নজরে আরও বিনিয়োগ

‘এক-জানলা’ এ বার আইন হচ্ছে রাজ্যে

এক জানলা ব্যবস্থার পাশাপাশি লগ্নি টানতে একাধিক কমিটি আগেও হয়েছে। বড় প্রকল্পের জন্য ‘রিলেশনশিপ ম্যানেজার’ নিয়োগ করারও নির্দেশ দিয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু এর পরেও শিল্পমহলের ক্ষোভ থেকেই গিয়েছে।

Advertisement

দেবজিৎ ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৭ ০৯:৫০
Share:

শিল্প গড়ার ক্ষেত্রে বিবিধ ঝক্কি এড়াতে ‘এক জানলা’ প্রথা চালু হয়েছিল বাম আমলেই। বর্তমান সরকার তাতে কিছু বদল করলেও গোটা ব্যবস্থাকে খুব একটা সক্রিয় করে তোলা যায়নি। বিনিয়োগের অঙ্ক মাথায় রেখে এ বার এক জানলা-কে আইনের আওতায় আনতে চলেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।

Advertisement

গত মঙ্গলবার বিধানসভায় মন্ত্রিসভার বৈঠকে ওই প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। সূত্রের খবর, চলতি অধিবেশনেই বিধানসভায় এ সংক্রান্ত বিল পাশ করবে শিল্প দফতর। বিলের নাম দেওয়া হয়েছে, ‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল সিঙ্গল উইন্ডো সিস্টেম (ম্যানেজমেন্ট, কন্ট্রোল অ্যান্ড মিসলেনিয়াস প্রভিশনস, ২০১৭)’। শিল্পসচিব রাজীব সিংহ বলেন, ‘‘আশা করছি, এক মাসের মধ্যে নয়া আইনে কাজ শুরু করে দেওয়া যাবে।’’

এক জানলা ব্যবস্থার পাশাপাশি লগ্নি টানতে একাধিক কমিটি আগেও হয়েছে। বড় প্রকল্পের জন্য ‘রিলেশনশিপ ম্যানেজার’ নিয়োগ করারও নির্দেশ দিয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু এর পরেও শিল্পমহলের ক্ষোভ থেকেই গিয়েছে। তাঁদের মতে, মুখ্যমন্ত্রীর সদিচ্ছা নিচুতলায় পৌঁছয়নি। ফলে লাল ফিতের ফাঁস বিশেষ আলগা হয়নি।

Advertisement

সে ক্ষেত্রে আইন করে সমস্যা কতটা মিটবে? সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, এক জানলা সফল করার দায় শুধু শিল্প দফতরের উপরেই চেপে বসেছিল। অন্যান্য দফতর সমান ভাবে সক্রিয় হচ্ছিল না। ঘুরে ফিরে সেই প্রশাসনিক গড়িমসির মুখে পড়ছিলেন বিনিয়োগকারীরা। আইন করার ফলে শিল্পোদ্যোগীদের জন্য সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সরকারি অফিসারদের দায়বদ্ধতাও বাড়বে বলে মনে করছে সরকার। সেই সঙ্গে এই আইন দেখিয়ে রাজ্যের বিনিয়োগমুখী ভাবমূর্তিও তুলে ধরা যাবে বলে আশা সরকারের।

আইন কার্যকর করতে নোডাল এজেন্সি হবে ‘শিল্পসাথী’। একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি তৈরির প্রস্তাবও রয়েছে খসড়া বিলে। শিল্পসচিবকে চেয়ারপার্সন করে কমিটির সদস্য সংখ্যা হবে ১৭। শিল্প ছাড়াও অর্থ, ভূমি, আইন, বিদ্যুৎ, কৃষি, পূর্ত, পঞ্চায়েত, জলসম্পদ উন্নয়ন, পুর ও নগরোন্নয়ন, অগ্নি নির্বাপন দফতরের সচিবদের ওই কমিটিতে রাখা হয়েছে। বিলের খসড়ায় বলা হয়েছে, এক জানলা প্রক্রিয়ার নিয়ন্ত্রণ ও নীতি তৈরির ক্ষমতা থাকবে কমিটির হাতে। সংশ্লিষ্ট দফতরগুলি সময় মেনে পরিষেবা দিচ্ছে কি না, তার নজরদারিও করবেন কমিটির সদস্যরা।

শিল্প দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘এখন অনলাইনে আবেদনপত্র জমা দেওয়া গেলেও বাকি কাজটা হাতে হাতেই হয়। এর ফলে কোথাও জমি সংক্রান্ত সমস্যা থাকলে বা দমকলের ছাড়পত্র পাওয়া নিয়ে জটিলতা থাকলে শিল্পোদ্যোগীকে সশরীর সংশ্লিষ্ট দফতরে হাজিরা দিতে হয়।’’ আইন প্রণয়ন হলে সব কিছুই অনলাইনে হবে বলে আশ্বাস দিচ্ছে সরকার। এমনকী, শিল্পোদ্যোগীর আবেদন সংক্রান্ত কোনও দফতরের কোনও প্রশ্ন থাকলে এজেন্সির তরফে অনলাইনেই সব জেনে নেওয়া হবে। আবেদন জমা পড়ার পরে তার অগ্রগতি এসএমএসের মাধ্যমে শিল্পোদ্যোগীকে জানিয়ে দেবে শিল্পসাথী। পাশাপাশি নির্দিষ্ট পোর্টালে এজেন্সির দেওয়া আইডি লগ করে আবেদনকারী নিজেও সেই ফাইলের অবস্থান জেনে নিতে পারবেন।

অন্ধ্রপ্রদেশ, গুজরাত, তামিলনাড়ু, পঞ্জাব, উত্তরাখণ্ড ও তেলেঙ্গানা এক জানলা আইন চালু করেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন