দুর্বল হয়েও ফোঁস ছাড়েনি গোমেন, ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা

ঘূর্ণিঝড়ের তকমা হারিয়েছে গোমেন। কিন্তু দক্ষিণবঙ্গে দুর্যোগের আশঙ্কা এখনও কাটেনি। আবহবিজ্ঞানীরা বলছেন, বাংলাদেশের উপর দিয়ে ঢিমেতালে বয়ে চলা গোমেন শুক্রবার শক্তি খুইয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। ও-পার বাংলায় নাগাড়ে বৃষ্টি হওয়ায় আরও নেমে যাচ্ছে তার বিষ।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৫ ০৩:৩৯
Share:

সিউড়ির তিলপাড়া ব্যারাজ থেকে ছাড়া হচ্ছে জল। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।

ঘূর্ণিঝড়ের তকমা হারিয়েছে গোমেন। কিন্তু দক্ষিণবঙ্গে দুর্যোগের আশঙ্কা এখনও কাটেনি। আবহবিজ্ঞানীরা বলছেন, বাংলাদেশের উপর দিয়ে ঢিমেতালে বয়ে চলা গোমেন শুক্রবার শক্তি খুইয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। ও-পার বাংলায় নাগাড়ে বৃষ্টি হওয়ায় আরও নেমে যাচ্ছে তার বিষ। ফলে আজ, শনিবার নিম্নচাপের চেহারা নিয়ে এ রাজ্যে ঢুকতে পারে গোমেন। কিন্তু সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর দৌলতে সেই নিম্নচাপ থেকেই ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।

Advertisement

হাওয়া অফিসের হিসেব অনুযায়ী জুন ও জুলাই মিলিয়ে দক্ষিণবঙ্গে স্বাভাবিকের থেকে ৪৮ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। তার ফলে নদী-খাল-বিল সবই জলে টইটম্বুর। তার উপরে গত সাত দিন ধরে নাগাড়ে বৃষ্টি চলছে। জলাধার থেকে ছাড়া জলে উপচে গিয়েছে একাধিক নদী। বৃষ্টি আর নদীর জলে দক্ষিণবঙ্গের বেশির ভাগ জেলাতেই বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ফের ধারাবর্ষণের সম্ভাবনায় তাই প্রমাদ গুনছেন আবহবিদেরা।

আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ এ দিন বলেন, ‘‘গোমেন দুর্বল হলেও ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। তার ফলে দক্ষিণবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।’’ এ দিন রাত পর্যন্ত পাওয়া খবরে গভীর নিম্নচাপের চেহারা নেওয়া গোমেন বাংলাদেশের যশোর জেলার কাছাকাছি রয়েছে। মৌসম ভবন গোমেনের যে-সম্ভাব্য গতিপথ জানিয়েছে, তাতে সে বাংলাদেশ পেরিয়ে নদিয়া জেলার উপর দিয়ে বর্ধমান পর্যন্ত পৌঁছতে পারে। তার জেরে দক্ষিণবঙ্গের বেশির ভাগ জেলাতেই ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর।

Advertisement

শুক্রবার ঝাড়খণ্ডের দেউচা জলাধার থেকে দ্বারকা নদীতে ও বৈধরা জলাধার থেকে ব্রাহ্মণী নদীতে জল ছাড়ায় মুর্শিদাবাদের খড়গ্রাম ব্লকের বহু এলাকায় জল ঢুকেছে। ফাটল দেখা গিয়েছে খড়গ্রামের সুজাপুরে দ্বারকা নদীর বাঁধে। সন্ধ্যা থেকে ময়ূরাক্ষী নদীর জলে নতুন করে প্লাবিত হতে শুরু করেছে ভরতপুর এক নম্বর ব্লকের গড্ডা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা। নদিয়ার স্বরূপগঞ্জে ভাগীরথী বইছে বিপদসীমার উপর দিয়ে। ভাগীরথী ও জলঙ্গির জলে প্লাবিত নবদ্বীপ, মায়াপুর–সহ বেশ কিছু এলাকা। তার উপরে দিনভর বৃষ্টিতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।

এ দিন সন্ধ্যায় পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ায় ক্ষীরাই নদীর বাঁধের প্রায় ২০ ফুট ভেঙে জল ঢুকতে শুরু করে বিভিন্ন গ্রামে। কংসাবতী জলাধার থেকে ছাড়া জলে কাঁসাই নদী বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। কোলাঘাটে একাধিক জায়গায় রূপনারায়ণের বাঁধের অবস্থা বিপজ্জনক। বর্ধমানের কাটোয়া, কালনার বহু গ্রাম জলে ডুবে রয়েছে। জল বার করতে কাটোয়া, দাঁইহাটের কয়েকটি রাস্তা কেটে দিয়েছেন বাসিন্দারা। জমা জলে এ দিন নতুন করে হাজারখানেক বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানাচ্ছে প্রশাসন। হুগলির পাণ্ডুয়া, বলাগড়, তারকেশ্বর ও জাঙ্গিপাড়ার বেশ কিছু অঞ্চল এখনও জলমগ্ন। বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

এ দিন সকালে বীরভূমে সিউড়ির তিলপাড়া জলাধার থেকে ৬২ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ‘রেড অ্যালার্ট’ বা চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করেছে প্রশাসন। বন্যার আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন লাভপুর, সাঁইথিয়া ও মহম্মদবাজারের বহু গ্রামের বাসিন্দারা। উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটা, স্বরূপনগর, দেগঙ্গার কয়েকটি জলমগ্ন এলাকার অনেক বাসিন্দাই ঘরছাড়া।

রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে এ দিন নবান্নে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে তিনি জানান, দু’লক্ষ হেক্টর জমি জলমগ্ন। মারা গিয়েছে বহু গবাদি পশু। পাঁচ লক্ষ পাউচ পানীয় জল দেওয়া হবে বন্যাকবলিত এলাকায়। ৭০০টি ত্রাণ শিবিরে ৩৩ হাজার দুর্গতকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। সাম্প্রতিক ঝড়বৃষ্টিতে বাজ পড়ে এবং সাপের কামড়ে রাজ্যের ১০টি জেলায় ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের পরিবারকে চার লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেবে রাজ্য। রামকৃষ্ণ মিশন ও ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ ত্রাণকাজে নামবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।

লাগাতার বৃষ্টি ও বন্যায় রাজ্য ও জাতীয় সড়কগুলি ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। জল কমলেই রাস্তা সারানোর উপরে জোর দেওয়া হবে বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানিয়ে কেন্দ্রের কাছেও রিপোর্ট পাঠাচ্ছেন রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা। নবান্ন সূত্রের খবর, এ দিনের বৈঠকে বিভিন্ন মন্ত্রীকে এক বা একাধিক জেলার বন্যা পরিস্থিতি এবং ত্রাণের বিষয়টি দেখভাল করার দায়িত্ব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। উত্তর ২৪ পরগনার দায়িত্ব পেয়েছেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। বীরভুম ও হুগলি জেলা দেখবেন ফিরহাদ হাকিম। বর্ধমান ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার দায়িত্বে অরূপ বিশ্বাস। হাওড়ায় অরূপ রায়। নদিয়ায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়। পূর্ব মেদিনীপুরে সুব্রত মুখোপাধ্যায়। পশ্চিম মেদিনীপুরের দায়িত্বে রয়েছেন সৌমেন মহাপাত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন