বর্ষণে রাজস্থানের পিছনে গাঙ্গেয় বঙ্গ

মৌসম ভবনের পরিসংখ্যান বলছে, ১ জুন থেকে ৪ অগস্ট পর্যন্ত গাঙ্গেয় বঙ্গে বর্ষার ঘাটতি ৪৮ শতাংশ। অথচ কচ্ছে ঘাটতি ২৬ শতাংশ। আর মরু এলাকা পশ্চিম রাজস্থানে বর্ষার ঘাটতি মাত্র তিন শতাংশ। শুষ্ক এলাকা বলে চিহ্নিত মহারাষ্ট্রের বিদর্ভে বর্ষা স্বাভাবিক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৯ ০১:৩৯
Share:

ছবি: পিটিআই।

গাঙ্গেয় বাংলার ভূপ্রাকৃতিক পরিচয় প্রসঙ্গে ‘শস্যশ্যামলা’র সঙ্গে ‘সজলা’ শব্দটি আসে অনিবার্য ভাবে। কিন্তু এ বছর বর্ষার কৃপণতা সেই বিশেষণের প্রয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে। গোটা দক্ষিণবঙ্গই ভুগছে বৃষ্টির অভাবে। এবং সেই অভাব মোটেই যেমন-তেমন নয়! দিল্লির মৌসম ভবনের তথ্য বলছে, বর্ষণের ঘাটতিতে গাঙ্গেয় বঙ্গ এখন সারা দেশের মধ্যে এক নম্বরে! মরু এলাকা পশ্চিম রাজস্থান বা কচ্ছকেও ঢের পিছনে ফেলে দিয়েছে সে।

Advertisement

মৌসম ভবনের পরিসংখ্যান বলছে, ১ জুন থেকে ৪ অগস্ট পর্যন্ত গাঙ্গেয় বঙ্গে বর্ষার ঘাটতি ৪৮ শতাংশ। অথচ কচ্ছে ঘাটতি ২৬ শতাংশ। আর মরু এলাকা পশ্চিম রাজস্থানে বর্ষার ঘাটতি মাত্র তিন শতাংশ। শুষ্ক এলাকা বলে চিহ্নিত মহারাষ্ট্রের বিদর্ভে বর্ষা স্বাভাবিক।

এমন বিপরীত পরিস্থিতি কেন? কেন্দ্রীয় আবহাওয়া বিভাগের বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা, বর্ষায় জোরালো বৃষ্টি পেতে গেলে বঙ্গোপসাগরে জোরালো নিম্নচাপ দরকার। সেই নিম্নচাপের হাত ধরে মৌসুমি অক্ষরেখা দক্ষিণবঙ্গের উপরে থিতু হয়। কিন্তু এ বছর বাংলা উপকূলে সে-ভাবে কোনও জোরালো নিম্নচাপ তৈরিই হচ্ছে না। যে-ক’টি নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে বা হচ্ছে, তারা ওড়িশার দিকে চলে যাচ্ছে। এটা কেন হচ্ছে, তার সদুত্তর মিলছে না। বর্ষার এমন তুঘলকি আচরণ নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ শুরু করে দিয়েছে মৌসম ভবন।

Advertisement

আলিপুর আবহাওয়া দফতরের খবর, রবিবার গাঙ্গেয় বঙ্গের উপরে মৌসুমি অক্ষরেখা থিতু ছিল। তার সঙ্গে একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হওয়ায় বৃষ্টি হয়েছে কমবেশি। কিন্তু টানা জোরালো বৃষ্টি হবে, এমন আশা কম। ফলে বর্ষণ-ঘাটতি মেটার সম্ভাবনা আপাতত সে-ভাবে চোখে পড়ছে না।

অনেকে বলছেন, বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে জলবায়ু বদলে যাচ্ছে। বঙ্গে বর্ষার চরিত্রবদল কি সেই কারণেই? জলবায়ু বদলের তত্ত্ব মেনে নিচ্ছেন কেন্দ্রীয় আবহবিজ্ঞান দফতরের অনেক পদস্থ বিজ্ঞানীও। কিন্তু বর্ষার এই খামখেয়ালিপনা তারই নিদর্শন কি না, সেটা এখনও নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না তাঁরা। আবহবিদদের বক্তব্য, আগের বছর বর্ষার চরিত্র এমন ছিল না। তাই শুধু এক বছরের নিরিখে এটা বলে দেওয়া যায় না যে, বর্ষার চরিত্র বদলে গিয়েছে।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সুগত হাজরার মতে, এই পরিস্থিতির জন্য আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরের তাপমাত্রার তারতম্য দায়ী হতে পারে। আরব সাগরের তাপমাত্রা যদি বেশি হয়, তা হলে পশ্চিম ভারতে নিম্নচাপ তৈরি হয়ে জোরালো বর্ষা হবে। মার খাবে পূর্ব উপকূলীয় রাজ্যগুলি।

অনেক আবহবিজ্ঞানী বলছেন, এ বছর জুন পর্যন্ত ‘এল নিনো’ (প্রশান্ত মহাসাগরে জলতলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি) পরিস্থিতি ছিল। তার প্রভাবে বঙ্গোপাসাগরে বর্ষা দুর্বল হয়েছে। এর আগে অবশ্য এল নিনো পরিস্থিতি থাকা সত্ত্বেও গাঙ্গেয় বঙ্গে স্বাভাবিক বর্ষার উদাহরণ রয়েছে। কিন্তু এ বার এল নিনো-র সঙ্গে আরব সাগরের তাপমাত্রা বেশি থাকায় এই পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। তবে জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে দুর্বল হয়ে গিয়েছে এল নিনো। তার ফলে বৃষ্টি কিছুটা বাড়লেও আরব সাগরের প্রভাব এখনও পুরোপুরি কাটেনি।

এই পরিস্থিতিতে স্লগ ওভারে কি ঘুরে দাঁড়াবে বঙ্গের বর্ষা? সেই উত্তর খুঁজছেন আবহবিদেরাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন