১ মিনিটে রাজ্যের উত্তর অংশ মালদহ শহর স্টেশনে পৌঁছয় ট্রেন। সেখানে তখন গুটিকয় যাত্রী হাজির। তাঁরা এসে নিজস্বী তুললেন। তবে তার আগে বিকেল ৫টা ৫০-এর মতো হুড়োহুড়ি নেই। নেই রেলকর্মী, রেল সুরক্ষাবাহিনীর জওয়ানদের ভিড়ও। এক আরপিএফ সদস্য বলেন, “আপ বন্দে ভারত যখন গিয়েছে, মানুষের ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খেয়েছি। ফিরতি ট্রেনের সময়ে ভিড় নেই। সেই সুযোগে বন্দে ভারতের ছবি আমিও মোবাইলে বন্দি করে নিলাম।”

এর পরে গঙ্গা পার হয়ে নিউ ফরাক্কা ছুঁয়ে একেবারে রামপুরহাটে এসে দাঁড়ায় ট্রেন। সকাল তখন ৬টা। সবে সকালের আলো ফুটেছে। এর পরে যেন এক ছুটে সোজা হাওড়া।

রেলকর্মীরা বলছেন, এই যাত্রা যেন একটা পরীক্ষাই ছিল। বিশেষ করে বাণিজ্যিক যাত্রা শুরুর আগে এই যাত্রার মধ্যে দিয়ে ত্রুটি, সমস্যাগুলি মিটিয়ে ফেলারই চেষ্টা হয়েছে। রেল সূত্রে খবর, ছোটখাটো ত্রুটি বা সমস্যা সামলাতে চেন্নাইয়ের ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরির জনা দশেক কর্মী এবং আধিকারিক রয়েছেন। বাতানুকূল যন্ত্র, ট্রেনের স্বয়ংক্রিয় দরজা, সেন্সর নির্ভর দুই কামরায় মাঝের কাচের দরজা দেখাশোনা করার জন্য নির্দিষ্ট সংস্থার কর্মীরা থেকে গিয়েছেন। উদ্বোধনী যাত্রার সময়ে ট্রেনের স্বয়ংক্রিয় দরজার সব ক’টি খোলা হয়নি। আজ, রবিবার প্রথম যাত্রার আগে ট্রেনের ওই ব্যবস্থা সক্রিয় করা হবে বলে খবর।

রেল সূত্রে খবর, রবিবার প্রথম যাত্রার দিনেও যাত্রীদের স্বাগত জানাতে বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। রবিবার প্রথম যাত্রার টিকিট অনলাইনে বুক করেছেন একটি বেসরকারি সংস্থার ইঞ্জিনিয়ার মুকুলেশ দেবনাথ। তাঁর কথায়, ‘‘এমন ট্রেনে প্রথম বাণিজ্যিক যাত্রার দিনে সফরের সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইনি। রেল-সচেতন যাত্রী হিসেবে আমরা প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের কোন জায়গায় পৌঁছেছি, তা-ও দেখার কৌতূহল ছিল।’’

বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ঘিরে তাই থাকছে প্রত্যাশা সামলানোর চাপও। ট্রেনের যাত্রী পরিষেবা উন্নত হলেও, গতি বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়ার কথা বলছেন যাত্রীদের অনেকেই। এখন প্রশ্ন, তা পুরোপুরি হবে কবে?

(সহ-প্রতিবেদন: অভিজিৎ সাহা)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন