অন্তঃসত্ত্বা ডলফিন! ভাইরাল ভিডিয়ো নিয়ে জল্পনা

রবিবার ডলফিনটির ময়নাতদন্তের একটি ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, এক ব্যক্তি গ্লাভস পরে ছুরি দিয়ে ডলফিনের পেটের ধার বরাবর কাটছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাঁথি শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৯ ০০:৪৫
Share:

ময়নাতদন্তের এই ভিডিয়োই ভাইরাল হয়েছে সোস্যাল মিডিয়ায়।

অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে ডলফিনটির!

Advertisement

সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ডলফিনের দেহের ময়নাতদন্তের একটি ভিডিয়ো (সত্যতা আনন্দবাজার যাচাই করেনি) ঘিরে সামনে এসেছে সেই প্রশ্ন। শুরু হয়েছে জোর জল্পনা।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ভগবানপুর-২ ব্লকের উদবাদাল খালে একটি গ্যাঞ্জেটিক প্রজাতির ডলফিনকে সাঁতার কাটতে দেখা গিয়েছিল। তাকে ‘তাড়া’ করে বড় নদীতে পাঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন বনকর্মীরা। কিন্তু সেই চেষ্টা বৃথা যায়। শনিবার সকালে নেতুড়িয়ার কাছে দাড়িদিঘি ক্যানালে ডলফিনটিকে মৃত অবস্থায় ভাসতে দেখা যায়। ডলফিনটির দেহ তমলুকে সদর পশু চিকিৎসালয়ে ময়নাতদন্ত করা হয়। ওই ময়না তদন্তের রিপোর্টে উল্লেখ ছিল, ডলফিনটি ‘হার্ট ফেল’ করে মারা গিয়েছে। সে কথা জানিয়েছিলেন খোদ জেলা বন আধিকারিক। এমন কী ময়নাতদন্তের রিপোর্টে ওই ডলফিন ক্লান্ত ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে বলে বন দফতর জানিয়েছে।

Advertisement

রবিবার ডলফিনটির ময়নাতদন্তের একটি ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, এক ব্যক্তি গ্লাভস পরে ছুরি দিয়ে ডলফিনের পেটের ধার বরাবর কাটছেন। পেট থেকে সাদা একটি অংশ বের করে বাইরে রাখা হয়েছে। তার পরে ডলফিনের বাচ্চার মতো দেখতে একটি দেহাংশ বার করে আনা হল। ওই সময় আশপাশে থাকা কয়েকজনকে ‘বাচ্চা-বাচ্চা’ বলতে শোনা যায়।

দেহাংশ দেখে অনেকেরই দাবি, সেটি আসলে ডলফিনের বাচ্চাই। যদিও সত্যিই সেটি ডলফিনের বাচ্চা, না তার দেহের কোনও অংশ— সে বিষয়ে প্রশাসনিক তরফে কেউ মুখ খোলেননি। এ ব্যাপারে কথা বলতে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বন আধিকারিক স্বাগতা দাসকে ফোন করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি।

পশুপ্রেমীরা জানাচ্ছেন, এ ধরনের ডলফিন বছরের মধ্যে তিনবার বাচ্চা প্রসব করে। তবে হালকা শীতের আমেজ পেলে তারা ঝাঁক থেকে পৃথক হয় অপেক্ষাকৃত ছোট নদী এবং নাসিক খালে ঢুকে বাচ্চা প্রসব করতে স্বচ্ছন্দ বোধ করে। ফলে এই ডলফিনটিও বাচ্চা প্রসবের জন্য এসেছিল কি না, সে নিয়ে একটা প্রশ্ন উঠেছে। আর সত্যিই যদি সেটির পেটে বাচ্চা থেকে থাকে, তবে ডলফিনকে তাড়া করাটা যে বন দফতরের উচিত হয়নি, সে নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে।

পূর্ব মেদিনীপুরের সহ-মৎস্য অধিকর্তা (সামুদ্রিক) সুরজিৎ বাগ বলেন, ‘‘ডলফিনকে তাড়া করে নিয়ে যাওয়ার আগে পেটে বাচ্চা ছিল কি না, সে সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত ছিল বন দফতরের। পেটে বাচ্চা থাকলে তার ক্লান্ত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।’’

বন দফতর ময়নাতদন্তের রিপোর্ট কেন প্রকাশ্যে আনছে না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে রাজনৈতিক দলগুলি। সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফ নেতা ঝাড়েশ্বর বেরা বলেন, ‘‘ডলফিন নিয়ে গোড়া থেকেই অবহেলা করেছে বন দফতর। তার পেট থেকে মৃত বাচ্চা বেরনোর ঘটনা গোপন রাখতে চাইছে এখন। ডলফিনের মৃত্যু নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত করে দোষী বন আধিকারিকদের শাস্তির দাবি জানিয়ে হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’’ ডলফিনের মৃত্যুতে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি করেছেন কাঁথি-৩ পঞ্চায়েত সমিতির বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ কণিষ্ক পণ্ডা। তাঁর দাবি, ‘‘ডলফিন নিয়ে বিতর্ক যাতে না থাকে, তার জন্য অবশ্যই সকলকে জানিয়ে ডলফিনের ময়নাতদন্ত করা দরকার। কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’’

সোমবার জেলার অতিরিক্ত বন আধিকারিক বলরাম পাঁজা বলেন, ‘‘ডলফিনের মৃত্যু নিয়ে কোনও টাস্ক ফোর্স গঠনের কথা জানা নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন