মেঘ, রোদ আর কুয়াশায় অস্থির হাওয়ামোরগ

কোনও দিন সকাল ৭টাতেই চড়া রোদ। কোনও দিন আবার ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে গেল চতুর্দিক। পরের দিন কোথাও কোথাও টিপটিপ বৃষ্টি। সঙ্গে হাল্কা হাওয়া। এ সপ্তাহের প্রথম পাঁচ দিন কলকাতায় এমনই তুঘলকি মেজাজ আবহাওয়ার।

Advertisement

দেবদূত ঘোষঠাকুর

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৮ ০৩:৪৪
Share:

যেন টি-টোয়েন্টি ম্যাচ! প্রতি ওভারেই বদলে যাচ্ছে ম্যাচের রং।

Advertisement

চৈত্রের সূচনায় টালমাটাল আবহাওয়াকে এ ভাবেই ব্যাখ্যা করলেন এক আবহবিদ।

কোনও দিন সকাল ৭টাতেই চড়া রোদ। কোনও দিন আবার ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে গেল চতুর্দিক। পরের দিন কোথাও কোথাও টিপটিপ বৃষ্টি। সঙ্গে হাল্কা হাওয়া। এ সপ্তাহের প্রথম পাঁচ দিন কলকাতায় এমনই তুঘলকি মেজাজ আবহাওয়ার। সকালে বৃষ্টি হোক বা কুয়াশা, রাস্তায় বেরোলেই ঘেমেনেয়ে একশা!

Advertisement

দুপুরে তাপমাত্রা কোনও দিন ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাচ্ছে। কোনও দিন আবার থেমে থাকছে ৩৪ ডিগ্রিতে। চৈত্রের গোড়ায় বায়ুপ্রবাহের চরিত্র বুঝতে হিমশিম খাচ্ছেন আবহবিদদের অনেকেই।

আবহবিদদের কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, মরসুম বদলের আগে আবহাওয়ার এই অস্থিরতাটাই স্বাভাবিক। এই সময়ে ঘনঘন ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়, তৈরি হয় উচ্চচাপ বলয়। তাতেই আবহাওয়ার চরিত্র বদলে যায়। আবহবিদদের অনেকেই অবশ্য বলছেন, গ্রীষ্ম আসতে এখনও চার সপ্তাহ বাকি। এই সন্ধিকালে এমন অস্থিরতা অস্বাভাবিকতারই ইঙ্গিত। বর্ষার আগের আবহাওয়া যেমন থাকে, কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের আবহাওয়া এখন অনেকটা তেমনই।

পারদের মর্জি

দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা সর্বাধিক আর্দ্রতা

(ডিগ্রি সেলসিয়াস) (শতাংশ)

• ১১ মার্চ ৩৬.৩ ৮১

• ১২ মার্চ ৩৫.৩ ৮৮

• ১৩ মার্চ ৩৫.৬ ৯৩

• ১৪ মার্চ ৩৭.৫ ৮৮

• ১৫ মার্চ ৩৪.৮ ৯৩

• ১৬ মার্চ ৩০.১ ৯৫

একই সময়ে উচ্চ তাপমাত্রা এবং চরম আর্দ্রতা যে অস্বাভাবিক ঘটনা, তা মেনে নিতে আপত্তি নেই আবহবিদদের অনেকেরই। কেন্দ্রীয় সরকারের আবহবিজ্ঞান দফতরের এক বিজ্ঞানীর ব্যাখ্যা, এ বার পশ্চিমি ঝঞ্ঝা কম হওয়ায় শীতকালে বৃষ্টিই হয়নি দক্ষিণবঙ্গে। বাতাস তাই অত্যন্ত শুকনো ছিল বসন্তের আগমন পর্যন্ত। তাই মার্চেই তাপমাত্রা হঠাৎ লাফ দিয়ে ৩৭ ডিগ্রিতে উঠে গিয়েছে। এর মধ্যে ‘অসহনীয়’ গ্রীষ্মের ইঙ্গিতও পাচ্ছেন অনেক আবহবিদ। বস্তুত, এ বছর অনেক বেশি গরমের পূর্বাভাস দিয়েছে মৌসম ভবনও।

এক আবহবিজ্ঞানীর ব্যাখ্যা, মার্চে পরপর কয়েকটি ঘূর্ণাবর্ত এবং উচ্চচাপ বলয়ের সৃষ্টি হয়েছে বঙ্গোপসাগর উপকূল এবং গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে। তার ফলে জলীয় বাষ্প ঢুকেছে পরিমণ্ডলে। শুকনো পরিস্থিতিতে সেই জলীয় বাষ্পের আকস্মিক আবির্ভাব স্থানীয় আবহাওয়ার উপরে প্রভাব ফেলেছে।

আবহাওয়ার অস্থিরতা আরও কয়েক দিন থাকবে বলে মনে করছেন হাওয়া অফিসের বিজ্ঞানীরা। এক আবহবিজ্ঞানী জানাচ্ছেন, গত দু’তিন দিন ধরে একটা দুর্বল উচ্চচাপ বলয় রয়েছে ওডিশা উপকূলে। তার প্রভাবে জলীয় বাষ্প ঢুকছে দক্ষিণবঙ্গের বাতাসে। তার সঙ্গে যোগ দিয়েছিল বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে থাকা একটি ঘূর্ণাবর্ত। বৃহস্পতিবার সকালের ঘন কুয়াশা এবং শুক্রবার সকালে কোথাও কোথাও টিপটিপ বৃষ্টির জন্য ওই উচ্চচাপ বলয় আর ঘূর্ণাবর্তের যুগলবন্দিই দায়ী।

হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস, ঘূর্ণাবর্তটি দুর্বল হয়ে সরে যাচ্ছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দিকে। আজ, শনিবার তাই বাতাসে আর্দ্রতা কমার সম্ভাবনা রয়েছে। কাল, রবিবার কী হবে? উপগ্রহ-চিত্রের দিকে দীর্ঘ ক্ষণ তাকিয়ে থেকে এক আবহবিদ জানালেন, বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে আর একটা ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হওয়ার মতো পরিস্থিতি রয়েছে। শনিবার সেটার কী অবস্থা হয়, রবি-সোমবারের আবহাওয়া অনেকাংশে নির্ভর করছে তার উপরেই। এক আবহবিদের আশ্বাস, এখন আবহাওয়া কিছুটা অস্থির। তাই সব কিছু অস্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে। আবহাওয়া একটু স্থিতিশীল হলেই অস্বাভাবিকতা কমতে থাকবে।

কিন্তু আবহাওয়ার অস্থিরতা কমবে কবে? আবহবিদেরা নিরুত্তর!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন