মিড ডে মিল। —নিজস্ব চিত্র।
মিড ডে মিলের পাতে সোনা মুগের ডাল, আলু পোস্ত, মুরগির মাংস, দই, মিষ্টি, রসগোল্লা, পাঁপড়। শেষ পাতে ল্যাংড়া আমও।
গ্রামের এক যুবকের বৌভাত। ঝাড়গ্রাম ব্লকের জঙ্গল ঘেরা প্রত্যন্ত কুমারী গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬১ জন পড়ুয়া তাই শনিবার দুপুরে খেল ভূরিভোজ। এক দিনেই শেষ নয়, এরপর গ্রামের কোনও উৎসব, অনুষ্ঠানে আবারও মিড ডে মিলের স্বাদ বদল হবে।
ঝাড়গ্রাম শহর থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে কুমারী গ্রামের গর্ব এই প্রাথমিক স্কুল। ১৯৬৬ সালে তৈরি স্কুলে ২০০৩ সালে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে আসেন স্বরূপচন্দ্র বিশুই। তারপর ভোল বদলেছে স্কুলের। দোতলা ভবন, ফুল-ফলের বাগান, পরিস্রুত পানীয় জল, ঝাঁ চকচকে শৌচাগার, অডিও ভিস্যুয়াল পদ্ধতিতে স্মার্ট ক্লাস— সবই হয়েছে। স্কুল ছুটির পরেও স্বরূপবাবু গ্রামের পড়ুয়াদের বিনা পারিশ্রমিকে পড়ান। এমন ‘আদর্শ’ স্কুলে পড়ে গ্রামের ছেলেমেয়েরা অনেকেই উচ্চশিক্ষিত হয়েছেন। কেউ শিক্ষকতা করছেন, কেউ চাকরি করছেন সরকারি বা বেসরকারি সংস্থায়।
স্কুলকে ভালবেসেই উৎসব-অনুষ্ঠানের আনন্দ ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন গ্রামবাসী। গ্রামের প্রায় একশোটি পরিবার সম্মিলিত ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কোনও বাড়িতে অনুষ্ঠান হলে প্রাথমিক স্কুলের মিড ডে মিলে ভাল-মন্দ খাওয়ানো হবে। তবে জোরাজুরির ব্যাপার নেই। যিনি চাইবেন, তিনিই এই আয়োজন করবেন। এ দিন যেমন গ্রামের যুবক নিখিলচন্দ্র মাহাতোর বৌভাত উপলক্ষে দুপুরে পড়ুয়াদের পাত পেড়ে খাওয়ানো হয়। স্কুলের দাবি ছিল একটাই, রান্না করা খাবার নয়, সব উপকরণ কিনে দিতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে রান্না হবে স্কুলে। সেই মতোই বন্দোবস্ত করেন নিখিল। স্কুলের প্রাক্তনী এই যুবকের কথায়, “এই প্রাথমিক স্কুল আমাদের কাছে মন্দির। তার জন্য কিছু করতে পারছি এটাই আনন্দের।”
স্কুলের বারান্দায় চেটেপুটে আনন্দ করেই খেয়েছে তিয়াসা মাহাতো, সুরজিৎ সিংহ, ধরমবীর কিস্কুরা। ওরা বলছিল, ‘‘আমাদের অনেকে রাতেও নেমন্তন্ন খেতে যাব। কিন্তু স্কুলে সবাই মিলে মাংস-ভাত খাওয়ার মজাই আলাদা।’’ কচিকাঁচাদের আনন্দ দেখে হাসছিলেন প্রধান শিক্ষক স্বরূপবাবু। বললেন, “পড়ুয়াদের সুষম খাবার দেওয়াটাই আমাদের উদ্দেশ্য। সেই কাজে গ্রামবাসীদের পাশে পেয়েছি, আর চিন্তা কীসের!” ঝাড়গ্রাম জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক শুভাশিস মিত্র মানছেন, “গ্রামবাসীর সঙ্গে স্কুলের এমন সম্পর্ক, সত্যি শিক্ষণীয়।”