আজ রাজ্য বাজেট, টাকার জোগানে চাপ

কেন্দ্রীয় বাজেটে মধ্যবিত্তদের ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত করযোগ্য আয়ে ছাড় ও কৃষকদের অ্যাকাউন্টে ৬০০০ টাকা সরাসরি দেওয়ার ঘোষণার পরে এই প্রত্যাশা বেড়েছে বলে মনে করছেন নবান্নের কর্তারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৫১
Share:

—ফাইল চিত্র।

আজ, সোমবার রাজ্য বাজেট। যা নিয়ে রাজ্যবাসীর প্রত্যাশা কম নয়।

Advertisement

কেন্দ্রীয় বাজেটে মধ্যবিত্তদের ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত করযোগ্য আয়ে ছাড় ও কৃষকদের অ্যাকাউন্টে ৬০০০ টাকা সরাসরি দেওয়ার ঘোষণার পরে এই প্রত্যাশা বেড়েছে বলে মনে করছেন নবান্নের কর্তারা। মূলত, বেতন কমিশনের সুবিধা কবে দেওয়া হবে, তা নিয়ে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র কিছু ঘোষণা করেন কি না, তা জানতেই সবচেয়ে বেশি আগ্রহ সরকারি মহলে। আশা, নতুন প্রকল্প ঘোষণা ঘিরেও। তবে জিএসটি চালু হওয়ার পরে পণ্যভিত্তিক কর ছাড় দেওয়ার প্রশ্নে রাজ্যের হাত-পা বাঁধা। শুধু মাত্র নতুন জমি-বাড়ি কেনাবেচায় স্ট্যাম্প ডিউটি-রেজিস্ট্রেশন খরচে কোনও ছাড় মেলে কি না, তা দেখতে চান অনেকেই।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই ‘কৃষক বন্ধু’ প্রকল্প ঘোষণা করেছেন। বাজেটে তার বিস্তারিত বলা হতে পারে। এ রাজ্যের প্রায় ৭০ লক্ষ চাষিকে বছরে ৫০০০ টাকা দেওয়ার জন্য সব মিলিয়ে ৭০০০ কোটি খরচ হতে পারে বলে অর্থ দফতর প্রাথমিক হিসেব কষেছে। এ ছাড়াও ফসল বিমার প্রিমিয়ামের পুরো টাকা রাজ্য সরকার নিজেই দেবে বলে জানিয়েছে। সেই বাবদও খরচ হাজার কোটি ছাড়াবে। কেন্দ্রের ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্প থেকে বেরিয়ে আসার পরে ১ কোটি ১১ লক্ষ পরিবারের স্বাস্থ্য বিমার প্রিমিয়াম বাবদ ১২০০ কোটি টাকা খরচ হতে পারে রাজ্যের। স্বাস্থ্য ভবনকে সেই ভারও বইতে হবে। অমিত মিত্রের বাজেটে তার বিস্তারিত থাকতে পারে বলে কর্তারা জানাচ্ছেন। ক্লাবের পাশাপাশি এ বার কোচিং ক্যাম্পের জন্যও ২ লক্ষ টাকা করে দেওয়ার ক‌থা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মোদীর ‘খেলো ইন্ডিয়া খেলো’ প্রকল্পের পাল্টা এই প্রকল্প। সব মিলিয়ে নতুন করে ১০-১২ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচের প্রকল্প ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে বলে অর্থ দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন।

Advertisement

আরও পড়ুন: বাম সওয়ারিদের আনলেন তৃণমূল বাসকর্মীরা

কিন্তু সেই টাকা কোথা থেকে আসবে, তা নিয়েও চর্চা কম নয়। বাজেট দফতর সূত্রের খবর, জিএসটি বাবদ আয় ৯-১০%-এর বেশি বাড়ছে না। আপাতত পাঁচ বছরে কেন্দ্রীয় সরকার ১৪% হারে কর বৃদ্ধি ধরে ক্ষতিপূরণ দিয়ে যাচ্ছে। ফলে এই খাতে নিজেদের ২৫ হাজার কোটির রোজগারের সঙ্গে ক্ষতিপূরণের টাকাও যুক্ত হবে। গত বছর পেট্রল-ডিজেলের দাম বাড়ার ফলে সেখান থেকে পাওয়া বিক্রয় কর বাবদ ভালই রোজগার হয়েছে রাজ্যের। এখন পেট্রোপণ্যের দাম কমছে, যা রাজ্যের কাছে আর্থিক রোজগারের প্রশ্নে মোটেই ‘সুখবর’ নয়। গত বছর কেন্দ্রীয় অনুদানের পুরো টাকা মেলেনি। এ বারও তা মিলবে না বলেই মনে করছেন সরকারি কর্তারা।

আরও পড়ুন: পশু-অত্যাচার বন্ধে কড়া আইনের প্রস্তাব

ফলে উন্নয়ন খাতের ১ লক্ষ ২০ হাজার কোটি টাকা জোগাড় করতে আবগারি রাজস্ব ও লটারির উপরেই ভরসা রাখবে অর্থ দফতর। আবগারি রাজস্ব বাবদ অন্তত ১০ হাজার কোটি তুলতে চায় অর্থ দফতর। তাই, প্রায় ২০০০ মদের দোকান খোলার প্রক্রিয়া চলছে। সাপ্তাহিক লটারি থেকে দৈনিক লটারি চালু হয়েছে। এ বার ভিন্‌ রাজ্যের লটারি ব্যবসা ধরে এই খাতেও ১০০০ কোটি আয় করতে চায় রাজ্য। সঙ্গে গাড়ির কর এবং ইলেকট্রিসিটি ডিউটি থেকে রোজগার আছে।

অর্থ দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘যা খরচ হয়, তা নিজেদের রোজগারে পোষায় না। ফলে এ বারও ধার নেওয়ার ধারা অব্যাহত থাকবে।’’ ২০১৮-১৯ সালে ধার ও সুদ বাবদ প্রায় ৫০ হাজার কোটি শুধতে হয়েছে। প্রতি মাসে নিদেন পক্ষে ২৫০০ কোটি ধার নিতে হয়েছে। আগামী বছরেও সেই কৌশল বজায় থাকবে। তা হলে বেতন কমিশন? অর্থ দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘কৃষক বন্ধুতেই তো ৭০০০ কোটি বেরিয়ে যাবে। বেতন কমিশনের আরও ৭০০০ কোটি আসবে কোথা থেকে?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন