বিদ্যুৎ-মাসুল কমানোর দাবি বেহাল শিল্পের

গত ক’বছর ধরেই রাজ্যের শিল্পক্ষেত্রে বিদ্যুতের চাহিদা কমছে। বড়-মাঝারি কলকারখানার জন্য চড়া বিদ্যুৎ-মাসুলই এর প্রধান কারণ বলে একটি রিপোর্টে দাবি করেছে অর্গানাইজেশন অব ইন্ডিয়ান ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্ডাস্ট্রিজ। তাদের অভিযোগ, বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনতে গিয়ে ক্ষতির মুখে পড়ছে বহু সংস্থা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:১০
Share:

গত ক’বছর ধরেই রাজ্যের শিল্পক্ষেত্রে বিদ্যুতের চাহিদা কমছে। বড়-মাঝারি কলকারখানার জন্য চড়া বিদ্যুৎ-মাসুলই এর প্রধান কারণ বলে একটি রিপোর্টে দাবি করেছে অর্গানাইজেশন অব ইন্ডিয়ান ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্ডাস্ট্রিজ। তাদের অভিযোগ, বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনতে গিয়ে ক্ষতির মুখে পড়ছে বহু সংস্থা। বিষয়টি নিয়ে সংগঠনের সদস্যরা খুব শীঘ্রই রাজ্য সরকারের দ্বারস্থ হতে চলেছে বলে জানা গিয়েছে।

Advertisement

সংগঠনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট বিনয় ডালমিয়া জানিয়েছেন, যে সমস্ত শিল্পে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে বিদ্যুৎ লাগে, তাদের বিল কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে। ফলে কমাতে হচ্ছে বিদ্যুতের ব্যবহার। বিশেষ করে লোহা ও ইস্পাত শিল্পের সঙ্গে যুক্ত সংস্থাগুলির দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। অনেক সংস্থাই লোকসানের বোঝা টানতে না পেরে বন্ধও হয়ে গিয়েছে। ডালমিয়ার দাবি, সরকারের বিভিন্ন মহলে বিষয়টি জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। তিনি এমন অভিযোগও করেছেন, বিদ্যুৎ চুরি-সহ বিল আদায়ের ব্যর্থতার কারণেও (এটিসি লস) বণ্টন সংস্থার যে আর্থিক লোকসান হয় সেই দায়ও শিল্প সংস্থাগুলির ঘাড়ে চাপানো হয়ে থাকে।

রাজ্যে বিদ্যুৎ মাসুল নির্ধারণ করে পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশন। আর ওই মাসুল আদায় করে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। সাধারণত বিদ্যুতের দাম এমন ভাবে ঠিক করা হয় যাতে গৃহস্থের ঘাড়ে বোঝা কম চাপে। অন্য দিকে বিভিন্ন কল-কারখানা ও বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির কাছে কিছুটা বেশি মাসুল আদায় করা হয়। এই ব্যবস্থাটিকে ‘ক্রস সাবসিডি’ বলা হয়। যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আপত্তি জানিয়ে আসছে শিল্প সংস্থাগুলি।

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গে শিল্পক্ষেত্রের বিদ্যুৎ মাসুল যে অন্য রাজ্যের তুলনায় অনেকটাই বেশি, এই অভিযোগ দীর্ঘদিনের। যে কোনও সংস্থার ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তার দাম চড়া হলে উৎপাদন খরচ বাড়ে। ফলে দেশের বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়। অতীতে এই কারণে দু’-একটি সংস্থা রাজ্য থেকে কারখানা গুটিয়ে অন্যত্র চলেও গিয়েছে। ডালমিয়ার বক্তব্য, শিল্প সংস্থাগুলিকে জাতীয় তথা আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে নিজেদের পণ্য নিয়ে লড়াই চালাতে হয়। সে ক্ষেত্রে বিদ্যুতের চড়া মাসুল থাকলে রাজ্যের শিল্প সংস্থাগুলি প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে।

সংগঠনের সদস্যদের বক্তব্য, বণ্টন সংস্থাকে সাধারণ মানুষকে বিদ্যুৎ দিতে হবে। এটা তাদের সামাজিক দায়। এটা যেমন সত্যি, তেমনই রাজ্যে যে সমস্ত কলকারখানা রয়েছে সেগুলির স্বার্থের কথাও ভাবার প্রয়োজন। তাঁদের দাবি, কারখানাগুলিকে বাঁচিয়ে রাখতে গেলে বণ্টন সংস্থাকে মাসুলের উপর কিছু ভতুর্কি দেওয়ার কথা ভাবতে হবে। তবেই এ রাজ্যে শিল্পক্ষেত্রে আরও বিনিয়োগ আসবে।

এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, যে কোনও শিল্পই তাঁদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। মাসুল নিয়ে শিল্প সংগঠনগুলির কোনও অভিযোগ থাকলে আলোচনায় বসা যেতে পারে। কয়েকটি ক্ষেত্রে শিল্প সংস্থাগুলি যাতে ছাড় পায় তেমন কিছু প্রকল্পের কথা ভাবা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন