কর্ত্রী যখন কর্ম-পূজায়: হাফ-ছুটির নবান্নে বিশ্বকর্মা পুজো। সঙ্গে পেট পুরে খিচুড়িও। ঠাকুর দেখতে হাজির স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
শিল্পের চেহারা যতই চাকচিক্যহীন হোক, শিল্পের দেবতা বিশ্বকর্মাকে নিয়ে উৎসব তাতে থেমে থাকবে কেন!
তাই এ বার সরকারি কর্মীদের শুধু অর্ধদিবস ছুটির মজাই নয়, বাড়তি পাওনা হল পাত পেড়ে গরম খিচুড়ি। বুধবার নবান্নে বিশ্বকর্মা পুজো উপলক্ষে এই খিচুড়ির আসরে যোগ দেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং। সঙ্গে সর্বস্তরের আমলারা তো ছিলেনই।
এ দিন সকালে নবান্নে গিয়ে দেখা যায়, অফিস চত্বরের বাইরে রান্নার তোরজোর চলছে। চারদিকে বেশ উৎসবের চেহারা। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বাইরে থেকে ঠাকুর আনা হয়েছে। বড়-বড় লোহার কড়াইয়ে খিচুড়ি, লাবড়া রান্না হবে। বিশ্বকর্মা পুজো উপলক্ষ্যে সরকারি কর্মীদের সেই খিচুড়ি খাওয়ানো হবে।
প্রতি বছরই বিশ্বকর্মা পুজো করে থাকে পূর্ত দফতর। মহাকরণে প্রতি বছরই ছোট প্রতিমা নিয়ে এসে পুজো সেরে ফেলা হত সংরক্ষিত এলাকার বাইরে। নবান্ন সূত্রে খবর, এ বছর খোদ মুখ্যমন্ত্রীই চান নবান্নে বড় করে পুজো হোক। সেই সঙ্গে ভোগ রান্নারও ব্যবস্থা করা হোক। মুখ্যমন্ত্রী যখন চেয়েছেন, তখন কী আর ছোট করে কিছু করা যায়! ব্যাস পূর্ত দফতরের হাওড়া বিভাগের কর্মীরা পুজোর আয়োজনে লেগে পড়েন। মেনু ঠিক করা হয়, খিচুড়ির সঙ্গে বেগুনি, লাবড়া কিংবা আলুর দম, চাটনি ও একটি করে মিষ্টি খাওয়ানো হবে। এ দিন সেই আয়োজনের কোনও ত্রুটি ছিল না। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকেই দেখা যায় সরকারি কর্মীরা খিচুড়ি রান্না হয়ে গিয়েছে কি না, তার খোঁজ-খবর নিচ্ছেন।
খিচুড়ি খাওয়ার লাইন। বুধবার, নবান্নে।—নিজস্ব চিত্র।
অনেকে টেলিফোনে, কেউ কেউ আবার একেবারে নীচে নেমে রান্নার জায়গায় গিয়ে খোঁজ নিয়ে আসেন। কারণ বিশ্বকর্মা পুজো উপলক্ষে ছুটি হয়ে যাওয়ার কথা দুপুর দু’টোয়। খিচুড়ি খেয়েই একেবারে সটান বাড়ি। তবে রান্না শেষ হতে একটু সময় লগে যায়। দুপুর দেড়টা থেকে প্লাস্টিকের প্লেটে কিংবা শালপাতার থালায় শুরু হয় খিচুড়ি পরিবেশন। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, রীতিমতো গোবিন্দভোগ চালের সঙ্গে সোনা মুগের ডাল দিয়ে রান্না করা হয়েছিল খিচুড়ি। চাটনি করা হয়েছিল টোম্যাটো, খেজুর, আমসত্ত্ব আর কিসমিস দিয়ে। লাবড়ার স্বাদ আনতে, দেওয়া হয়েছিল সব ধরনের সব্জি। খাবার পরিবেশন শুরু হতেই লাইন পড়ে যায় সরকারি কর্মীদের। খিচুড়ি খাওয়ার পরে এক কর্মী রসিকতা করে বলেন, “আমরা ডিএ চাই না। যদি সরকার প্রতিদিন এই ভাবে কর্মীদের জন্য মিড-ডে মিলের ব্যবস্থা করতে পারে।”
বিশ্বকর্মা পুজোর আয়োজন করা হয়েছিল নবান্নের ন’তলায় পুর্ত সচিবের ঘরের পাশেই। বেশ বড় মূর্তিই বসানো হয়েছিল সেখানে। নানা ধরনের ফুল, আলপনা দিয়ে সেজেছিল পুজোর জায়গা। বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্নে ঢুকেই ন’তলায় চলে যান। সঙ্গে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর সচিব গৌতম সান্যাল এবং শিল্পী ইন্দ্রনীল সেন। সেখানে আগে থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন পূর্তমন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তী, পূর্ত সচিব ইন্দিবর পাণ্ডে এবং পূর্ত দফতরের অফিসারেরা। পায়ের চটি খুলে ঠাকুরের সামনে দাঁড়ান মুখ্যমন্ত্রী। পুজোর জায়গা সুন্দর সাজানো হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন মমতা। এর পরেই তিনি ইন্দ্রনীল সেনকে একটি গান গাইতে বলেন। ‘আলোকের এই ঝর্না ধারায়’ গাইতে শুরু করেন ইন্দ্রনীল। আর তাঁর সঙ্গে তখন গলা মেলান মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে উপস্থিত অনেকেই। এর পরেই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একটি ঘরে ঢোকেন আমলারা। কলাপাতা দেওয়া মাটির প্লেটে তাঁদের জন্য খিচুড়ি খাওয়ার আয়োজন করা হয়েছিল সেখানেই। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ভোগ খান তাঁর সচিবালয়ের অফিসার, মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, ডিজি-সহ অন্যরা। আয়োজন দেখে মুখ্যমন্ত্রী খুশি হয়েছেন বলেই জানিয়েছেন আফিসারেরা। সকলে খিচুড়ি খেয়েছেন কি না, তার খোঁজও নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পুজোর আয়েজন পুরোটা করেছে দফতরের কর্মীরাই। এ বছর যেহেতু মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছায় বড় করে পুজো হচ্ছে, তাই বাজেটও ছিল কিছুটা বেশি। খরচ তুলতে পূর্ত দফতরের কর্মীরা সকলে মিলেই চাঁদা দিয়েছেন। এক কর্তা বলেন, প্রায় দেড় হাজার সরকারি কর্মী খিচুড়ি প্রসাদ খেয়েছেন। খাওয়া-দাওয়া চলেছে বিকেল ৪টে পর্যন্ত। বাদ যাননি নবান্নের নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকা পুলিশকর্মীরা। যোগ দেন উপস্থিত সাংবাদিকেরাও।
খিচুড়ি খেয়ে বাড়ি ফেরার পথে এক সরকারি কর্মীর মন্তব্য, “এই সরকার ডিএ দেয় না বটে, তবে আনন্দে রেখেছে!”