রেল-জলাতঙ্কে যৌথ চিকিৎসা, আশ্বাস মন্ত্রীর

সমন্বয়ে খামতির ক্ষতটা প্রকট করে দিয়েছিলেন পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার। পরের দিনই খোদ রেল প্রতিমন্ত্রী এসে সেই ক্ষতে আশ্বাসের প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টা করলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৪১
Share:

সমন্বয়ে খামতির ক্ষতটা প্রকট করে দিয়েছিলেন পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার। পরের দিনই খোদ রেল প্রতিমন্ত্রী এসে সেই ক্ষতে আশ্বাসের প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টা করলেন।

Advertisement

রেল প্রতিমন্ত্রী রাজেন্দ্র গোহাঁই শুক্রবার কলকাতায় জানান, রেলের কোনও শাখাতেই একক ভাবে জল-সমস্যা মেটানোর চেষ্টা হচ্ছে না। হাওড়া-টিকিয়াপাড়া রেল-চত্বরে জল জমা বন্ধ করার জন্য সার্বিক ভাবেই নতুন পরিকল্পনা করবেন রেল-কর্তৃপক্ষ। তবে সমস্যাটি ঘোরালো। তাই পরিকল্পনা করতে সময় লাগবে। এ দিন কলকাতায় সারা ভারত তফসিলি জাতি ও উপজাতি রেল কর্মচারী সমিতির বার্ষিক সভায় যোগ দিতে এসে গোহাঁই এই আশ্বাস দিয়ে আসলে দক্ষিণ-পূর্ব আর পূর্ব রেলের মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতিটাই চাপা দিতে চেয়েছেন বলে জানায় রেল শিবির।

রবি ও সোমবারের ভারী বর্ষণে হাওড়া স্টেশন লাগোয়া বিস্তীর্ণ এলাকা এবং টিকিয়াপাড়া কারশেড জলের তলায় চলে যায়। বেহাল হয়ে পড়ে রেল পরিষেবা। পূর্ব রেলের হাওড়া-বর্ধমান এবং বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাওড়া-খড়্গপুর লাইনের বেশির ভাগ ট্রেনই বন্ধ হয়ে যায়। দিন তিনেক চূড়ান্ত দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রীদের। হাওড়া কারশেড এলাকার জল কেন নিকাশি নালা দিয়ে বার করা যাবে না, কেনই বা জমা জলে ট্রেন বন্ধ হয়ে যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়বেন, সেই সব প্রশ্ন তুলে পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলাও ঠুকে দিয়েছেন বৃহস্পতিবার।

Advertisement

রেল পরিবারের দু’ভাই দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্ব রেল এবং হাওড়া পুরসভার যৌথ উদ্যোগ ছাড়া জল জমার এই বার্ষিক সমস্যার সুরাহা হবে না বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। তাঁদের বক্তব্য, সমাধানের জন্য চাই তিন পক্ষের সমবেত সক্রিয়তা। পুরসভা তো তৃতীয় পক্ষ। ভাইয়ে-ভাইয়ে ঠোকাঠুকিটা বেআব্রু হয়ে যায় পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজারের এক উক্তিতেই। বৃহস্পতিবার কলকাতায় বণিকসভার একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার ঘনশ্যাম সিংহ জানান, তাঁরা হাওড়ায় শুধু পূর্ব রেলের অংশে লাইনে জল জমা বন্ধ করতে একটি উপদেষ্টা সংস্থাকে নিয়োগ করেছেন। তাদের রিপোর্ট পাওয়া গেলেই তাঁরা নিজেদের অংশে কাজ শুরু করবেন।

রেলের দু’ভাইয়ের মধ্যে খটাখটি কতটা, পূর্ব রেলের ওই কর্তার মন্তব্যেই সেটা স্পষ্ট হয়ে যায়। হতবাক হয়ে যান রেলের প্রাক্তন ও বর্তমান রেলকর্তারা। কারণ, রেল পরিবারে দক্ষিণ-পূর্ব শাখাও পূর্ব রেলের ভাই। ওই এলাকা দিয়ে লাইন গিয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব রেলেরও। তাই পূর্ব রেল একক ভাবে নিজেদের এলাকায় জল জমা কী ভাবে ঠেকাবে, কেনই বা তাদের এ-রকম একলষেঁড়ে ভাবনা— তা নিয়ে রেলের অন্দরেই প্রশ্ন উঠে যায়। এই ধরনের একপেশে পরিকল্পনা করলেও সেটা কতটা সফল হবে, ওঠে সেই প্রশ্নও। তার পরেই, শুক্রবার রেল প্রতিমন্ত্রী কলকাতায় স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, পরিকল্পনা হবে সার্বিক ভাবেই। জল-যন্ত্রণার উপশম খোঁজা হবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে।

বৃহস্পতিবার টিকিয়াপাড়া কারশেড এলাকায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছিল। এ দিন ভোর থেকে ওই লাইনে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের কর্তারা জানান, গত চার দিন ধরে লাগাতার পাঁচটি পাম্প চালিয়ে কারশেডের জল বার করা গিয়েছে বলেই ট্রেন ফিরেছে পুরনো ছন্দে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন