হিংসায় এগিয়ে মমতার জমানা, রিপোর্ট কেন্দ্রের

সংসদে বিজেপি-র বিরুদ্ধে অসহিষ্ণুতাকে তুলে ধরে দলের সাংসদদের পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন ভোট-যুদ্ধের মহড়া সারার নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। কিন্তু সেই অস্ত্রই এ বার ব্যুমেরাং হয়ে ফিরে আসার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় যথেষ্ট চিন্তিত তিনি!

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী ও অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৪:০৯
Share:

সংসদে বিজেপি-র বিরুদ্ধে অসহিষ্ণুতাকে তুলে ধরে দলের সাংসদদের পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন ভোট-যুদ্ধের মহড়া সারার নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। কিন্তু সেই অস্ত্রই এ বার ব্যুমেরাং হয়ে ফিরে আসার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় যথেষ্ট চিন্তিত তিনি! নবান্ন প্রস্তুতি নিচ্ছে পাল্টা কৌশল রচনার।

Advertisement

ঘটনার সূত্রপাত গত কাল লোকসভায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের আমলে রাজ্যে অসহিষ্ণুতার জেরে হিংসাত্মক ঘটনা বাড়ছে, তা তথ্যসমেত সংসদে পেশ করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। আজ সকালেই মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে সচিব গৌতম সান্যাল সেই রিপোর্ট তৃণমূলের সংসদীয় দফতরের
কাছে আপৎকালীন ভিত্তিতে চেয়ে পাঠান। কিন্তু সে সময় রাজ্যসভার অচলাবস্থা সামলাতে দীর্ঘ বৈঠকে ব্যস্ত ছিলেন দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন। অন্য দিকে, বন্যা নিয়ে বিতর্কে পশ্চিমবঙ্গের প্রসঙ্গটি তুলবেন বলে লোকসভা ছাড়েননি ওই কক্ষের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। বিকালে সুদীপবাবু সংসদীয় দফতরে ফিরে শোনেন, দলনেত্রী আপৎকালীন ভিত্তিতে রিপোর্টটি চাইছেন। তখন তা জোগাড় করে অবিলম্বে নবান্নে ফ্যাক্স করা হয়।

তৃণমূল সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় তথ্য খতিয়ে দেখে একটি পাল্টা বিবৃতি জারি করতে পারে রাজ্য। কারণ তৃণমূল নেতৃত্বের আশঙ্কা, কেন্দ্রের তথ্যকে কাজে লাগিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রচারে যেতে পারে বিজেপি এবং সিপিএম।

Advertisement

কিন্তু কী রয়েছে লোকসভায় পেশ করা এই তথ্যে? দেখা যাচ্ছে, গত বছর যে সংখ্যক হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছিল, এ বছরের প্রথম ১০ মাসেই তার থেকে অনেক বেশি ঘটনা ঘটেছে। কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪-য় ১৬টি হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছিল। ২০১৫-য় জানুয়ারি থেকে অক্টোবরের মধ্যেই ২৪টি ঘটনা ঘটে গিয়েছে। দেশ জুড়ে অসহিষ্ণুতার আবহ এবং সেই আবহে হিংসাত্মক সংঘর্ষের ঘটনা বৃদ্ধি নিয়ে যখন জাতীয় রাজনীতিতে বিতর্ক তুঙ্গে, তখন কেন্দ্রীয় সরকারের এই তথ্য পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য রাজনীতিতে চাঞ্চল্য তৈরি করতে পারে। তৃণমূলের অভিযোগ, অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে এই সব ঘটনা বাড়ছে বলে দেখাতে চাইছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। কিন্তু কেন্দ্রের যুক্তি, রাজ্য থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই তো সংসদে এই পরিসংখ্যান পেশ করা হয়েছে! এর পিছনে রাজনীতি নেই।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজুর বক্তব্য, ‘‘কোনও রাজ্যে বিজেপি-র সরকার রয়েছে, কোথাও আবার অন্য দলের সরকার চলছে। কিন্তু কোথাও কোনও ঘটনা ঘটলে কোন রাজ্যে কোন দলের সরকার রয়েছে, সেই হিসেবে দেখা হয় না। যখন উত্তরপ্রদেশে ঘটনা ঘটল, আমরা বলিনি যে, ওখানে সমাজবাদী পার্টির সরকার রয়েছে বলে এটা অন্য নজরে দেখব! ঘটনা কতখানি গুরুতর, তার ভিত্তিতেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’’

কেন্দ্রীয় সরকার কোথা থেকে এই পরিসংখ্যান পেল, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল। যদিও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর যুক্তি, ‘‘আইন-শৃঙ্খলা রাজ্যের বিষয়। রাজ্য পুলিশের কাছেই এই সব ঘটনার মামলা দায়ের হয়। তাই রাজ্য থেকেই আমরা তথ্য পেয়ে থাকি।’’ কোনও বড় ঘটনা ঘটলে সে বিষয়ে রাজ্যের কাছেই বিশদ রিপোর্ট চাওয়া হয় বলে তাঁর ব্যাখ্যা।

তৃণমূলের সাংসদ সৌগত রায়ের অভিযোগ, উত্তরপ্রদেশের মতো যে সব রাজ্যে বিজেপি-র সাংসদ বেশি, সেখানেই এই ধরনের ঘটনা বেশি ঘটছে। সুদীপবাবুরও দাবি, বিজেপি-শাসিত গুজরাত, মহারাষ্ট্র বা মধ্যপ্রদেশের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে এই ধরনের ঘটনা অনেক কম। কিন্তু সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম পাল্টা বলছেন, ‘‘বাস্তবে যা ঘটনা ঘটছে, এমনিতেই রাজ্য সরকার তার থেকে অনেক কম করে দেখাচ্ছে। অসহিষ্ণুতার জেরে অশান্তি হলেও পুলিশ রাজনৈতিক সংঘর্ষ বা সাধারণ দুর্ঘটনা বলে মামলা দায়ের করছে। কম করে দেখানোর পরেও যদি পরিসংখ্যান বলে এই সব ঘটনা বাড়ছে, তা হলে পরিস্থিতি সত্যিই উদ্বেগজনক!’’

ব্যুমেরাংয়ের ভয়েই এখন তড়িঘড়ি নতুন প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে নবান্নকে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন