কারাটকে বসিয়ে কলকাতাকে হারাল বাংলার সিপিএম

কেন্দ্রীয় কমিটির পরে সিপিএমের কলকাতা জেলা সম্মেলনে রাতভর ভোটাভুটি করে জোটপন্থীদের হারিয়ে জেলা সম্পাদক বেছেছিল জোট-বিরোধী শিবির।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৮ ০৩:৩০
Share:

—ফাইল চিত্র।

পক্ষে ৪৯৬। বিপক্ষে ৭!

Advertisement

কলকাতায় কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির লাইনকে ভোটাভুটিতে হারিয়ে দিয়েছিল প্রকাশ কারাট শিবির। এ বার সেই কারাটকেই বসে দেখতে হল, সিপিএমের বাংলা রাজ্য সম্মেলন বিপুল ব্যবধানে পরাস্ত করল প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদকের তত্ত্বকে!

কেন্দ্রীয় কমিটির পরে সিপিএমের কলকাতা জেলা সম্মেলনে রাতভর ভোটাভুটি করে জোটপন্থীদের হারিয়ে জেলা সম্পাদক বেছেছিল জোট-বিরোধী শিবির। পার্টি কংগ্রেসের আগে এ বার জোটের পক্ষে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা সূর্যকান্ত মিশ্র, বিমান বসুরা তুলে ধরলেন প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনের রাজ্য সম্মেলন কক্ষে! যা কি না কলকাতার সিপিএমেরই সদর দফতর!

Advertisement

রাজ্য সম্মেলনের শেষ দিনের এই ভোটে অবশ্য সরাসরি ইয়েচুরি বা কারাট, কারওরই ভূমিকা ছিল না। তবে শুক্রবারের নাটকীয় ঘটনাপ্রবাহে ইয়েচুরি শিবিরের যতটা স্বস্তি, ততটাই অস্বস্তিতে কারাটপন্থীরা! কলকাতা সিপিএমের কীর্তিতে উৎসাহিত হয়েছিলেন দলের কারাটপন্থী অংশ। রাজ্য সম্মেলনে সেই কলকাতার নেতাদের দাবির উপরেই ভোট করতে দিয়ে সূর্যবাবুরা দেখিয়ে দিয়েছেন, বাংলা সিপিএমের সংখ্যাগরিষ্ঠ মত কোন দিকে।

রাজনৈতিক খসড়া প্রতিবেদনের উপরে ৩৭টি সংশোধনী জমা পড়েছিল সম্মেলনে। প্রতিবেদনের ৩.১১ অনুচ্ছেদে গত বিধানসভা ভোটের পর্যালোচনার কথা বলা ছিল। কলকাতার দুই নেতা দেবাঞ্জন চক্রবর্তী ও সুদীপ সেনগুপ্ত সংশোধনী দেন, ওই নির্বাচনের গোটা লাইনটাই ভুল বলতে হবে। সংশোধনী গৃহীত না হওয়ায় প্রবীণ নেতা বিমান বসুর সঙ্গে এক প্রস্ত বিতণ্ডা বাধে সিটু নেতা দেবাঞ্জনের। এমনকী, বিমানবাবুকে গলা নামিয়ে কথা বলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, এমন কথাও শুনতে পান প্রতিনিধিরা! উত্তেজনায় মঞ্চেই দাঁড়িয়ে পড়েন গৌতম দেব। বিমানবাবু দেবাঞ্জনকে তাঁর সংশোধনী পাঠ করার অনুমতি দিতেই উত্তর ২৪ পরগনার নেপালদেব ভট্টাচার্য উঠে প্রশ্ন তোলেন, তাঁর দেড়শো সংশোধনী আছে! তিনি কি সব পড়বেন? বিতর্ক গড়াচ্ছে দেখে বিমানবাবুর হাত থেকে রাশ ধরেন সূর্যবাবু।

দেবাঞ্জনকে রাজ্য সম্পাদক পরামর্শ দেন, তিনি ‘ফ্লোরে আসুন’। অর্থাৎ প্রতিনিধিদের মত যাচাই। রাজ্য নেতৃত্ব এ ভাবে ভোটের দিকে চলে যাবেন, ভাবেননি কট্টরপন্থী নেতারা। মোট ৫০৪ জন প্রতিনিধির মধ্যে গুনে দেখা যায়, বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার লাইন ভুল ছিল— এই মতের পক্ষে উঠেছে সাকুল্যে ৭টি হাত! রাজ্য নেতৃত্বের মতের পক্ষে ৪৯৬ আর এক জন বিরত। রাজ্য সম্মেলন থেকে বেছে নেওয়া পার্টি কংগ্রেসের ১৭৫ জন প্রতিনিধির মধ্যেও জোটপন্থী আর জোট-বিরোধীর অনুপাত প্রায় ৭০:৩০। অর্থাৎ হায়দরাবাদে কেরল শিবিরের মোকাবিলার জন্য গুছিয়েই তৈরি বঙ্গ ব্রিগেড!

সিপিএমের রেওয়াজ মেনে প্রকাশ্যে সূর্যবাবু বলেছেন, ‘‘রাজনৈতিক প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে সর্বসম্মতিতেই।’’ পর্দার আড়ালের কল্লোল অবশ্য জানা থাকল কারাটদের!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন