international women's day

নারী দিবসে অরণ্যপ্রেমী সীমাকেই অভিবাদন বনকর্তাদের

অরণ্যেই জীবন তাঁর। কোনও বিপদ আপদের খবর পেলেই হল। দ্রুত পৌঁছে যান। জঙ্গল পাহারা দেওয়া থেকে শুরু করে বন্যপ্রাণীদের উপর নজরদারি— সবেতেই আছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২১ ২২:১৬
Share:

সীমা দেবী।

অরণ্যেই জীবন তাঁর। কোনও বিপদ আপদের খবর পেলেই হল। দ্রুত পৌঁছে যান। জঙ্গল পাহারা দেওয়া থেকে শুরু করে বন্যপ্রাণীদের উপর নজরদারি— সবেতেই আছেন। এমনও হয়েছে চিতাবাঘের হামলায় জখম গ্রামবাসীকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটেছেন নিজেই। আবার বন্যপ্রাণীদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ গ্রামবাসীদের বিক্ষোভ থামাতেও পৌঁছে গিয়েছেন। ৯ বছর ধরে এরকমই চলে আসছে। ২০১২ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিশেষ সম্মানে ভূষিত করেছিলেন। তারপর থেকে একটা দিনও কর্তব্যচ্যুতি হয়নি। কারণ তিনি মনে করেন, মুখ্যমন্ত্রী যে দায়িত্ব তাঁকে দিয়েছেন, তা পালন করাই তাঁর কর্তব্য। ডুয়ার্সের অনারারি ওয়াইল্ডলাইফ ওয়ার্ডেন সীমা চৌধুরী তাই দায়িত্বে অবিচল। বিনা পারিশ্রমিক, বিনা স্বার্থে নিরন্তর জঙ্গলকে ভালোবেসে শুধু কাজ করে চলেছেন। সোমবার আন্তর্জাতিক নারী দিবসেই তাঁকেই স্যালুট করলেন ডুয়ার্সের বনবিভাগের কর্তা ও পরিবেশপ্রেমীরা।

Advertisement

দিনের ২৪ ঘণ্টার অনেকটাই তাঁর কাটে বনে জঙ্গলে। সকাল-দুপুর বা রাত, সময়ের পরোয়া করেন না সীমা। একা জঙ্গলে, চোরাশিকারি, বন্য প্রাণী, ভয় করে না?

সীমা বললেন, ‘‘এটা আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। অনেকেই ভাবেন আমি একজন মহিলা হয়ে কী ভাবে পুরুষের মতো কাজ করছে। আসলে মহিলা-পুরুষ বিষয়টা আমার মাথাতেই আসে না। বন-জঙ্গল, বন্যপ্রাণী, প্রকৃতিকে ভালবেসেই এই কাজটা করি। কোনও ভয় ভীতিকে প্রশ্রয় দিই না। এই দায়িত্ব আমায় ভরসা করে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী দিয়েছন। তার ভরসা অটুট রাখতে আমি আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাই।’’

Advertisement

ডুয়ার্সের প্রাণকেন্দ্র চা বাগিচার সাকোয়াঝোরা-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের গয়েরকাটার বাসিন্দা সীমা। মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া সাম্মানিক পদ আছে। কিন্তু তিনি সরকারি কর্মচারী নন। কোনও পারিশ্রমিকও পান না।

তা হলে সব ছেড়ে জঙ্গলে কেন? বছর কয়েক আগে ডুয়ার্সের মোরাঘাট রেঞ্জের গোসাইরহাট জঙ্গলে বুনো দাঁতাল হাতিকে মেরে তার দাঁত চুরি করেছিল চোরাশিকারিরা। ২০১২ সালে দায়িত্ব পেয়েই গভীর রাতে জঙ্গলে ঢুকে ৫০ কেজি ওজনের সেই হাতির দাঁত খুঁজে বের করেছিলেন সীমা। জঙ্গলে এক ডোবার ভিতর লুকনো ছিল ওই দাঁত। রাত দিন এক করে খুঁজে বের করেছিলেন সীমা। তারপরই তাঁর সুনাম ছড়িয়ে পড়ে রাজ্যে। গুরুত্বও বাড়তে থাকে তার।

নারী দিবসে তাই সীমাকেই কুর্নিশ করেছেন স্থানীয় বন কর্তা ও পরিবেশপ্রেমীরা। ওদলাবাড়ি পরিবেশপ্রেমী সংগঠন ন্যাসের কর্মকর্তা নফসর আলি বলেন, ‘‘বিশ্ব নারী দিবসে ওঁকেই শ্রদ্ধা জানাব। কারণ তিনি যে ভাবে একজন নারী হয়েও বন এবং বন্যপ্রাণকে বাঁচাতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তা আর বাকি পাঁচ জনের থেকে একদমই আলাদা। তাই তিনিই অনন্য এবং অদ্বিতীয়।’’

বিন্নাগুড়ি বন্যপ্রাণ শাখার রেঞ্জার শুভাশিস রায় বললেন, ‘‘যেভাবে প্রত্যেকটা কাজের ক্ষেত্রে ম্যাডাম আমাদের সহযোগিতা করেন সেটা বলে বোঝানো যাবে না। কারণ বন্যপ্রাণ রক্ষা করার ক্ষেত্রে তার যতটা আগ্রহ তা প্রশংসনীয়।’’

গরুমারার বন্যপ্রাণ বিভাগের ডিএফও নিশা গোস্বামী বলেন, ‘‘সীমা দেবী যেভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তা প্রশংসার দাবি রাখে। বন দফতরের কাজে তাঁর সহযোগিতা বলে বোঝানো যাবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন