মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।
না-জানিয়ে বাঁধ থেকে জল ছাড়ার জন্য দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (ডিভিসি) কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছিলেন আগেই। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ডিভিসি মাইথন এবং পাঞ্চেত বাঁধ থেকে কত জল ছেড়েছে, সমাজমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে সেই হিসাব তুলে ধরলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানালেন, এই বাঁধগুলি থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ১ লক্ষ ৫০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। মমতার কটাক্ষ, বাংলার মানুষকে পুজোর মধ্যে কষ্ট দিতেই এটি ‘ইচ্ছাকৃত চাল’।
শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন জেলা নেতৃত্বের একাংশের সঙ্গে কালীঘাটের বাড়িতে বৈঠকে বসেন। সেই বৈঠকে উপস্থিত এক নেতার কথায়, “ডিভিসি প্রসঙ্গে দিদি একটা সময় বলেন, প্রয়োজনে আমিও নামব, তোমরাও তৈরি থাকো’।”
শুক্রবার সমাজমাধ্যমে মমতা লিখেছেন, ‘শেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মাইথন এবং পাঞ্চেত বাঁধ থেকে ১ লক্ষ ৫০ হাজার কিউসেক জল একতরফা এবং ইচ্ছাকৃত ভাবে ছেড়েছে ডিভিসি। উৎসবের সময়ে পশ্চিমবঙ্গকে বানভাসি করতেই এই পদক্ষেপ। লক্ষ লক্ষ মানুষজন যখন পুজোয় ব্যস্ত, তখন ইচ্ছাকৃত তাঁদের কষ্ট দেওয়ার জন্য বিপর্যয় ডেকে আনা হচ্ছে। লজ্জাজনক, অসহ্য, অনস্বীকার্য! আমরা প্রতিবাদ করছি।’
এর আগে শুক্রবারই একটি পোস্ট দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছিলেন, ‘বিজয়া দশমী দুর্গাপুজোর সমাপ্তি। আনন্দ, উল্লাস এবং নতুন আশার সময়। তবুও পশ্চিমবঙ্গের জনগণকে শান্তিতে উৎসব শেষ করতে দেওয়ার বদলে, ডিভিসি কর্তৃপক্ষ রাজ্যকে কোনও আগাম বার্তা না-দিয়ে ৬৫০০০ কিউসেক জল ছেড়ে দিয়েছেন।’ এর পরেই কেন্দ্রীয় সংস্থাকে নিশানা করে তাঁর মন্তব্য, ‘এই বেপরোয়া কাজটি আমাদের পবিত্র উৎসবে দুর্দশা সৃষ্টির প্রচেষ্টার চেয়ে কম কিছু নয়। এই ধরনের একতরফা পদক্ষেপ লজ্জাজনক এবং একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।’
মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, ‘অবহিত না-করে জল ছেড়ে দিয়ে, ডিভিসি বাংলার লক্ষ লক্ষ জীবনকে তাৎক্ষণিক বিপদের মধ্যে ফেলেছে। এটি কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, এটি ডিভিসি দ্বারা সৃষ্ট একটি দুর্যোগ। স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমি বাংলার বিসর্জন করতে দেব না কাউকে। আমাদের জনগণের বিরুদ্ধে প্রতিটি ষড়যন্ত্র পূর্ণ শক্তি দিয়ে প্রতিহত করা হবে। মিথ্যার উপর সত্য জয়লাভ করবে। অশুভের উপর জয়লাভ করবে শুভ।’ সমাজমাধ্যমের ওই পোস্টের শেষে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘জয় মা দুর্গা’!
মুখ্যমন্ত্রীর ওই পোস্টের পরে বিতর্কের আবহে মাইথন এবং পাঞ্চেত, দুই জলাধার থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ বৃদ্ধি করে ডিভিসি। জানা গিয়েছে, ৬৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৭০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হচ্ছে দুই জলাধার থেকে। শুক্রবার বিকেলে ডিভিসি সূত্র মারফত জানা যায়, ৭০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া শুরু করেছে তারা। মাইথন জলাধার থেকে ৪২ হাজার ৫০০ কিউসেক এবং পাঞ্চেত জলাধার থেকে ২৭ হাজার ৫০০ কিউসেক জল ছাড়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে দামোদর তীরবর্তী অঞ্চলগুলির জন্য কমলা সতর্কতা জারি করেছে তারা। অন্য দিকে, মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ডিভিসির এক কর্তা বলেন, ‘‘ডিভিসি নিজের ইচ্ছায় জল ছাড়ে না। জল ছাড়তে আমরা বাধ্য। এবং আবারও বলছি, পশ্চিমবঙ্গ এবং ঝাড়খণ্ড সরকারকে জানিয়েই জল ছাড়া হয়।’’ তার পরেই মুখ্যমন্ত্রী আবার পোস্ট দিয়ে জানান, শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ১ লক্ষ ৫০ হাজার কিউসেক জল ছেড়েছে ডিভিসি।
প্রসঙ্গত, ডিভিসির জল ছাড়ার ফলে দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলা আবার জলমগ্ন হতে পারে। এমনিতে গত দু’দিন ধরে আসানসোল, দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে অনবরত বৃষ্টি হচ্ছে। সেই জলও মিশছে দামোদর নদে। ফলে দুর্গাপুরে রাজ্য সেচ দফতরের জলাধারেরও জলধারণ ক্ষমতা পেরিয়েছে। ডিভিসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বিশেষ করে বর্ধমান, হাওড়া এবং হুগলি জেলায় দামোদর তীরবর্তী এলাকাগুলিতে সতর্কতা জারি হয়েছে। উল্লেখ্য, গত জুন-জুলাই মাসেও হাজার হাজার কিউসেক জল ছেড়েছিল ডিভিসি। সেই সময় এমনিতেই নিম্নচাপের জেরে টানা বৃষ্টির ফলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল বাঁকুড়া, পূর্ব বর্ধমান, হুগলির মতো জেলায়। তার মধ্যে ডিভিসি-ও জল ছাড়ায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। সে সময়ও ডিভিসির দিকে আঙুল তুলেছিলেন মমতা।