এগিয়ে এলেন বন্ধু, প্রতিবেশীরা

‘মনে হল বকেয়া টাকা না দেওয়া পর্যন্ত সঞ্জয়ের আত্মা শান্তি পাবে না’

ছাপোষা পরিবার। তবু স্বামীর চিকিৎসায় যাতে ত্রুটি না হয়। যাতে তিনি সুস্থ হয়ে ফিরে আসেন সে জন্য সম্বল বলতে যা ছিল সবই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেন।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

ডানকুনি শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:০৩
Share:

সঞ্জয় রায়

ছাপোষা পরিবার। তবু স্বামীর চিকিৎসায় যাতে ত্রুটি না হয়। যাতে তিনি সুস্থ হয়ে ফিরে আসেন সে জন্য সম্বল বলতে যা ছিল সবই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেন। তা সত্ত্বেও স্বামী সঞ্জয় রায়কে ফিরে পাননি রুবীদেবী। অভিযোগ, টাকার জন্য ঠিকমতো স্বামীর চিকিৎসা করেননি অ্যাপোলো হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলিতির অভিযোগ নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্য তোলপাড়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলিতির অভিযোগও দায়ের করেছেন রুবীদেবী।

Advertisement

যদিও অভিযোগ ওঠার পরে অ্যাপোলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সঞ্জয়বাবুর চিকিৎসাবাবদ যা খরচ হয়েছে সেই টাকা পরিবারকে ফেরত দিতে চেয়েছেন। কিন্তু তা নিতে চাননি মৃত সঞ্জয়ের পরিবার। সোমবার স্বামীর চিকিৎসার খরচ বাবদ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বকেয়া টাকা ফেরত দিতে এসেছিলেন রুবীদেবী। জানালেন চিকিৎসার খরচ বাবদ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁদের কাছ থেকে ফিক্সড ডিপোজিটের কাগজও জমা নিয়েছিলেন। এদিন সেটাই টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে নিতে এসেছেন তিনি। আর এ কাজে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন স্বামীর বন্ধু এবং প্রতিবেশীদের।

হাসপাতালের বকেয়া পুরো টাকাই তাঁরা চাঁদা তুলে সোমবার মিটিয়ে দিয়েছেন। প্রতিবেশীদের কথায়, ‘‘আমাদের প্রিয় সঞ্জয়কে হারালাম চিরতরে। এটুকু না করলে, কীসের মানুষ মানুষ আমরা?’’ সঞ্জয়ের বন্ধু মানস সোম বলেন, ‘‘আমরা তিনদিন সময় চেয়েছিলাম। পরে অন্য বন্ধু আর প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসেছেন আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে। কেন না টাকার জন্যই আমার বন্ধুকে হাসপাতাল প্রথমে ছাড়েনি। ওদের টাকা ফিরিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত আমরা কেউই মনে শান্তি পাচ্ছিলাম না।’’ আর এক বন্ধু অমল মহাজনের কথায়, ‘‘বারে বারেই মনে হচ্ছিল যতক্ষণ না টাকাটা ওঁদের হাতে তুলে দিতে পারব, সঞ্জয়ের আত্মা শান্তি পাবে না।’’

Advertisement

প্রতিবেশীরা জানান, অ্যাপোলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে টাকাটা দেওয়ার জন্য প্রথমে ২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকার ডিমান্ড ড্রাফট তৈরি করা হয়। পরে আরও ১০ হাজার ৬৪৪ টাকা নগদে মেটানো হয়েছে। এক প্রবীণের গলায় ঝরে পড়ল আপেক্ষ, ‘‘জলজ্যান্ত ছেলেটাই চলে গেল। টাকা আসে, টাকা যায়। মানুষটাই কেবল থাকে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন