পোস্তার উড়ালপুল ভেঙে পড়ার ঘটনায় গ্রেফতারির হাত থেকে ছাড় পেলেন না কেএমডিএ-র দুই কর্তা।
বিবেকানন্দ রোড উড়ালপুল ভেঙে পড়ার ঘটনায় কেএমডিএ আধিকারিকদের নাম বাদ রেখেই মঙ্গলবার দুপুরে ব্যাঙ্কশাল আদালতে ২৬০০ পাতার চার্জশিট পেশ করেছিল কলকাতা পুলিশ। আর সন্ধ্যায় লালবাজারে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদের পরে দুই আধিকারিককে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ জানায়, ধৃতদের নাম প্রিয়তোষ ভট্টাচার্য এবং শান্তনু মণ্ডল। প্রিয়তোষবাবু অবশ্য সম্প্রতি অবসর নিয়েছেন। তবে পোস্তার উড়ালপুল ভেঙে পড়ার সময়ে তিনি কর্মরত ছিলেন। উড়ালপুল বিপর্যয়ের পরপরই তাঁদের সাসপেন্ড করা হয়।
কিন্তু চার্জশিট পেশ করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হঠাৎ কেন ওই দু’জনকে গ্রেফতার করা হল?
গোয়েন্দা সূত্রে বলা হচ্ছে, মঙ্গলবার ছিল মামলা রুজু হওয়ার পর থেকে ৮৯তম দিন। ৯০ দিনের মধ্যে চার্জশিট না দিতে পারলে এর আগে ধৃত ১০ জন জামিন পেয়ে যেতে পারতেন। আর সোমবার বা চার্জশিট পেশের ঠিক আগে ওই দু’জনকে গ্রেফতার করলে অভিযুক্ত পক্ষ আদালতে দাবি করতে পারত, তদন্ত তার মানে এখনও অসম্পূর্ণ। সেখানে বেকায়দায় পড়ে যেতে পারত পুলিশ। সেই জন্য চার্জশিট পেশ করার পরে কেএমডিএ-র ওই দুই আধিকারিককে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তা ছাড়া, এ দিন পুলিশ আদালতে আবেদন করেছে, যাতে প্রয়োজনে উড়ালপুল বিপর্যয়ের তদন্তে আরও এগোনো যায় এবং সে জন্য আরও গ্রেফতার ও তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করা যায়। ওই আবেদন মঞ্জুর করেছেন বিচারক। আর ঠিক তার পরেই কেএমডিএ-র দুই কর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কলকাতা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) বিশাল গর্গের যুক্তি, ‘‘তদন্তের স্বার্থে কেএমডিএ-র দুই কর্তাকে গ্রেফতার করতে হয়েছে।’’
কেএমডিএ সূত্রে খবর, ওই উড়ালপুলটি নির্মাণের সময়ে প্রিয়তোষবাবু ছিলেন চিফ ইঞ্জিনিয়ার পদে। শান্তনু মণ্ডল কেএমডিএ-র এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার। তাঁরা দু’জনেই কেএমডিএ-র তরফে বিবেকানন্দ উড়ালুপল নির্মাণের তদারকির দায়িত্বে ছিলেন। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ওই উড়ালপুলের নকশায় ত্রুটি ছিল। তা সত্ত্বেও নির্মাণকারী সংস্থার কাজে আপত্তি তোলেননি ওই দুই অফিসার। কেএমডিএ-র পক্ষ থেকে নির্মাণকারী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রাখার পাশাপাশি সমস্ত কাজের দেখভালের কথা ছিল তাঁদের। যেটা তাঁরা করেননি এবং এ ক্ষেত্রে ওই দু’জনের চূড়ান্ত গাফিলতির প্রমাণ মিলেছে বলে গোয়েন্দাদের দাবি।
এ দিন দুপুরে ব্যাঙ্কশাল আদালতে চার্জশিট জমা দেন লালবাজারের তদন্তকারীরা। চার্জশিটে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় খুনের অভিযোগ নয়, তার বদলে ৩০৪ ধারায় অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানোর মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে।