স্কুলপড়ুয়াদের মুখের খাবার নিয়েও কারচুপির বিস্তর অভিযোগ সারা রাজ্যেই। তাই স্কুলে দুপুরের খাবার নিয়ে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে রোজকার খাবারের হিসেব স্কুলশিক্ষা দফতরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে।
সব স্কুলের প্রতিদিনের মিড-ডে মিলের সবিস্তার তথ্য ফুটে উঠবে ওই দফতরের ওয়েবসাইটে। যে-কেউ, রাজ্যের যে-কোনও প্রান্ত থেকে নির্দিষ্ট যে-কোনও দিনের মিড-ডে মিলের হিসেব পেয়ে যাবেন এক লহমায়। মিড-ডে মিলকে ঘিরে আর্থিক নয়ছয় ঠেকাতেই এই ব্যবস্থা নিচ্ছে স্কুলশিক্ষা দফতর। বিকাশ ভবনের খবর, স্কুলে মিড-ডে মিলে অস্বচ্ছতা নিয়ে লাগাতার অভিযোগে সরকারের অস্বস্তি বাড়ছিল।
স্কুলে দুপুরের খাবার নিয়ে ঠিক কী ধরনের কারচুপি চলছে?
শিক্ষা শিবিরের অভিযোগ, পড়ুয়াদের সংখ্যায় গরমিল করছে বহু স্কুল। পড়ুয়ার উপস্থিত কম, অথচ সেই সংখ্যা বাড়িয়ে দেখানো হচ্ছে এবং তার ভিত্তিতে মিড-ডে মিল খাতে বরাদ্দ অর্থ খরচের হিসেব দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ক্লাস না-হলেও অনেক স্কুলের কর্তৃপক্ষ হাজার হাজার টাকা খরচের হিসেব দেখিয়ে দিচ্ছেন। উত্তর ২৪ পরগনার হাসনাবাদের পূর্ব খেজুরবেড়িয়ায় একটি স্কুলের বিরুদ্ধে সম্প্রতি এমন অভিযোগ তুলেছেন অভিভাবকদের একাংশ।
২০০৯ সালের শিক্ষার অধিকার আইন অনুসারে মিড-ডে মিলে সপ্তাহে কোন দিন কী খাবার দিতে হবে, সেই তালিকা দেওয়া আছে। তালিকায় রয়েছে ভাত, ডাল, আনাজ, মাছ, ডিম ও খিচুড়ি। কিন্তু অভিযোগ উঠছে, অনেক জায়গায় সেই তালিকা অনুযায়ী খাবার দেওয়া হয় না। মাছ-ডিম দূরের কথা, ডাল-আলুও জোটে না। কবে কী খাবার দেওয়া হচ্ছে, সাইটে সেই তথ্যও দিতে হবে স্কুলগুলিকে। মিড-ডে মিলের যাবতীয় তথ্য ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এক নজরে আনতে সম্প্রতি একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দিয়েছে রাজ্য। এ বিষয়ে স্কুল ও স্কুলশিক্ষা দফতরের মধ্যে সমন্বয়ের দায়িত্ব ডিআই বা জেলা স্কুল পরিদর্শকদের দেওয়া হতে পারে। এক শিক্ষাকর্তা বলেন, ‘‘বিষয়টি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। পুরো প্রক্রিয়া কী ভাবে চালানো হবে, তার সবিস্তার পদ্ধতি এখনও ঠিক হয়নি। সরকার সমস্ত তথ্য ওয়েবসাইটে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’’ সাইটে স্কুলের নাম, তারিখ এবং শ্রেণির উল্লেখ করলেই সবিস্তার তথ্য বেরিয়ে আসবে। ফলে কারচুপির কোনও আশঙ্কাই থাকবে না বলে তাঁর দাবি।
বিধানসভার গত অধিবেশনেই শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, মিড-ডে মিলে নজরদারির জন্য একটি দল গঠন করা হবে। সেই দলই সমস্ত জায়গায় তদারক করবে। সেই প্রক্রিয়াও চলছে বলে জানায় বিকাশ ভবন।
স্কুলে পৃথক খাওয়ার ঘর এবং টেবিল তৈরির জন্য ১৩ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। জঙ্গলমহল ও চা-বাগান এলাকায় স্কুল বন্ধ থাকলেও মিড-ডে মিল দেওয়ার নিয়ম চালু করেছে রাজ্য সরকার। এই খাতে বরাদ্দ টাকার ঠিকঠাক ব্যবহার হচ্ছে কি না, ওয়েবসাইটের মাধ্যমেই তার উপরে নজরদারি চালানো যাবে। অনেক শিক্ষক সংগঠনই এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। ‘‘বরাদ্দ বৃদ্ধিও জরুরি হয়ে পড়েছে,’’ বলেন বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল।