খয়রাতির জুতো পরা যাবে তো, চিন্তা নবান্নেই

ভোটের আগে স্কুলপড়ুয়াদের মধ্যে দ্রুত সাইকেল বিলি করতে গিয়ে চূড়ান্ত অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে রাজ্য সরকারকে। এ বার ভোটের দিন ঘোষণার আগেই প্রাথমিকের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে জুতো বিলির সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকার ফের লেজেগোবরে হতে পারে বলে মনে করছে প্রশাসনের একাংশ।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:৫৯
Share:

ভোটের আগে স্কুলপড়ুয়াদের মধ্যে দ্রুত সাইকেল বিলি করতে গিয়ে চূড়ান্ত অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে রাজ্য সরকারকে। এ বার ভোটের দিন ঘোষণার আগেই প্রাথমিকের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে জুতো বিলির সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকার ফের লেজেগোবরে হতে পারে বলে মনে করছে প্রশাসনের একাংশ। নবান্নের এক কর্তার কথায়, ‘‘সবই মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছা! তাই কার্যত অসম্ভব হলেও করতে হবে। পরিণতি যা-ই হোক।’’

Advertisement

কয়েক মাস আগে বিভিন্ন জেলায় পড়ুয়াদের সাইকেল বিলি শুরু করেছে সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা অনুযায়ী গোটা রাজ্যে মোট ৪০ লক্ষ সাইকেল বিলি করা হবে। কিন্তু তা করতে গিয়ে হাজারো অভিযোগ উঠছে। মূল অভিযোগ, অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিতরণ করা হয়েছে নিম্ন মানের সাইকেল। মান এতটাই খারাপ যে, সাইকেল হাতে আসার পরে তা নিয়ে সোজা মেরামতির দোকানে হাজির হতে হয়েছে বহু ছাত্রছাত্রীকে। অনেকে সাইকেল হাতে পেয়ে বিক্রিও করে দিয়েছে। প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘সাইকেল নিয়ে জেরবার হতে হয়েছে আমাদের।’’

খয়রাতির তালিকায় নতুন সংযোজন জুতো। গত মাসে বর্ধমানে মাটি উৎসবে যাওয়ার পথে প্রাথমিক স্তরের পড়ুয়াদের জুতো বিতরণের সিদ্ধান্ত জানান মমতা। তাঁর ইচ্ছে মেনে, চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত রাজ্যের ৫৪ লক্ষ খুদে পড়ুয়াকে ক্যানভাস শু দিতে ৫৪ কোটি টাকা মঞ্জুর করা হয়েছে। জুতো তৈরির বরাত দিতে ইতিমধ্যে ই-টেন্ডার ডেকেছে স্কুলশিক্ষা দফতর। সরকারের শর্ত হল, বরাত পেতে হলে সংশ্লিষ্ট সংস্থার বছরে কমপক্ষে এক লক্ষ জোড়া জুতো তৈরি ও সরবরাহের সামর্থ্য থাকতে হবে। সরকারি স্কুল ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত প্রাথমিক স্কুল, মাদ্রাসা ও শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের ছেলেমেয়েরা জুতো পাবে। এক জোড়া জুতোর জন্য সরকারের ধার্য দাম ১০০-১১০ টাকা।

Advertisement

কিন্তু এত বড় কর্মকাণ্ড ভোটের দিন ঘোষণার আগে কী করে শুরু করা যাবে, তা ভেবে পাচ্ছেন না সরকারি কর্তারা। কেন?

সরকারি কর্তাদের যুক্তি, সবে তো দরপত্র ডাকা হয়েছে। সেই প্রক্রিয়া
শেষ হবে ১৯ ফেব্রুয়ারি। তার পরে বরাত পাওয়া সংস্থাগুলি মাপ অনুযায়ী (এক থেকে পাঁচ নম্বর) জুতো
তৈরিতে হাত দেবে। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জুতো বিলি শুরু হবে।’’ আর সরকারি কর্তাদের একাংশের প্রশ্ন, শিক্ষামন্ত্রীর কথামতো হাতে ১০ দিন সময় থাকবে। তার মধ্যে জুতো তৈরি করে স্কুলে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব কী ভাবে?

এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছে শিক্ষা দফতরও। ওই দফতরের এক কর্তা জানান, বিলিবণ্টন শুরুর আগে পর্যায়ক্রমে জুতো এলেই চলবে। কিন্তু দ্রুত এই কাজ সারতে গিয়ে জুতোর হাল সাইকেলের মতো হবে না তো? তাঁর আশঙ্কা, দ্রুত তৈরি করতে গিয়ে কাপড়ের জুতো যদি ছেঁড়াফাটা হয়, আঠা খুলে যায়, তা হলে তো পড়ুয়ারা পরতেই পারবে না। সেই পরিস্থিতি খুব সুখকর হবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন