আতঙ্কিত নির্যাতিতা বাড়ি ফিরতে নারাজ

মধ্যমগ্রামের রাজবাটি এলাকায় গণধর্ষণ কাণ্ডে জড়িত সন্দেহে পুলিশ আরও দুই যুবককে গ্রেফতার করল। তবু এখনও আতঙ্কে আছেন নির্যাতিতা। এখনই মধ্যমগ্রামে স্বামীর কাছে ফিরতে চান না তিনি। বধূর মা বৃহস্পতিবার সকালেই মেয়েকে শাসন থানার বোয়ালঘাটা এলাকায় বাপের বাড়িতে নিয়ে চলে এসেছিলেন। শনিবার ওই বধূ বিচারকের কাছে গোপন জবানবন্দি দেবেন বলে পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে। শুক্রবার সকালেও ওই তরুণী বধূর চোখেমুখে ছিল আতঙ্ক। সারা রাত ঘুমোতে পারেনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বনগাঁ শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৫ ০১:৪৬
Share:

শাসনে নির্যাতিতা বধূর বাপের বাড়িতে বামপন্থী দলের প্রতিনিধিরা। শুক্রবার ছবিটি তুলেছেন সুদীপ ঘোষ।

মধ্যমগ্রামের রাজবাটি এলাকায় গণধর্ষণ কাণ্ডে জড়িত সন্দেহে পুলিশ আরও দুই যুবককে গ্রেফতার করল। তবু এখনও আতঙ্কে আছেন নির্যাতিতা। এখনই মধ্যমগ্রামে স্বামীর কাছে ফিরতে চান না তিনি।

Advertisement

বধূর মা বৃহস্পতিবার সকালেই মেয়েকে শাসন থানার বোয়ালঘাটা এলাকায় বাপের বাড়িতে নিয়ে চলে এসেছিলেন। শনিবার ওই বধূ বিচারকের কাছে গোপন জবানবন্দি দেবেন বলে পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে। শুক্রবার সকালেও ওই তরুণী বধূর চোখেমুখে ছিল আতঙ্ক। সারা রাত ঘুমোতে পারেনি। এ দিন বলেন, ‘‘এখন বাপের বাড়িতেই থাকব। স্বামীর কাছে ফিরব না। রাজবাটি এলাকায় গেলে নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। দুষ্কৃতীরা সকলেই গ্রেফতার হয়েছে। আমি চাই, ওদের চরম শাস্তি হোক। যাতে ভবিষ্যতে আর কোনও মেয়ের সঙ্গে ওরা এ রকম আচরণ করতে না পারে।’’ মহিলা বলেন, ‘‘ওদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু ওরা ঘরের মধ্যেই গুলি করল। বাধা দিলে হয় তো আমার ছেলেকে মেরেই ফেলত।’’ বধূর মায়ের কথায়, ‘‘নিরাপত্তার অভাব বোধ করছি। তবে পুলিশের ভূমিকায় আমরা সন্তুষ্ট।’’

বৃহস্পতিবার রাতে জেলা পুলিশের একটি দল দত্তপুকুর থানার সিঁথিবড়া এলাকার একটি গোপন আস্তানা থেকে নুর ইসলাম ওরফে শেখ রাজু এবং মহম্মদ শফিক নামে ওই দু’জনকে গ্রেফতার করে। তাদের বাড়ি রাজবাটি এলাকাতেই। বৃহস্পতিবার দুপুরেই পুলিশ গণধর্ষণের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত মহম্মদ শাহাবুদ্দিন ওরফে ক্যাশকে গ্রেফতার করেছিল। শুক্রবার ধৃত তিন জনকে বারাসত জেলা আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তাদের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জেরায় ধৃতেরা পুলিশের কাছে অপরাধের কথা কবুল করেছে।’’

Advertisement

মধ্যমগ্রামে গণধর্ষণ

“একই ঘরের মধ্যে বসে মহিলার স্বামীর সঙ্গে বসে মদ খেতো ক্যাশ। ফলে তার ধারণা হয়েছিল, মহিলার সঙ্গে
সহজেই ঘনিষ্ঠ হওয়া যাবে। বাধা পেতে হবে, এমন আন্দাজ করতে পারেনি সে।” তদন্তকারী পুলিশ অফিসার।

প্রসঙ্গত, বুধবার রাত ১২টা নাগাদ রাজবাটি গ্রামের বাসিন্দা বছর একুশের এক বধূকে গণধর্ষণ করে এলাকারই তিন যুবক। তাদের মধ্যে ক্যাশকে মহিলা চিনতে পেরেছিলেন। বাকি দু’জন তাঁর মুখচেনা হলেও নাম জানতেন না। অভিযোগ, ওই তিন যুবক মাঝরাতে কাঠ-দরমার দরজা লাথি মেরে খুলে মহিলার ঘরে ঢুকে পড়ে। সাড়ে তিন বছরের ঘুমন্ত শিশুর মাথায় বন্দুক ধরে রেখে তার মাকে ধর্ষণ করে তিন জন। ঘরের মধ্যেই দুষ্কৃতীরা গুলি চালানোয় তিনি আর প্রতিরোধের সাহস পাননি।

তদন্তে নেমে এবং ধৃতদের জেরা করে পুলিশের দাবি, গোটা ঘটনার পিছনে এলাকায় ওয়াশার তৈরির কারখানার মালিক ক্যাশের মাথা কাজ করেছে। সে-ই বাকি দু’জনকে রাতে মহিলার বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল। কোনও সমস্যা হবে না আশ্বাসও দিয়েছিল সাগরেদদের। ঝুটঝামেলা হলে সে সামলে নেবে বলেও আশ্বস্ত করেছিল। পুলিশ জানতে পেরেছে, মহিলার স্বামীর সঙ্গে ক্যাশের বন্ধুত্ব আছে। মাঝে মধ্যে ক্যাশ মহিলার বাড়িতে গিয়ে রাতে তাঁর স্বামীর সঙ্গে মদ্যপান করত। একই ঘরে থাকতেন ওই মহিলা। ঘরে একটাই খাট। খাটে বসেই মদ্যপান চলত। আমের মরসুমে মহিলার স্বামী প্রায় দিনই সন্ধ্যায় গাড়িতে আম নিয়ে কলকাতায় চলে যান। ফিরে আসেন সকালে। বুধবার রাতে মহিলার স্বামী বাড়িতে ছিলেন না, সেই খবর ছিল ক্যাশের কাছে। এই সুযোগেরই অপেক্ষায় ছিল সে।

তদন্তকারী এক অফিসারের কথায়, ‘‘যেহেতু একই ঘরের মধ্যে বসে মহিলার স্বামীর সঙ্গে সে মদ খেত, ফলে ক্যাশের ধারণা হয়েছিল, মহিলার সঙ্গে সহজেই ঘনিষ্ঠ হওয়া যাবে। বাধা পেতে হবে, এমন আন্দাজ করতে পারেনি সে। এমনকী, ঘটনার পরেও ক্যাশের মনে হয়েছিল, বড় কোনও গোলমাল পাকাবে না। মহিলার স্বামীকে দিয়ে গোটা ব্যাপারটা গুছিয়ে নিতে পারবে সে। এ ব্যাপারে তার এতটাই ভরসা ছিল যে কুকর্ম ঘটিয়েও নিশ্চিন্তে বসেছিল নিজের বাড়িতে। বৃহস্পতিবার সেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন