ধরা পড়তেই চোরের মুখে পুলিশের নাম!

এ যেন কেঁচো খুঁড়তে সাপ! রাতভর ওত পেতে থেকে মোটরবাইক চোরকে ধরলেন মালিক। আর সেই চোরকে চেপে ধরতেই তার মুখে এল পুলিশের নাম!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রামপুরহাট শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৩০
Share:

রামপুরহাট থানার আইসি-কে ঘিরে বিক্ষোভ। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম।

এ যেন কেঁচো খুঁড়তে সাপ!

Advertisement

রাতভর ওত পেতে থেকে মোটরবাইক চোরকে ধরলেন মালিক। আর সেই চোরকে চেপে ধরতেই তার মুখে এল পুলিশের নাম!

রবিবার সকালে রামপুরহাট শহরের নিশ্চিন্তপুরের ওই ঘটনায় মোটরবাইক চুরি চক্রের সঙ্গে পুলিশের আঁতাঁতের অভিযোগে ধুন্ধুমার বেধে গেল পুলিশ-জনতার। উত্তেজিত জনতার সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়েন অভিযুক্ত এসআই (রামপুরহাটের টাউনবাবু)।
তাঁকে উদ্ধার করতে এসে
রোষের মুখে পড়েন রামপুরহাটের আইসি-ও। পুলিশের একটি গাড়ির কাচ ভেঙে দেওয়া হয়। পরে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদে এবং ‘চুরিতে জড়িত’ পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে রামপুরহাট-দুমকা সড়ক অবরোধও করেন বাসিন্দারা। শেষে মোটরবাইক চুরির ঘটনায় মিঠুন মণ্ডল নামে স্থানীয় এক যুবককে এবং মইম শেখ নামে মালদহের বৈষ্ণবনগরের এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রের খবর, শনিবার সন্ধ্যায় বাড়ির সামনে মোটরবাইক রেখেছিলেন রামপুরহাটের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা, পেশায় ব্যবসায়ী মহম্মদ আরিফউদ্দিন খান। বাড়ি থেকে মিনিট কুড়ি পরে বেরিয়ে দেখেন মোটরবাইক উধাও। শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। আরিফউদ্দিন বলেন, “বিস্তর খোঁজার পরে রাত ১১টা নাগাদ রামপুরহাট স্টেশন লাগোয়া একটি বাইক ও সাইকেল স্ট্যান্ডে আমার মোটরবাইক দেখতে পাই। এক যুবক সেটা সেখানে রেখে গিয়েছে বলে স্ট্যান্ডের মালিক আমাকে জানান। আমি তাঁকে আমার ফোন নম্বর দিই। ওই যুবক মোটরবাইক নিতে এলেই আমাকে খবর দিতে বলি।”

তাতেও আশ্বস্ত না হয়ে আরিফুদ্দিন রাতভর ওই স্ট্যান্ডের উপর নজর রাখেন। রবিবার সকাল ৮টা নাগাদ এক যুবক ওই মোটরবাইকটি নিতে আসে। মোটরবাইক নিয়ে স্ট্যান্ড থেকে বেরোতেই আরিফউদ্দিন চিৎকার করে লোকজন জুটিয়ে ওই যুবককে ধরে ফেলেন। তাঁর দাবি, ‘‘চেপে ধরতেই ওই যুবক মোটরবাইক চুরির কথা স্বীকার করে নেয়। ওকে পাড়ায় নিয়ে আসা হয়। আরও জিজ্ঞাসাবাদে মইম শেখ নামে ওই যুবক নিজেকে মালদহের বাসিন্দা বলে জানায়। সেই সঙ্গে মোটরবাইক চুরির চক্রে জড়িত স্থানীয় কয়েক জন চোরের নামও ফাঁস করে দেয়।”

মইম যাদের নাম নিয়েছিল, তাদেরই অন্যতম শহরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মিঠুন মণ্ডল। তত ক্ষণে খবর পেয়ে মইমকে জনতার হাত থেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। অন্য দিকে, এলাকাবাসী মিঠুনের বাড়ি গিয়ে তাকে তুলে আনে। মারমুখী জনতার সামনে মিঠুন এলাকার মোটরবাইক চুরির চক্রে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে নেয়। সংবাদমাধ্যমের সামনে মিঠুন দাবি করে, ‘‘আমরা মোটরবাইক চুরি করে নলহাটির লোহাপুর পর্যন্ত পৌঁছে দিই। সেখান থেকে ফরাক্কা পর্যন্ত চালান দেওয়ার দায়িত্ব অন্যদের ছিল। তার জন্য টাউনবাবু দীপক দাসকে মোটরবাইক অনুযায়ী প্রতি গাড়ি পিছু ২,৫০০-৩০০০ টাকা দিতে হয়।’’ অনেক ক্ষেত্রে ওই পুলিশ অফিসার তাদের হালকা কেস দিয়ে ছেড়েও দিয়েছেন বলে মিঠুনের দাবি। এলাকাবাসীর দাবি, ওই যুবকের কাছ থেকে দীপক দাসের নাম ও ফোন নম্বর লেখা একটি কাগজও মিলেছে।

যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ। টাউনবাবুর দাবি, ‘‘গণপিটুনির ভয়ে ন’মাস জেল খেটে সদ্য ছাড়া পাওয়া ওই পুরনো অপরাধী আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ করেছে।’’ একই বক্তব্য বীরভূমের পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীর কুমারের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন