প্রতীকী ছবি।
একে তো বিদ্যুতে রাজস্ব-ক্ষতি বেড়েই চলেছে। তার উপরে বিদ্যুৎ ভবনে কর্মী ইউনিয়নগুলির বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে বিক্ষোভ-আন্দোলনে কাজের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ। দু’টি সমস্যারই দাওয়াই বাতলে দিচ্ছে রাজ্য প্রশাসন।
রাজস্ব-ঘাটতি কমিয়ে আনার আগে বিদ্যুৎকর্মীদের বকেয়া পাওয়া মিলবে না বলে বৃহস্পতিবারেই ইঙ্গিত দিয়েছে মহাকরণ আর শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা কর্তৃপক্ষ নির্দেশিকা জারি করে সব ইউনিয়নকে জানিয়ে দিয়েছে, কাজের সুস্থ পরিবেশ রক্ষা করেই কর্মীদের দাবিদাওয়ার কথা কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। রক্ষা করতে হবে পারস্পরিক সুসম্পর্ক। দাবিসনদ পেশ করতে গেলে ইউনিয়নগুলিকে আগামী দিনে নির্দিষ্ট নিয়মাবলি মেনে চলতে হবে বলে ওই নির্দেশিকায় স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কাজের সময় সরকারি অফিসে বিক্ষোভ-আন্দোলন-মিছিল কার্যত নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু বিদ্যুৎ ভবন-সহ সরকারি বিদ্যুৎ অফিসগুলিতে সেই নিষেধাজ্ঞা মানা হয় না বলে বারবার অভিযোগ উঠছিল বিভিন্ন মহলে। বেশ কিছু দিন ধরেই বকেয়া ডিএ বা মহার্ঘ ভাতার দাবিতে বিভিন্ন ইউনিয়ন বিক্ষোভ, আন্দোলন কর্মসূচি চালাচ্ছে বিদ্যুৎ ভবনে।
বৃহস্পতিবার একটি ইউনিয়ন বণ্টন সংস্থার চেয়ারম্যান রাজেশ পাণ্ডের ঘরের সামনে কার্যত ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখায়, চিৎকার করে স্লোগান দেয়। শুক্রবারেও ‘পেন ডাউন’ করে প্রতিবাদ জানিয়েছে বিদ্যুৎকর্মীদের একটা বড় অংশ। এই ধরনের বিক্ষোভ-আন্দোলনে বিদ্যুতের মতো জরুরি পরিষেবা ক্ষেত্রে কাজের ক্ষতি হচ্ছে বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও অভিযোগ গিয়েছে।
এ দিনের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ইউনিয়নগুলিকে এখন থেকে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে কর্মীদের দাবিদাওয়ার কথা জানাতে আসতে হবে। দল বেঁধে আসা চলবে না, সর্বাধিক চার জন প্রতিনিধি দেখা করতে পারবেন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। আলোচনার সময়টাও নির্দিষ্ট করে জানানো হবে ইউনিয়নগুলিকে। সংস্থার কর্তৃপক্ষের ঘরের সামনে জমায়েত চলবে না। আগাম অনুমতি ছাড়া কাজের সময় বিদ্যুৎ ভবন বা বিদ্যুৎ দফতরের অন্য অফিসেও মিটিং-মিছিলও করা যাবে না। মিটিংয়ে যোগ দেওয়ার জন্য বিভাগীয় প্রধানের অনুমতি নিতে হবে।
বিদ্যুৎ ভবন সূত্রের খবর, যে-সব কর্মী বৃহস্পতিবার চেয়ারম্যানের ঘরের সামনে প্রত্যক্ষ ভাবে জমায়েতে অংশ নিয়েছেন, তাঁদের শো-কজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রাজ্য প্রশাসনও এ ব্যাপারে বণ্টন সংস্থার কর্তৃপক্ষকে কড়া পদক্ষেপ করতে বলেছে। শুক্রবারেও যাঁরা ‘পেন ডাউন’ বা কাজ বন্ধ রেখেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
কী বলছে ইউনিয়নগুলি?
বিদ্যুৎ ভবনে শাসক দলের অনুমোদিত একটি ইউনিয়নের নেতা অরিজিৎ দত্ত জানান, এই ধরনের নির্দশিকা কর্মীদের গণতান্ত্রিক অধিকারের উপরে হস্তক্ষেপ বলেই মনে করছেন তাঁরা। তাঁর দাবি, তাঁরা সব সময় নিয়ম মেনেই আন্দোলন কর্মসূচি পালন করেন।
সিটু সমর্থিত কর্মী ইউনিয়নের নেতা দীপক রায়চৌধুরীও জানান, শ্রমিক ইউনিয়নের নিয়মনীতি মেনে তাঁরা দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন করেন। যে-সব ইউনিয়ন তা মানে না, এই নির্দেশিকা তাদের জন্য। আর সাধারণ কর্মীদের বক্তব্য, তাঁরা ন্যায্য প্রাপ্য আদায়ের জন্যই লড়ছেন।